আমার কলেজ সিলেটের এম.সি কলেজ। ইতিহাসখ্যাত এই কলেজটি জোট সরকারের আমলে ছিল সিলেট ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঘাটি। সেখানে ছাত্রলীগের বলতে গেলে কোনই অস্তিত্ব ছিল না, এমনকি ক্ষমতাসীন ছাত্রদলও লেজ গুটিয়ে চলতো।
কলেজে ভর্তির প্রথম দিনই শিবিরের বড় ভাইদের সাথে আমার কথোপকথন হয়েছিল। ওদের দাবি ছিল ওরা ছাড়া দেশে আর কেউই ইসলামের পথে নেই। কাজেই ঈমানি দায়িত্ব পালনের জন্যই ইসলামী ছাত্র শিবিরে যোগ দেয়া প্রতিটা মুসলিম ছাত্রের কর্তব্য।
আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, "শিবির করলে আমার কী লাভ হবে?"
বড় ভাই (অনেক হাই ranked নেতা, অতি অমায়িক, অতি ভদ্রলোক, অতি মিষ্টি কথাবার্তা) খুবই উৎসাহী স্বরে বললেন, "আমরা সময় মতন জামাতে নামাজ পড়ি। নামাজ শেষে হাদিস কুরআন নিয়ে আলোচনা করি। জীবন কিভাবে কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক সাজানো যায়, সেটাই শেখানো শিবিরের কাজ। ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মিছিল মিটিং আমরা কখনই করিনা।"
বাড়িতে মা-বাবার কড়া নিষেধ ছিল কলেজে উঠে কোনরকম রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবেনা। বিশেষ করে শিবিরের সাথেতো অবশ্যই না। রগকাটার জন্য বহুদিন ধরেই তারা কুখ্যাত ছিল। যদি আমি পলিটিক্সে জড়াই, তাহলে আমাকে বিছানা পত্তর সহ লাথি দিয়ে ঘর থেকে বের করে দেয়া হবে। কলেজ পড়াশোনার জায়গা, "আমার ভাই-তোমার ভাই" বলে নেতাদের পা চাটার জায়গা না।
আমি এবং আমার বন্ধুরা স্বযত্নেই সর্বপ্রকার ছাত্ররাজনীতি এড়িয়ে পড়াশোনা শেষ করে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। আলহামদুলিল্লাহ!
যাই হোক, আজকে পত্রিকায় পড়লাম যুদ্ধাপরাধী সাবেক আমিরের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মুকাররমে। এছাড়াও নাকি সারা দেশব্যাপী গায়েবানা নামাজে জানাজার ব্যবস্থা করেছে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবির।
আমার সেই অমায়িক, সজ্জন, ভদ্র (সিরিয়াস ভদ্র, আমি জীবনেও ওকে বা তাঁর সঙ্গীদের কোন মেয়ের দিকে চোখ তুলেও তাকাতে দেখিনি, ইভটিজিংতো বহুদূর) বড় ভাইটার কথা মনে পরে গেল। তিনি বলেছিলেন, "কুরআন সুন্নাহর আলোকে জীবন গঠনই শিবিরের কাজ।"
তা কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক "গায়েবানা" জানাজার নামাজ সম্পর্কে আমরা কী জানতে পারি জানেন?
নবীজি (সঃ) জীবনে একবারই গায়েবানা জানাজার নামাজ পড়েছিলেন, আবিসিনিয়ার মুসলিম সম্রাট আসহুমার মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর। কারন তাঁর দেশে তিনিই একমাত্র মুসলিম ছিলেন। তাঁর এলাকায় কেউই ছিল না নামাজে জানাজা পরার।
এছাড়া নবীজি (সঃ) জীবনেও আর কারও উদ্দেশ্যে গায়েবানা জানাজার নামাজ পরেননি।
তার মানে হচ্ছে, যদি কারো জানাজার নামাজ কেউ পরে ফেলে, তাহলে তাঁর জন্য গায়েবানা জানাজার নামাজের দরকার নেই। পড়লে সেটা বিদআত, সহজ ভাষায় নবীর (সঃ) উপর মাতবরি ফলানো।
কথা হচ্ছে, এই সহজ ব্যপারটিই যারা জানেনা, তারা কিনা দেশের একটি বিরাট অংশের মানুষকে "কুরআন সুন্নাহর আলোকে" জীবন যাপনের শিক্ষা দেয়!
আহারে!
কত হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ ছেলেদের ব্রেইনওয়াশ করে ভুল পথে পরিচালিত করছে দলটি!
বাংলাদেশে ধর্মের উপরে আসলেই কোন ব্যবসা নেই।