somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"বিম্পি-জামাত ওদের দলে মিশে গেছে, খেলবো না" টাইপ কান্নাকাটি বাদ দিয়ে আগে বলো তোমরা গণতন্ত্রে ফ্যাসিজ্ম প্র্যাকটিস করলে কেন?

১৮ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেসবুকে দেখলাম আমার ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে ছাত্র ও পুলিশে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির মতন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পোলাপান সরকারি চাকরির দিকে ফোকাসডই না। অন্তত আমি যখন পড়তাম, তখন আমাদের লক্ষ্য ছিল হয় বিদেশে পড়তে যাওয়া, নাহয় পাশ করে ব্যাট, ইউনিলিভার, নেসলের মতন কোন মাল্টিন্যাশনালে বড় বেতনে চাকরি নেয়া।

এখন যুগ পাল্টেছে, তবে ওদেরও টার্গেট আমাদের চেয়ে ভিন্ন হবেনা নিশ্চিত। তাহলে ওরা কেন "কোটা" আন্দোলনে যুক্ত হলো? তাহলে কি ব্যাপারটা এখন শুধুই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সীমাবদ্ধ আছে? না। বরং এখন এটা স্বৈরাচার বনাম ছাত্রআন্দোলনে পাল্টে গেছে। এখন বিষয়টা দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্রের, ব্যক্তি স্বাধীনতার, স্বাধীন মত প্রকাশ এবং সবার সমান অধিকারের দাবিতে।

আমার মা আজকে সকাল থেকে ডিপ্রেসড। কারন জানে যে দেশে থাকলে আমরাও ব্র্যাকের ছাত্র হিসেবে মাঠে নামতাম। আমার বোনও নামতো। পুলিশ আমাদেরও গুলি করতো। কে জানে, হসপিটালে আমরাও মরে পড়ে থাকতে পারতাম! কী ভয়ংকর!
আমরা ছিলাম না, ছিল অন্য কোন মায়ের সন্তান। শুধু ব্র্যাক না, অন্য সব ইউনিভার্সিটি, কলেজ, স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা।
প্রথমআলোর হিসাবে ১৯জন ছাত্র কনফার্মড মারা গেছে। ১৯টা পরিবার চিরদিনের জন্য অন্ধকার হয়ে গেছে। আর কতটা হবে কে জানে!
অথচ ওদের সবারই অধিকার ছিল একটা সুন্দর জীবন যাপনের। পাশ করে চাকরি করার। সংসার করার। বাচ্চা কাচ্চার বাবা/মা হওয়ার। ভ্যাকেশনে গিয়ে ছবি তুলবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিবে, ঝগড়া-ভালবাসা-মান-অভিমানে একটা সুখী জীবন কাটিয়ে দিবে।
কিছুই হলো না। কবরে চলে গেল। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ, মানব জীবনের কি নিদারুন অপচয়!

জাফর ইকবাল স্যার থেকে "রাজাকার" গালি ছাড়া আর কোন বয়ান আসেনি। ১৯টা ছাত্রকে মেরে ফেলা হলো, অথচ তরুণ প্রজন্মের জন্য আল্লাদে গদগদ আমাদের অনেকের প্রিয় সাহিত্যিকের পক্ষ থেকে স্রেফ একটা রিয়েকশন এসেছে "ঢাবিতে যাব না, মনে হবে ওরাই হয়তো সেই রাজাকার!"
সিরিয়াসলি? এই গালিটাই কি এসব বাচ্চাদের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলে দেয়নি?
অথচ এইসমস্ত বাচ্চারাই উনার বই পড়তো, উনার কাছ থেকে "আদর্শ" শিখতো। মুক্তিযুদ্ধ, চেতনা, দেশপ্রেম সব আসলে ভণ্ডামি। সব ছিল মুখোশ। ন্যায়ের পক্ষে যে দাঁড়াতে পারেনা, উল্টো অন্যায়ের পক্ষে সাফাই গায়, ওকে কখনও বিশ্বাস করতে নেই।

ছাত্রলীগের ছেলেদের ছাদ থেকে ফেলে মারার ভিডিওতে লোকজন "আলহামদুলিল্লাহ" বলছে! হাজারে হাজার লাভ রিয়েক্ট জমা হচ্ছে সেই বীভৎস ভিডিওতে। কেন এত ঘৃণা? এত ক্ষোভ? মানুষ কেন এতটা পাশবিক হয়ে গেল? বুঝতে অসুবিধা হয়না। কারন এই ছাত্রলীগই লাঠি হাতে নৃশংসভাবে সেসব ছাত্রদের (ছাত্রীদেরও ছাড়েনি) পিটিয়েছে। ছাত্রলীগের নেত্রী সাধারণ মেয়েদের হুমকি দিচ্ছে "আমাদের ভাইয়েরা তোদের গণধর্ষণ করবে!" একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে এমন কথা বলতে পারে? সে কিনা রাজনৈতিক দলের নেত্রী? এসব শুনেও আমাদের নারী প্রধানমন্ত্রী নীরব? মানুষের ক্ষোভ জমা হবে নাতো কি মরণচাঁদের মিষ্টি দই খাওয়াবে?
কেন প্রধানমন্ত্রী কঠিন গলায় হুমকি দিচ্ছেন না "আমার দেশে একটা মেয়ের গায়েও যে হাত তুলবে, সেই হাত ভেঙ্গে ফেলা হবে! যে চোখ তুলে তাকাবে, সে চোখ উপরে ফেলা হবে!" উল্টো তাঁরই দলের নেত্রী ধর্ষণের হুমকি দেয়!
কেউ কেউ সুশীলতা দেখাতে বলবেন, "প্রধানমন্ত্রীর ভাষা এমন হতে পারেনা। উনি প্রধানমন্ত্রী, রাস্তার গুন্ডা মাওয়ালি না।" Exactly, তাহলে তিনি কেন এইসব বাচ্চাদের "রাজাকারের বাচ্চা" বলে গালি দিয়েছেন? তিনিতো দেশের প্রধানমন্ত্রী!

