আমাদের ইসলাম ধর্মে বলা হয়ে থাকে "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত।"
বাপ যাই করুক না কেন, দিনরাত খেটে মরুক, শুধুমাত্র নয়মাস পেটে ধরা ও জন্মদানের জন্য মায়ের সম্মান সন্তানের কাছে বাবার তুলনায় তিনগুন বেশি। পৃথিবীতে যদি কোথাও জান্নাত থাকে, তবে সেটা মায়ের পায়ের নিচেই। মাকে মনোক্ষুন্ন রেখে কাবা ঘরের গিলাফ ধরে ঝুলে তাঁর দেয়ালে মাথা ঠুকিয়ে রক্তাক্ত হলেও আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া সম্ভব না। আর বাবা-মাকে তুষ্ট করতে পারলে আল্লাহকে খুশি করা কোন ব্যাপারই না।
সন্তানের জন্য ওঠা সবচেয়ে বড় দোয়ার হাত মা-বাবার হয়ে থাকে। মাথার উপরে সবচেয়ে বড় ছাদের নাম মা-বাবা। বেহেস্তে যাওয়ার সবচেয়ে প্রশস্ত, সহজ আর সরল পথের নামও মা-বাবা। তাঁদের মৃত্যুর মাধ্যমে এই দরজা বন্ধ হয়ে যায়।
ইসলাম ধর্মে সবচেয়ে বড় গুনাহ হচ্ছে শিরক। আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করবেন, কিন্তু এই একটি গুনাহর কোন মাফ নেই। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন যদি বাবা মা সন্তানকে শির্কেরও হুকুমও দেন, তারপরেও তাঁদের সাথে নম্র আচরণ করতে, বেয়াদবি না করতে, এমনকি তাঁদের প্রতি যেন বিরক্তিসূচক সামান্য "উহ" শব্দটিও বের না হয়। পাক কুরআনে এটি আল্লাহর নির্দেশ। নামাজ-রোজা-হজ্ব-যাকাত ইত্যাদি যেমন ফরজ, এই হুকুমও তেমনই ফরজ।
একবার নবীর (সঃ) কাছে এক যুবক এসে উপস্থিত হয়ে বলে "হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি আপনার সাথে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে যুক্ত হতে চাই। আমার বাবা মা আমার জন্য খুব কান্নাকাটি করছিলেন, আমাকে আসতে দিতে চাইছিলেন না, আমি তাঁদের নিষেধ অমান্য করে চলে এসেছি।"
যুদ্ধের জন্য নবীজির (সঃ) লোক লাগতোই, কিন্তু কোন মায়ের বুক খালি করে নয়। তিনি সাথে সাথে বললেন, "এই মুহূর্তে তুমি ফেরত যাও, এবং সেভাবেই তোমার বাবা মায়ের মুখে হাসি ফোটাও যেভাবে তুমি তাঁদের কাঁদিয়েছো।"
আমাদের নবীজিকে (সঃ) সাহাবীরা খুব কম প্রকাশ্যে হুহু করে কাঁদতে দেখেছেন। খুবই বিরলতম ঘটনার একটি ছিল যখন তিনি তাঁর মায়ের কবর জিয়ারতে গিয়েছিলেন। অশ্রুজলে তাঁর গাল ভর্তি ঘন দাড়ি ভিজে চুপচুপা হয়ে গিয়েছিল। মাত্র পাঁচ বছরে মাতৃহারা হওয়া এতিম নবী সেদিন মায়ের অভাব তীব্রভাবে অনুভব করেছিলেন।
আর এমনিতেও আমাদের সাধারণ জীবনে যখনই আপনি বাড়িতে ফেরত আসবেন, দেখবেন আপনার মাই কেবল আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন "ক্ষুধা পেয়েছে? খেয়েছিস? দাঁড়া, খাবার গরম করে দেই।"
আমরা আমাদের বাচ্চাদের শাসন করলে সে আমরা নিজেরাও কিছু খেতে পারিনা। বাচ্চাদের মন খারাপ থাকলে, ওরা অভুক্ত থাকলে আমাদের গলা দিয়ে কিছু নামে না। নিজে বাবা মা না হলে বাবা মায়ের ভালবাসা বুঝা অসম্ভব একটি ব্যাপার। তখনই কেবল বুঝা যায় কতটা ভালবাসা বুকে থাকলে এত যন্ত্রনা সহ্য করেও সন্তানকে বড় করে তোলা যায়।
এত কথা বললাম কারন আজকে দেখলাম আমাদের দেশে এক ছেলে নিজের মাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ফ্রিজে ঢুকিয়ে নিজের ঘরের আসবাবপত্র এলোমেলো করে ডাকাতির ঘটনা হিসেবে চালানোর চেষ্টা করে পুলিশের হাতে ধরা খেয়েছে।
যে মায়ের নাড়ি ছিঁড়ে এই কুলাঙ্গারের জন্ম, সেই মাকে শ্বাসরোধ করে সে হত্যা করেছে। এতটুকু বুক কাঁপেনি।
বিদেশে এমন ঘটনা বহুবার শুনেছি, পড়েছি। দেশে এমন ঘটনা ঘটে? কিভাবে সম্ভব? মায়ের নাড়ি ছেঁড়ার সাথে সাথেইতো তাঁর সাথে আমাদের বন্ধনছিন্ন হয়না। আমাদের বুকে জড়িয়ে ঘুমায়, আমাদের মুখে তুলে খাইয়ে দেয়, হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যায়। মায়ের সাথে আমাদের বন্ধন কখনই বিচ্ছিন্ন হবার নয়।
দেশে আগে বৃদ্ধ মাকে সন্তানেরা বাস বা রেলওয়ে স্টেশনে বা বাজারে একলা ফেলে পালিয়ে যেত। পোষা বিড়াল বা কুকুরকে লোকে যেভাবে ঘরছাড়া করে। করোনা কালে দেখেছি অসুস্থ মাকে সন্তানেরা রাস্তায় ফেলে পালিয়ে গিয়েছিল। প্রতিটা বৃদ্ধাশ্রমে এমন হাজার হাজার বৃদ্ধ/বৃদ্ধা আছেন যাদের আপন সন্তানেরা খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন বোধ করেনা। এমনকি জানাজাতে আসারও সময় হয়না অনেকের।
আর এখন খুন করতেও শুরু করেছে?
"নব্বই ভাগ মুসলিমের" দেশে?
এদিকে আল্লাহ বলেছেন "....তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।"