somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

""হিন্দু" "হোলি উৎসবে" "মুসলিম" মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে গায়ে রঙ মাখামাখি"

১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খলিফা উমার (রাঃ) তাঁর দরবারে বসে আছেন। মানে মসজিদের মেঝেতে বসা। এইসময়ে এক সাধারণ লোক এলো, বেশভূষায় বুঝা যায় সে মিশরীয়। অমুসলিমতো অবশ্যই। তা বেচারার অভিযোগ কী?
"ইয়া আমিরুল মু'মিনিন। গভর্নরের ছেলে আমাকে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বলেছিল। আমি তাঁর সাথে দৌড়ালাম, এবং প্রতিযোগিতায় আমিই জিতলাম। কিন্তু ব্যাপারটা তাঁর পছন্দ হলো না। তিনি আমাকে লাঠিপেটা করলেন। বললেন, কোন সাহসে আমি তাঁকে হারালাম!"
কোটেশন ব্যবহার করলেও, নিজের ভাষায় লিখলাম যাতে বুঝতে সুবিধা হয়।
উমার (রাঃ) সাথে সাথে মিশরের গভর্নর এবং তাঁর পুত্রকে রাজধানীতে জরুরি তলব করলেন।
মিশর তখন মাত্রই মুসলিমদের অধীনে এসেছে। আমর ইব্নে আল আস (রাঃ) এর বিজেতা ছিলেন। খলিফা উমারই (রাঃ) তাঁকেই মিশরের গভর্নর নিয়োগ করেছিলেন।
সবাই জানে উমার (রাঃ) শাসনের ব্যাপারে কতটা কড়া - এবং দোষী যদি মুসলিম হয়, তাহলেতো কথাই নেই।
আমর (রাঃ) তাই বারবার নিজের পুত্রকে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, "তুমি এমন কিছু করোনিতো?"
পুত্র পিতাকে ভয় পেয়ে নিজের অপকর্মের কথা চেপে গেলেন।
"না বাবা। আমিও বুঝতে পারছিনা কেন তিনি আমাদের ডাকলেন।"
খলিফার সামনে পিতা পুত্র দাঁড়িয়ে আছেন। খলিফা ডাকলেন মিশরীয় লোকটিকে। খলিফা অভয় দিয়ে বললেন, "বলো তোমার অভিযোগ কী?"
অত্যাচারিত ব্যক্তিটি আবারও তাঁর ঘটনা খুলে বলল। উমার চুপচাপ শুনলেন। তারপর আমর (রাঃ) পুত্রকে জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কী নিজের দোষ স্বীকার করছো?"
পুত্র খানিকটা ইতস্তত করলেও উমারের (রাঃ) সামনে মিথ্যা বলার সাহস করলেন না।
"জ্বি হে বিশ্বাসীদের নেতা। আমি দোষী।"
উমার তখন মিশরীয়ের হাতে নিজের লাঠি তুলে দিলেন। বললেন, "এটি দিয়ে তুমি তাঁকে ততক্ষন পেটাতে থাকো যতক্ষণ না তোমার মনে হয় তুমি ন্যায় বিচার পেয়েছো।"
লোকটা হকচকিয়ে গেল। সে সামান্য কৃষক বা এই শ্রেণীর অতি নগন্য সিভিলিয়ান। সে কিনা পেটাবে গভর্নরের পুত্রকে!
