somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আপনার সন্তান কিভাবে ব্রেন ওয়াশড হয়?

০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশি জঙ্গিদের পরিচয় পেয়ে সবার চোখ কপালে উঠে গেছে। এত এত ভাল ভাল স্বচ্ছল ও আধুনিক পরিবারের স্মার্ট ট্যালেন্টেড ছেলেরা কী করে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই ব্রেনওয়াশড হয়ে গেল? একেকজন একেক থিওরি নিয়ে হাজির হচ্ছেন। আমি কোন থিওরি দিব না - তবে ইতিহাসের একটা ঘটনা বলবো। মিল খুঁজে পেলে সিরিয়াসলি নিতে পারেন। নাহলে স্রেফ ইন্টারেস্টিং একটি ঘটনা হিসেবেই পড়ে দেখতে পারেন।
পারস্য সাম্রাজ্যে আব্বাসীয় খিলাফতের সময়ে হাসান-ই সাব্বাহ নামের এক সাইকো বাস করতো। সময়টা একাদশ খ্রিষ্টাব্দ।
এই হাসান নিজস্ব একটা সেনাবাহিনী গঠন করেছিল যারা তার হুকুমে নিজেদের জীবন দিয়ে দিতেও প্রস্তুত ছিল। হাসান তাদের দিয়েই তখনকার যুগের মিশন ইম্পসিবলগুলো এক্সিকিউট করতো। এবং তার আর্মিই ছিল তখনকার যুগের সুইসাইড স্কোয়াড।
ধূর্ত হাসান কিভাবে তার লোকেদের ব্রেনওয়াশ করতো জানেন?
নিজের কেল্লায় তার সেনাবাহিনীর প্রতিটা সদস্যকে জ্বালাময়ী বক্তৃতা শোনানো শেষে ওদের সবাইকেই প্রথমে দোযখ এবং পরে বেহেস্তের এক ঝলক দেখিয়ে আনতো। নিজের চোখে দোজখের ভয়ংকর শাস্তি, আগুন, কীট পতঙ্গযুক্ত খাদ্য ইত্যাদি এবং বেহেস্তের বাগান, হুর, দুর্দান্ত সুস্বাদু খাবার ইত্যাদি দেখার পর কে না বেহেস্তে যাইতে চাইবে? কাজেই সবাই সুরসুর করে নিজের নেতার কথা মেনে চলতো - বেহেস্তে দ্রুত পৌঁছার লোভে খুশি মনে গুপ্ত হামলায় অংশ নিয়ে প্রয়োজনে হাসিমুখে মরেও যেত।
প্রশ্ন আসতে পারে, হাসান কিভাবে ওদের বেহেস্ত দোজখ দেখাতে পারতো?
উত্তর হচ্ছে, এই কাজে তাকে একটি বিশেষ ধরণের ভেষজ উপাদান সাহায্য করতো, যার নাম হাশিশ - আধুনিক যুগের গাঁজার জাতভাই। তীব্রমাত্রার হাশিশ মানুষের মস্তিষ্ককে এলোমেলো করে দেয় - ঘটায় চরমমাত্রার হেলুসিনেশন। প্রথমে এমনিতেই জ্বালাময়ী বক্তৃতা শুনে মানুষের মন দুর্বল হয়ে যেত, সেই সাথে হাশিশ খেতে খেতে অজ্ঞান হয়ে গেলে নিজের লোকেদের দিয়ে নিজের তৈরি দোজখে সেই সেনা সদস্যকে নিয়ে যেত। জ্ঞান ফেরার পরও নেশার ঘোর কাটতো না। তাই সাধারণ বীভৎস দৃশ্যতেও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির কলিজা নড়ে উঠতো। তারপর আবারও অজ্ঞান হয়ে গেলে এইবার তাকে নিয়ে যাওয়া হতো নিজের তৈরি বেহেস্তে। সাধারণ একটি বাগানে ছেড়ে আসা হতো। তাকে ঘিরে খেলা করতো খুবসুরৎ জেনানা। এখন ভাই, নেশার ঘোরে মোসাম্মৎ করিমুন্নেসাকেও ঐশ্বরিয়া রাই মনে হয়ে। (আমি সৌন্দর্য্যের আল্টিমেট উদাহরণ হিসেবে এই নারীর নাম সবসময়ে উল্লেখ করি বলে অনেকেই বিরক্ত হতে পারেন। কিন্তু আসলেই এই নারীর প্রতি আমি সেই শৈশব থেকেই দূর্বল। আপনারা আপনাদের নিজেদের ইচ্ছে মতন সুন্দরীর চেহারা কল্পনা করে তাঁর নাম বসিয়ে নিন, রেজাল্ট একই পাবেন।)
