somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুষ না খেয়ে ভিক্ষা করেই টাকা কামাক। হালাল উপার্জন।

২২ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমেই ডিসক্লেইমার, না আমি, না আমার পোলাপান কোন সরকারি চাকরি প্রত্যাশী। বাংলাদেশে শুধুমাত্র মিলিটারির চাকরির দিকে আমার লোলুপ দৃষ্টি ছিল, সেখানে যখন ফিজিক্যালি আনফিট হয়েছিলাম, বুঝে নিলাম ওটা আল্লাহর প্ল্যান ছিল। তাই সেসব থেকে হাত ধুয়ে ফেলেছি। কাজেই কোটা নিয়ে আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে বিন্দুমাত্র স্বার্থ জড়িত নেই। যা বলি, নিজে যা বুঝি তাই বলি। দ্বিমত করতেই পারেন, কিন্তু আগে নিজেকেই প্রশ্ন করবেন, নিজের স্বার্থের উর্দ্ধে উঠে বলছেন তো?

১. একটি দেশে কোটার প্ৰয়োজন কেন ও কখন হয়?
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটেই ধরা যাক।
দেশ যখন স্বাধীন হলো, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অবশ্যই কোটার প্রয়োজন ছিল। উনারা জীবন বাজি রেখে, সর্বস্ব খুইয়ে, সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন। দেশের প্রতি তাঁদের অধিকার সবচেয়ে বেশি।
চাকরি পাওয়ার পরেও হয়তো দেখা গেছে তাঁদের ছেলেমেয়েরা নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে আছেন। আমি ছোটবেলা থেকেই এমন বহু সরকারি কর্মচারীদের দেখে বড় হয়েছি যারা টিনের চালার বেশি কোন সম্পদ গড়তে পারেননি। তাও ভাড়া বাসায় থেকেছেন। অথচ উনাদেরই চোর বাটপার সহকর্মীরা দেশ লুটে ফেলেছে। তাই সেসব সৎ অফিসারদের বাচ্চারা সামাজিকভাবে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকবেই। তাই তাঁদের জন্যও এই কোটার প্ৰয়োজন ছিল।
তাছাড়া উনাদের বাবা মা আমাদের জন্য স্বাধীন দেশ এনে দিয়েছেন, সেজন্য উনাদের প্রতি আমাদের সর্বোচ্চ কৃতজ্ঞতা থাকেই। ওরা অবশ্যই সরকারি চাকরি পাবেন, নিজেদের অবস্থান উন্নত করার অগ্রাধিকার পাবেন।
এখন নাতি পর্যন্ত যখন ইস্যু টানা হচ্ছে, তখন লোকে আপত্তি করছেন। কারন, বাপ, দাদা দুইজনই অগ্রাধিকার পাবার পরেও যদি তোমরা পিছিয়ে থাকো, তাহলে ব্যর্থতা সমাজের বা সরকারের না, ব্যর্থতা তোমাদের। তোমাদের দিয়ে যখন তিন জেনারেশনে কোন উন্নতি হয়নি, ভবিষ্যতেও হবেনা।
তাছাড়া, দেশে পঞ্চাশ হাজারের বেশি ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার খবর পাওয়া গেছে। এইটা বিশাল সংখ্যা এবং এখানেই সবার আপত্তি। ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে লোকে কোটা পদ্ধতির ভুল ফায়দা তুলবে, তাহলেতো সেটা প্রচন্ড অন্যায় হবে। এখন ধরা যাক আমার দাদা/নানা মুক্তিযোদ্ধা নন। কিন্তু আমার বাবা নিজের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে উনার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে ফেলেছেন। এবং আমিও সেই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে সরকারি চাকরি বাগিয়ে নিলাম। এখানে বিষয় এইটা না যে আমি মেধাবী নাকি অমেধাবী। বিষয়টা এই যে আমি মিথ্যা/ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহার করে চাকরি বাগিয়েছি। অনেক "বুদ্ধিজীবী" যে প্যান প্যান করছেন যে "যারা ঐ পর্যায় পর্যন্ত যায়, তাঁরাতো মেধাবীই, তাহলে চাকরি পেতে সমস্যা কোথায়?" এইসব কূপমণ্ডুক বুদ্ধিজীবীরা নিজের দলীয় স্বার্থের বাইরে বিন্দুমাত্র চিন্তা করার ক্ষমতা রাখে না। নিজেদের এথিক্স নাই বলেই এথিক্সকে গণাতেই ধরে না।

