somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগুন লাগাবার আগে ভাল মতন পড়ুন। পড়ালেখার উপরে দুনিয়ায় কিচ্ছু নাই।

০৭ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১. "যদি আল্লাহর পর কাউকে সিজদাহ করার অনুমতি থাকতো, তবে মেয়েদের নির্দেশ দেয়া হতো তাঁদের স্বামীদের সিজদাহ দিতে।" - এইটা পড়েই একদল পুরুষ মাথায় উঠে যায়, একদল নারী হাহাকার করে উঠে এবং একদল নারীবাদী পুরুষ তির্যকভাবে নিন্দাজ্ঞাপন করেন। কিন্তু কারোরই সময় নেই বিষয়টি নিয়ে একটু ভাবার।
সিজদাহ কী জদু মদু যাকে তাকে দেয়া হয়? না। সিজদাহ দেয়া হয় কেবল আল্লাহকে। কেন? কারন তিনি স্রষ্টা, পালনকর্তা, লালনকর্তা, অন্নদাতা, বিপদে মুক্তিদাতা, অসহায় অবস্থায় সাহায্যকারী, অসুস্থ্যতায় সুস্থতা প্রদানকারী ইত্যাদি ইত্যাদি। মানে, আমার সম্পূর্ণ দায়িত্ব তাঁর - তিনিই সাগর, তিনিই আমার জাহাজ, তিনিই পাল এবং তিনিই বহমান বাতাস। আমি কেবল নৌকায় ভেসে চলেছি। একদিন পাড়ে তিনিই পৌঁছাবেন।
তাহলে এখন বুঝতে পারছেন স্বামীদের কী দায়িত্ব তাঁদের স্ত্রীদের প্রতি?
একটি নারীকে বিয়ে করে, তাঁর পরিবার পরিজন থেকে তুলে এনে আমার বাড়িতে নিয়ে আসলাম। এখন থেকে তাঁর আহার নিদ্রা, সুখ অসুখ, শান্তি অশান্তি সবকিছুর দায়ভার আমার। উপরে আল্লাহ, নিচে আমি। ও আমার সংসার বৃক্ষের গুড়ি, সেই বৃক্ষের ফল, মানে আমার ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সব নির্ভর করবে তাঁর ভাল-মন্দ থাকার উপর। সে ভাল নেই, তার মানে আমারও জিন্দেগী বরবাদ - এতটুকু বুঝতে পেরেছেন? বিয়ের ফলে আমার দায়িত্ব কতখানি বেড়ে গেছে বুঝাতে পারছি?
মোটকথা, আমাকে এমন হতে হবে যাতে, আল্লাহর পরে কারোর সামনে সম্মানের সাথে, পরম নির্ভরতা ও ভরসায় তাঁর মাথা নত করার অনুমতি থাকলে, সেটা যেন আমি হই।
এখনও কী তবে ত্যানা প্যাচাবেন?
২. "আমি কার সেবা বেশি বেশি করে করবো?"
"তোমার মায়ের।"
"তারপর?"
"তোমার মায়ের।"
"তারপর?"
"তোমার মায়ের।"
"তারপর?"
"তোমার পিতার।"
প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পুরস্কার সব মা একা নিয়ে গেল, পিতা পেল সান্তনা পুরস্কার। দর্শকের ভালবাসা।
কিন্তু কাউকে দেখিনা এইটা নিয়ে ত্যানা প্যাঁচাতে। ত্যানা প্যাচানো হবে বিভিন্ন আয়াতের অপব্যাখ্যার, "নারীকে এইটা বলা হলো, পুরুষকে কেন বলা হলো না?" "পুরুষকে এই দেয়া হলো, নারীকে কেন না?" এবং শুরু হয়ে যাবে কিছু না ভেবেই হুদাই ফালাফালি।
হ্যা, পুরুষকে বাড়ির বাইরে পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করতে বলা হয়েছে, নারীকে বলা হয়েছে সংসার সামলাতে। (যদিও তার অর্থ এই না যে মেয়েরা বাইরে কাজ করতে পারবেনা, করলেই দোজখে চলে যাবে।)
সাধারণ লজিক বলে, পুরুষ যেহেতু দৈহিক দিক দিয়ে নারীর তুলনায় একটু বেশি শক্তিশালী, কাজেই পুরুষ যেন শারীরিক পরিশ্রমের কাজটা করে। হাজার হাজার বছর ধরে এইটাই হয়ে আসছে।
এখন আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, যদি মেয়েদের বলা হতো বাইরে গিয়ে পরিশ্রম করে টাকা কামাতে এবং পুরুষ ঘর সামলাতে, তখনও একদল ইস্যু তুলতো, "এইটা অন্যায়! এইটা অবিচার। মেলসভ্যেনিক, বলশেভিক, ব্ল্যাসফেমি....." ইত্যাদি ইত্যাদি আরও সব বিদেশী শব্দ। এইসব শব্দের প্রয়োগে লেখার ওজন বাড়ে।
৪. সম্পত্তির উত্তরাধিকার আরেকটা ইস্যু। আমি কিছু টাকা রেখে মারা গেলাম। আমার মেয়ের তুলনায় আমার ছেলে বেশি পাবে। শুরু হয়ে যাবে তোলপাড়। কেউ কিন্তু এই ইস্যু নিয়ে একটা কথাও বলবেনা যে মেয়ে যে সম্পত্তি পাবে, সেই টাকা সম্পূর্ণ তাঁর। সে লিপস্টিক কিনে খরচ করলো, নাকি পাউডার, কারোর কাছে তাঁর জবাবদিহিতা নেই। অথচ ছেলেটাকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তি থেকে তাঁর মা, স্ত্রী, সন্তান এমনকি সেই অবিবাহিতা বোনকেও পালতে হবে যে কিনা একই পিতার সম্পত্তি পেয়েছে। প্রতিটা টাকার জন্য তাঁর জবাবদিহিতা করতে হবে ওদের সবার কাছে। ত্যানাবাজ ভাইয়েরা ও বোনেরা, এই ব্যাপারে আপনাদের মন্তব্য কী?