কাজেই এতগুলো হুর এবং তাঁদের সেবা এবং সাথে সুস্বাদু খাওয়া দাওয়া দেখে এবং বিশেষ করে আগের রাতেই দোজখের ভয়াবহ রূপ দেখে নেশাগ্রস্তের মাথা বিগড়ে যেত। তারপর আবার অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পরে তাকে ফের হাসানের সামনে হাজির করা হতো।
এইবার হাসান তার নিজের বিখ্যাত চাল চালতো - "তুমি সেই গুটিকয়েক সৌভাগ্যবানদের একজন (Chosen one) যার বেহেস্ত এবং দোজখ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। এখন তুমি সিদ্ধান্ত নাও - তুমি কোথায় যেতে চাও? মনে রেখো - আমরা বেহেস্তে যাওয়ার জন্যই তৈরি হয়েছি। মাছ কী সাগরে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে ভয় পায়? ওটাই তার আল্টিমেট ডেসটিনি। আমাদেরও চূড়ান্ত গন্তব্য জান্নাহ!"
নেশার ঘোরে বেহেস্ত দোজখ ঘুরে আসা "অশিক্ষিত" মাতাল সাথে সাথে কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা নিশ্চই বুঝতে পারছেন।
হাসানের এই হাশিশ খাওয়া খুনিদের ডাকা হতো "হাশাশিন," সেখান থেকেই ইংরেজি শব্দ "assassin" এসেছে।
এখন কথা হচ্ছে, বর্তমান যুগে হাশিশের চেয়েও বহুগুন শক্তিশালী ড্রাগস রাম শ্যাম জদু মদুও আপনাকে জোগাড় করে দিতে পারবে।
এখন লিঙ্ক করা যাচ্ছে কিভাবে বাচ্চাদের ব্রেন ওয়াস করা হয়?
কথা হচ্ছে, আপনার সন্তানকে আপনার চেয়ে ভাল কেউ চেনার কথা না। এবং দুঃখজনক সত্য হলো, মাত্র বারো তের বছর বয়সেই তাঁরা আপনার থেকে মানসিকভাবে আলাদা হতে শুরু করে। এই ভয়াবহ দূর্যোগের মুহূর্তে নিজের সন্তানকে নিজের কাছ থেকে আলাদা হতে দিবেন না। কিছুতেই না। এই সময়ে অভিভাবক না, তাঁরা বন্ধু চায়। আপনিই তাঁর সবচেয়ে আপন বন্ধু - সেটা তাঁকে বুঝতে দিন। মেনে নিন যে এখন সে আর সেই ছোট্টটি নেই - ওকে বড় হতে দিন, বড়দের মতই ট্রিট করুন। মনিটর করুন সে কাদের সাথে মিশে। সরাসরি কথাবার্তা বলে বুঝার চেষ্টা করুন বিপরীত লিঙ্গের প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কী। সামাজিক ইস্যুগুলোতে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি কী। আপনি নিজে যদি জঙ্গি সমর্থক হন, তাহলে ধরে নিন আপনার সন্তানও জঙ্গিই হবে। এবং "আইসিস পাপী মানলাম, কিন্তু