এদিকে সরকার ও দলীয় লোকজন প্রচার করছে, কোটা সংস্কারীরা মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করছে। সহীহ/ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিরা যেন কোটা পদ্ধতির ভুল ফায়দা না তুলতে পারে, তা নিয়ে এই আন্দোলন। এখানে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হলো কোথায়? আমরা দেখি বর্ণপ্রথা থেকে বেরোতেই পারছি না। ব্রাক্ষনের পোলা যা খুশি করুক, ওর সমস্যা নাই। শূদ্রের পোলাকে স্পর্শ করাও পাপ! কোন পর্যায়ের জাহিলী মূর্খ হলে এই যুগেও সমাজে এমন বর্ণপ্রথা ধরে রাখে! এদের এত ক্ষুদ্র মানসিকতা কেন? নাকি ইন্টেনশনাল? "ও, তুমি মাজার পূজা করো না? অমুক তমুককে আল্লাহর অলি মানো না? তাহলে নিশ্চই তুমি কাফের!" এই ধরনের উগ্র ধর্মান্ধের সাথে এই ফ্যানাটিক রাজনৈতিকের পার্থক্য কোথায়?

এখানে একটা ষড়যন্ত্র থিওরিও সামনে আসছে। সেটি হচ্ছে, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেখিয়ে সরকার মূলত নিজের লোকেদের প্রশাসনে বসাতে চায়, যাতে ক্ষমতা হাতের মুঠ না ফস্কায়। সার্টিফিকেটদাতা যেহেতু ওরাই, এর ফায়দাও ওরাই তুলে। গুজব হিসেবে উড়িয়েও দেয়া যায়না। যে ডেস্পারেশন ওরা দেখিয়েছে, সত্য হতেই পারে।

২. এখন কথা হচ্ছে, কোর্টতো রায় দিয়েই দিয়েছে, কোটা বাতিল। এখন কি?
সমস্যা হচ্ছে, এই রায়ের মাধ্যমে চমৎকার একটি ডিভাইড এন্ড রুল গেম খেলা হয়ে গেল।
প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠী ইত্যাদি কোটা বাতিল হওয়ায় এখন ওরা বলবে, "কোটা সংস্কারকারীরা আমাদের বারোটা বাজিয়েছে। ওদের ধর!"
সরকার ওদের কাছে গিয়ে বলবে, "আমরাতো তোমাদের পক্ষেই ছিলাম, দেখো - ওরাই তোমাদের হক বাতিল করেছে।"
সরকার হিরো হয়ে যাবে, এরা হবে ভিলেন। দেশে কেওসটা লাগবে, এবং সরকার শাসন ধরে রাখবে। ব্রিটিশরা ঠিক এই পদ্ধতিতে দুইশ বছর শাসন করেছে। আওয়ামীগতো মাত্র ১৫-২০ বছর হলো।

৩. এই ছবিটা ব্যবহার করা হচ্ছে কোটার প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে। এখানে পিচ্চিটা, বা বেটে কিশোরটা দুইজনই দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধীদের রিপ্রেজেন্ট করতে পারে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিদের কখনই নয়। দুই জেনারেশন ধরে কোটা পদ্ধতির ফায়দা তুলে ওরা এখন ধামরা ছাওয়াল, এখন ওদের কোটা কোটা করে কান্নাকাটি করা অনেকটা প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত আসনে কোন সুস্থ সবল ব্যক্তির বসার আবদারের মতন অতি ফালতু আর নির্লজ্জ আবদার। মেরুদন্ড শক্তওয়ালা কেউ যার কোন স্বার্থ নেই, সে এমন আবদার করেনা। সে বলবে, আমার দুই হাত আছে, মাথায় মস্তিষ্ক আছে। আমি সাধারণ মানুষের সাথেই প্রতিযোগিতা করবো, নিজের যোগ্যতা প্রমান দিয়েই নিজের অবস্থান গড়ে নিব। যদি সরকারি চাকরি নাও পাই, নিজের পরিশ্রমে দুইবেলা খাওয়ার সক্ষমতা আমার আছে।
যার এই মেন্টালিটিই নাই, সেতো ভিক্ষুক! ফকির! বিদেশে গিয়ে "very poor country, please help" - ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। এগুলিকে আমলা বানানোর মানে কি? হাইকোর্টের সামনে থালা হাতে বসে যাক। ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে সরকারি পদে গিয়ে ঐ দুর্নীতি করারইতো মানসিকতা। বরং ভিক্ষা করেই টাকা কামাক। হালাল উপার্জন।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:৫৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×