উমার (রাঃ) ধমক দিলেন। "নাও বলছি! পেটাও তাঁকে।"
গভর্নরের সামনে তাঁর পুত্রকে পেটানো হলো। গভর্নর কিছু বললেন না।
উমার (রাঃ) বললেন, "যে মায়ের পেট থেকে স্বাধীন হয়ে জন্মেছে - তুমি কোন অধিকারে তাঁকে দাস বানাও?" (ইসলামই প্রথম স্বাধীন মানুষকে দাস বানানো নিষিদ্ধ করে। শুধুমাত্র যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক, যে নিজের মুক্তিপণ দিতে পারবেনা, তাঁকেই দাস বানানো যাবে। এবং সে যদি নিজের স্বাধীনতা কিনে ফেলতে পারে - তবে তাঁকে মুক্তি দেয়া হবে। এবং ততদিন পর্যন্ত তাঁর সাথে অতিরিক্ত ভাল আচরণ করতে হবে।)
দুই একটা লাঠির আঘাত করার পর মিশরীয় যখন লাঠিটা উমারকে (রাঃ) ফেরত দিতে যাবে, উমার (রাঃ) তখন বললেন, "ওটা তোমার কাছে রাখো। এখন তুমি গভর্ণরকে পেটাবে। বাপের যে পদবীর জোরে তাঁর পুত্র সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার করে বেড়ায় - তাঁর শিক্ষা হওয়া উচিৎ আল্লাহর দরবারে রাজা ফকির ধনী গরিব কিছুই প্রভাব ফেলে না।"
আমরের চোখ কপালে উঠে গেল। খলিফার বিচার সভার অন্যান্যরাও হকচকিত হয়ে গেলেন। আমর কিন্তু আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হওয়া পাবলিক না। তাঁরা খান্দানিভাবেই ইজ্জতওয়ালা কুরাইশ। নিজের গোত্রে তাঁরাই রাজা। কয়েকপুরুষ ধরেই এমনটা ঘটে আসছে। এক সাধারণের আমরের গায়ে হাত তোলা তাই রিয়েলি বিগ ডিল।
কিন্তু উমার(রাঃ) অনড়!
মিশরীয় কান্নায় ভেঙে পড়লো। লাঠি ফেরত দিয়ে আমিরুল মু'মিনিনকে বলল, "আমার বিচার পেয়ে গেছি। আমার আর কিছু লাগবেনা।"
কথা হচ্ছিল "হিন্দু" "হোলি উৎসবে" "মুসলিম" মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে গায়ে রঙ মাখামাখি নিয়ে।
কাজটি নিন্দনীয় অবশ্যই।
তবে, তারচেয়ে বেশি নিন্দনীয় একে সাম্প্রদায়িক রূপ দেয়ার চেষ্টা। এমন পোস্টে আমার রীতিমত পেট উল্টে বমি আসে।
একজন নারীর গায়ে বিনা অনুমতিতে হাত দেয়া যেকোন অবস্থায় যেকোন পরিস্থিতিতে অন্যায়। সেটা মুসলিম নারী হোক, হিন্দু হোক, কি পাহাড়ি অথবা বিদেশী। সেটা দূর্গা পূজা হোক, ক্রিসমান হোক, ঈদ হোক এমনকি কোন নাইট ক্লাবের ডিজে পার্টি। কোন অবস্থাতেই জাস্টিফায়েড না।
কাজটা যে করবে, সে মুসলিম হোক, হিন্দু হোক, এথিস্ট হোক - অবশ্যই অবশ্যই অবশ্যই চড়-থাপ্পড় এবং মুখে চুন কালী মেখে পাড়ায় চক্কর দেয়ানোর শাস্তি ডিজার্ভ করে।
যারা মনে করেছিলেন কাজটা হিন্দুদের এবং তাই নিয়ে ফেসবুকে সাম্প্রদায়িক স্ট্যাটাসে ঝড় তুলেছিলেন, এবং যখন ধরা খেলেন এই জেনে যে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তিনটা বদমাইশই মুসলিম - তখন ইনানো বিনানো শুরু করেছেন - আপনাদের জন্য বড্ড করুণা হয়! নিজের ফাঁদে বারবার ধরা খাওয়ার পরেও স্বভাবটা পরিবর্তন করতে পারলেন না!
আপনার জন্য উপরের ঘটনাটা শোনালাম। উমারের (রাঃ) হাতে ন্যায় বিচার পাওয়া মিশরীয় লোকটা কিন্তু মুসলিম ছিল না।
উমার (রাঃ) কেন ইসলামের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ খলিফা জানেন? কারন তিনি তাঁর গুরু হজরত মুহাম্মদের (সঃ) কাছ থেকে কুরআনের একটা আয়াত শিখেছিলেন, যা তিনি মনে প্রাণে মেনেও চলতেন। সেটা হচ্ছে, "ন্যায়ের জন্য প্রয়োজনে নিজের বিরুদ্ধে হলেও যাও।"
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ২:৫৮
২৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×