৫. মেয়েদের একলা বেরোনোর ব্যাপারে ইসলাম অনেক বেশি কনসারভেটিভ। (যদিও ভারতীয় উপমহাদেশে কেবল মুসলিমরাই না, সব ধর্মের মেয়েরাই ছোট ভাই, বা পুরুষ অভিভাবক নিয়ে বাইরে বেরোয়। যদিও দোষ কেবল ইসলামের।)
হাদিসেই আছে, "একদিন এমন সময় আসবে যখন এক রাখাল নারী দেশের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত নির্ভয়ে যাতায়াত করবে - কেবল মাত্র নিজের মেষপালের জন্য জংলী নেকড়ে ছাড়া তাঁর আর কোন কিছুর ভয় থাকবেনা।" (নিজের ভাষায় ট্রান্সলেট করলাম)
মানে হচ্ছে, সমাজ নিরাপদ থাকলে মেয়েরা একাই যাতায়াত করতে পারবে। তাঁর কোন পুরুষ সঙ্গীর প্রয়োজন নেই।
কথা হচ্ছে, আমাদের সমাজ কী নিরাপদ? ক্যান্টনমেন্ট থেকে তনুকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়ে ছিঁড়ে, খুবলে খাবলে লাশটা ফেলে দিয়ে গেল এই সেদিন। কেউ কিচ্ছু করতে পেরেছে? তনুর আগে ও পরে আরও কয়েকটা মেয়েকে তেমনি তুলে নিয়ে গেল - কে কী করতে পেরেছেন? সমাজকে নিরাপদ করুন, তারপরে নাহয় এই ইস্যু নিয়ে কথা বলা যাবে।
৬. মেয়েদের হিজাব পড়াতে অনেকের জ্বলুনি উঠে শরীরে। আমার কথা হচ্ছে, আমাকেতো পড়তে হচ্ছেনা, কেউ যদি শখ করে পড়ে, আমার বাপের কী? আমি অফিসে এসে দেখি আমার নারী বস হাফ প্যান্ট পড়ে চলে এসেছে। তাঁর বস চলে এসেছেন স্লিভলেস টপ্স এবং মিনিস্কার্ট পড়ে। অথচ আমাদের প্রতিটা পরুষকে ফুল ফর্মাল পোশাকে কাজে আসতে হয়, সাথে চামড়ার জুতা। শীত গরম যাই হোক না কেন। আমরা কী বলছি এইটা আমাদের প্রতি অন্যায়? "আন্দোলন! আন্দোলন!! ব্লাসফেমি! ফিমেলসভিজম!!! আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম!"
রিল্যাক্স। ৯০% হিজাবি মেয়ে সেটা পড়ছে নিজের ইচ্ছেতে, ওটা তাঁর লাইফস্টাইল - আপনার আমার মন্তব্য না করাটাই বেটার। কারোর পোশাক নিয়ে মন্তব্য করাটাও মৌলবাদী আচরণ, সেটা জানেনতো?
৭. "সৌদি আরব এইটা করেছে, সৌদি আরব ওটা করেছে।"
"ইসলাম" সৌদি রাজপরিবারের আবিষ্কৃত বা তাদের পেটেন্টকৃত ধর্ম নয়। ওদের বাপ দাদাদেরও নিজস্ব সম্পত্তি নয়। ওরা কী করলো না করলো সেটা ইসলামী জাজমেন্টের বিষয় হতে পারেনা। ধর্মকে পণ্যবানিয়ে নিজস্ব ফায়দায় ব্যবহার ওরাও করে আসছে যুগযুগ ধরে। সম্প্রতি শুনলাম, আল জাজিরা টিভিতে "শরিয়া এবং জীবন" নিয়ে একটি অনুষ্ঠান খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে আরবে। জনগণ বুঝতে পারছে এতদিন শরিয়া আইনের নামে তাঁদের সাথে প্রতারণা করেছে তাঁদের শাসকগোষ্ঠী।
এবং এর ফল হলো এই যে শাসকগোষ্ঠী খেপে গেল আল জাজিরার উপর। কাতারকে একঘরে করে ফেললো, স্টিকার মেরে দিল, "সন্ত্রাসে মদতদাতা।" পাবলিক এই স্টিকার দেখলে আজকাল কিছু ভাবেনা। অতি মূর্খ বেকুবটাও ফেসবুকে লম্বা স্ট্যাটাস লিখে ফেলে এ নিয়ে।
কাজেই জনগনের প্রতি অনুরোধ, কোন কিছু লেখার আগে, আল্লাহর ওয়াস্তে সেই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে পড়াশোনা করুন। ইন্টারনেটে সবকিছুই হাতের মুঠোয় আছে, শব্দবিষ্ঠা দিয়ে সমাজে দুর্গন্ধ ছড়ানোর আগে ভাল করে জেনে নিন, শিখে নিন, বুঝে নিন। আপনার লাগানো আগুনে অনেকের বাড়িই পুড়ে ছাই হবে। পরে হাজার অনুশোচনাতেও কিচ্ছু যাবে আসবে না। কাজেই আগুন লাগাবার আগে ভাল মতন পড়ুন। পড়ালেখার উপরে দুনিয়ায় কিচ্ছু নাই।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৪:০৭
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×