আইসিসকে তৈরি করেছে কারা?" - এইসব ব্লেইম গেম পরিবারের সামনে আলোচনা বন্ধ করুন। আগে ঝামেলা মিটুক, পরে এইসব নিয়ে ইচ্ছে মতন তর্ক করা যাবে। নিজের সন্তানকে জঙ্গির স্থানে বসিয়ে সিদ্ধান্ত নিন আপনি কী সাধারণ মানুষ হত্যার সমর্থক কি না। তার ফেসবুক বন্ধু হন। সে কি লাইক করে, কাদের ফলো করে, স্ট্যাটাস কী দেয় - ইত্যাদি ঘাটিঘাঁটি করুন। আবার আপনি যে ওর উপর নজরদারি করছেন - সেটা বেকুবের মতন তাঁকে জানিয়ে দিবেন না যেন। "আমার ছেলে এইসব করবে না" - এতটা ওভার কনফিডেন্ট হবেন না। আপনার ছেলে নবী রাসূল না যে আসমান থেকে ফেরেস্তা এসে তাকে গাইড করে যাবে। ভুল মানুষই করে, এবং আপনার ছেলেও মানুষ - এই সহজ সত্য মেনে নিলেই ৫০% সমস্যা আপনি সমাধান করে ফেলবেন। বাকিটা স্রেফ সাবধানতা।
এবং সবচেয়ে বেশি জরুরি বিষয় হচ্ছে, নিজের ছেলে মেয়েদের কুরআনের যেসব আয়াত দিয়ে ব্রেন ওয়াশ করা হয়, সেইসব আয়াতের আগের পরের আয়াতগুলোও পড়ান। যে ছাগল কাব বিন আশরাফের উদাহরণ দিবে, আপনি তাকে হাব্বার ইবনে আসওয়াদের (রাঃ) উদাহরণ দিন। এই লোকটি নবীজির (সঃ) বড় কন্যা জয়নাবের হত্যাকারী - তারপরেও রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে মাফ করে দিয়েছিলেন। "কবিতা লেখার অপরাধে কাউকে মৃত্যুদন্ড দেয়া"র যুক্তি সেখানে কতটা হাস্যকর বুঝতে পারছেন?
আরও বহু বহু উদাহরণ আছে - নিজে জানুন, নিজের সন্তানকে জানান।
মনে রাখবেন, ব্রেনওয়াশড তারাই হয় যাদের ব্রেনে আগে থেকে কিছুই থাকেনা। যাদের ব্রেন আগে থেকেই মাল বোঝাই, সেটাকে পরিষ্কার করা এত সহজ না।
আজকে শবে কদরের রাতে মানুষকে জিম্মি করা হচ্ছে, ঈদের দিন হামলা করা হচ্ছে, নবীর মসজিদে হামলা করা হচ্ছে, এবং হুমকি দেয়া হচ্ছে ক্বাবা ঘর ধ্বংস করে দিবে! কতটুকু মূর্খ হলে ইসলামের নাম ভাঙিয়ে এইসব কাজ করা সম্ভব! এইসমস্ত জাহিলরা জানেনা যে সাধারণ মানুষের মন ভাঙারও অধিকার মুসলিমদের দেননি - না নবী (সঃ) না আল্লাহ।
বিসমিল্লাহ বলে মদ খেলেই যেমন ইসলামের নামে মদ্যপান হালাল হয়ে যায়না, তেমনি আল্লাহু আকবার বলে সাধারণ মানুষ হত্যা করলেই সেটা ইসলামের নামে জিহাদ হয়ে যায় না। কমন সেন্স যেটা আসলেই কমন হবার কথা, কিন্তু বাস্তবে যেটা খুবই আনকমন, সেটা খাটান। অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
বন্ধ হোক এইসব জঙ্গি হামলা। বিশ্ব আবারও শান্তি ফিরে আসুক। একসাথে জোরে বলেন "আমিন!" যার মানে "তাই হোক!"
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:৫০
১৬টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×