৭৫ এ মুজিব পরিবারের মৃত্যুতে শুনেছি লোকে রাস্তায় নেমে নাচানাচি করেছিল। বিশ্বাস করতাম না। যে লোকটা দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, তাঁর পরিবারের এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে কিভাবে মানুষ নাচতে পারে? বিশেষ করে মাত্র চার বছর আগেই যে লোকটার আঙুলের এক ইশারায় নিজের জীবন, পরিবার ইত্যাদি কোন কিছুর পরোয়া না করেই কোটি কোটি বাঙালি খালি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ওরা কিভাবে ও কেন সেই একই ব্যক্তির মৃত্যুতে উল্লাস করবে?
হঠাৎ মনে হলো, সময়টা এমন ছিল না তো? আজকে যেমন ছাদ থেকে মানুষ পড়ে যাওয়ার বীভৎস দৃশ্যে লোকজন কমেন্ট করছে "আলহামদুলিল্লাহ বলেন, ওটা ছাত্রলীগ ছিল" - তখনকার সময়েও কি এমন কিছু ঘটেছিল?

মিষ্টি কথায়, হাসিমুখে যে কাজটা অতি সহজেই সমাধান করা সম্ভব হতো, সেখানে দমন পীড়নের নীতি কেন বেছে নিল আমার মাথায় কিছুতেই আসছে না। কোন সভ্য দেশের সভ্য সরকার কি এমনটা কখনও করতে পারে? কারা আওয়ামীলীগের নীতি নির্ধারক? ওদের মাথায় কি ভরা আছে? কি চিন্তা করে ওরা এই কাজটা করেছে? ওরা কি বুঝেনি এর কন্সিকোয়েন্স কি হতে পারে? তাহলে ঘোড়ার ডিমের রাজনীতি করে? কিসের যোগ্যতায় রাজ সিংহাসনে বসেছে?

এখন কোটা উঠালেই বা কি, ১৯টা প্রাণ কি ফিরিয়ে দিতে পারবে?
"বিম্পি-জামাত ওদের দলে মিশে গেছে, খেলবো না" টাইপ কান্নাকাটি বাদ দিয়ে আগে বলো তোমরা গণতন্ত্রে ফ্যাসিজ্ম প্র্যাকটিস করলে কেন? অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার আগে বল এতগুলি ছাত্রকে খুন করলে কেন?
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:৪২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:১৯

'পাগলের প্রলাপ' যখন সত্যি হয়......
[/সব

আমার এক মামা ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জব করতেন হোটেলের শুরু থেকেই। সেই মামা মাঝেমধ্যে আমাদের জন্য হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল থেকে মুখরোচক কেক, পেস্ট্রি ছাড়াও বিভিন্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তার চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না, তবুও

লিখেছেন খাঁজা বাবা, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩২



শেখ হাসিনার নাকি বায়ক্তিগত চাওয়া পাওয়ার কিছু ছিল না। শেখ মুজিবের বেয়ে নাকি দুর্নীতি করতে পারে না। সে এবং তার পরিবার যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করতে পারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি সংক্রান্ত বিষয়ে সামু কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৬

ছাত্র-জনতার সম্মিলিত অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে ফ্যাসিস্ট হাসিনা এবং তার দলের পতন ঘটানো হয়। এটা আমাদের একটা জাতীয় গৌরবের দিন। এটা নিয়ে কারও সন্দেও থাকলে মন্তব্যে লিখতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জ্বীনভুতে বিশ্বাসী বাংগালী ও ঢাকায় ৫০ হাজার ভারতীয় একাউন্টটেন্ট

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৩




ব্লগার সাড়ে চুয়াত্তর ব্লগে লিখেছিলেন যে, উনার ভগ্নিপতিকে জ্বীনেরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো; ২ সপ্তাহ পরে ভগ্নিপতিকে দিয়ে গিয়েছে; এই লোক, সামুর কাছে আমার বিরুদ্ধে ও অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেছুর নিজস্ব একটি জ্বীন ছিলো!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:২৪



আমাদের গ্রামের খুবই সুশ্রী ১টি কিশোরী মেয়েকে জংগলের মাঝে একা পেয়ে, প্রতিবেশী একটা ছেলে জড়ায়ে ধরেছিলো; মেয়েটি ঘটনাকে সঠিকভাবে সামলায়ে, নিজের মাঝে রেখে দিয়েছিলো, এটি সেই কাহিনী।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×