somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একবার মানুষের চোখে যদি বিশ্বাস হারান, ভবিষ্যতে মাথা কুটে মরলেও সেই বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন না।

১৯ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে সবধরনের মানুষ আছে। তাই বিনোদনের অভাব হয়না।
কিছুদিন আগে প্রশ্নপত্র বিক্রি করা ড্রাইভার চাচা যেমন ধরা খেলেন, উনার ফেসবুক পেজ ভর্তি নামাজের ছবি। গাড়িতে নামাজ, মাঠে নামাজ, নদীতে নামাজ, পারলে মন্দির গির্জাতেও নামাজ আদায় করেন আমাদের চাচামিয়া। তখনই বুঝা যাচ্ছিল এই ব্যাটার ঘাপলা আছে। প্রকৃত ধার্মিক কখনই, কোনদিনও এমনটা করবে না। আমাদেরকে মাঠে ঘাটে নদীতে প্লেনে সব জায়গাতেই নামাজ আদায় করতে হয়, কিন্তু ওটা এমন কোন বিগডিল না যে প্রচার করতে হবে। ওটা স্রেফ দায়িত্ব পালন, ভাত খাবার মতই সাধারণ ঘটনা।
তেমনই ফেসবুকে দেখবেন মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বলে যেগুলি মুখে ফ্যানা তুলে ফেলে, একে ওকে রাজাকার ট্যাগ দিয়ে বেড়ায়, এদেরও একই অবস্থা।
যেমন ঢাকা যখন উত্তপ্ত আগ্নেয়গিরি, তখনও অনেককেই দেখবেন "বিটিভির বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলনের" নিউজের মতন পোস্ট করতে যে ঢাকার পরিস্থিতি এখন শান্ত। কোথাও কোন ঝামেলা নাই। অমুকের ফেসবুক পোস্ট, তমুকের ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করে মোটামুটি প্রমানের চেষ্টা করবে যে আমরা যা দেখছি, যা শুনছি পুরোটাই গুজব।
মজার কথা হচ্ছে এরাই প্রতিটা কথায় মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ বলে।

তাহলে এদের মুখোশ উন্মোচনে মুক্তিযুদ্ধের রেফারেন্সই দেই।
২৫সে মার্চ ঢাকা শহরে যখন ক্র্যাকডাউন ঘটে, তখন চারদিক থেকে কেবল গুলির আওয়াজ আসছিল। অন্ধকার রাত। জনতা রাস্তায় বেরিকেড দিয়েছিল যাতে রাস্তায় মিলিটারি নামলেও ওসবে খানিকটা হলেও বাধাপ্রাপ্ত হয়, মানুষ পালানোর সুযোগ পায়।
তা কিসের কি? ট্যাংকের এক ধাক্কাতেই ওসব বেরিকেড কোথায় গায়েব হয়ে গেল!
শুরু হলো গোলাগুলি। মানুষের আর্তনাদ। সাথে আলোক বোমা। কিছুক্ষনের জন্য আকাশ দিনের আলোর মতন উজ্জ্বল পরিষ্কার হয়ে যায়। কেরোসিনের টিন হাতে মিলিটারি ঢুকে গিয়েছিল পুরান ঢাকার শাখারিপট্টিতে। গুলি করে মানুষ মারা হলো, আগুনে পোড়ানো হলো বাড়িঘর সম্পদ সম্পত্তি।
রাত যত বাড়ে, গোলাগুলির আওয়াজও ততই বাড়ে। এক ঝটকায় শেষ করে দেয়া হলো দেশের বহু সূর্যসন্তানদের।
জেনারেল টিক্কাখানের প্ল্যান ছিল বাঙালির মেরুদন্ড ভেঙে দেয়া। বাংলাদেশ অঞ্চলটা দেহ হলে ঢাকা শহর এর মাথা, মাথা গুড়িয়ে দিতে পারলে দেশ আপনাতেই কাবু হয়ে যাবে।
রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ হত্যা দিয়ে অপারেশন শুরু হয়েছিল, পিলখানার ইপিআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল হয়ে ঢাকা শহরের চিহ্নিত বহু স্থান সেদিন নরককুন্ডে পরিণত হয়েছিল। রোকেয়া হলে আতঙ্কিত মেয়েরা দুরুদুরু বুকে শুনছিল মিলিটারির বুটের আওয়াজ, সারিবদ্ধভাবে, সুশৃঙ্খলভাবে ওদের জন্যই এগিয়ে আসছিল।
এত হত্যাযজ্ঞের পরেও সকালে রেডিওতে শোনা যাচ্ছিল অবাঙালি কেউ বলছে "গোজবে কান ডিবেন না।"
পাকিস্তান সরকার নিজ এলাকায় প্রচার চালায় "ভারতপন্থী দুষ্কৃতিকারীদের দমন করা হয়েছে, পাকিস্তান রক্ষা পেয়েছে।"
যুগটা ১৯৭১, সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। নিউজ মিডিয়াই ছিল একমাত্র মাধ্যম। সরকারের হুকুম ছাড়া যাদের একটা মাছি মারারও ক্ষমতা ছিল না। যারা সরকারের কথায় লেজ নাড়তো না, যেমন দৈনিক ইত্তেফাক, ওদের অফিস আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল। সেই অফিসেই পুড়ে শহীদ হয়েছিলেন ওদের আদর্শবান সাংবাদিক। পরের কয়েকদিনের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে এ বিষয়ে কোন সংবাদ নেই। মিডিয়ার গলা টিপে সত্যকে চেপে রাখার চেষ্টা।
এখন সোশ্যাল মিডিয়া আছে। উপরে বর্ণিত কিউট পাবলিক যতই প্রচার করুক যে "ঢাবি শান্ত আছে, শূন্যে বইছে বসন্তের বুনোঘ্রান, এলালতার কুঞ্জে নেশাকর গন্ধ জমে উঠেছে, চারিদিকে ফুটছে নাগকেশরের ফুল।" - পাবলিক ঠিকই পোস্ট করছে মিরপুর দশে আগুনের দৃশ্য, গুলিবিদ্ধ ছাত্রের আর্তনাদ, মাথা ফেটে গলগলিয়ে রক্ত ঝরা এক কিশোরের সরল প্রশ্ন "আমি কি মারা যাবো?"

এখন যারা কিউট ফুটফুটে বাবু হয়ে দাবি করছে দেশের পরিস্থিতি শান্ত, "গুজবে কান ডিবেন না," ওরা যদি ভবিষ্যতে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে আসে, কাঁনশা বরাবর চটকানা দিয়ে বলবেন অফ যেতে। ট্রাস্ট মি, এই ইতরগুলি তখন জন্মালে শান্তিবাহিনীতে সবার আগে নাম লেখাতো। এরাই বকধার্মিকের মতন মুক্তিযুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ করে। চেতনাকে এরা নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে।
জীবনে একটা বিষয় মনে রাখবেন। কখনই, কোনদিনও, কোন পরিস্থিতিতেই অন্যায়ের পক্ষে দালালি করবেন না। অন্যায়কারী নিজের আপন বাপ হলেও না।
অন্যায় হতে দেখলে প্রতিবাদ করতে পারলে ভাল, না পারলে সরাসরি বলবেন এইটা অন্যায়।
যদি সেই সাহস না থাকে, তাহলে চুপ থাকবেন, তারপরেও অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গাইবেন না।
একবার মানুষের চোখে যদি বিশ্বাস হারান, ভবিষ্যতে মাথা কুটে মরলেও সেই বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ২:০৩
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×