somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছিনতাইকারীরা একেকটা পাগলা কুকুর। চিকিৎসা একটাই।

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"ভাই ক্যানভাসের লেখাগুলো কী আপনার নিজের?"
ইনবক্সের এই প্রশ্নটা খুবই বিরক্তিকর। মেজাজ খারাপ হবার মতই।
আমি কখনও কারোর লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেইনা। গ্রুপে এমন কাউকে করতে দেখলে সাথে সাথে বহিষ্কার করি। লেখাচোররা আমার দুই চোখের বিষ। অথচ এই প্রশ্নটা আমারই ইন্টেগ্রিটি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
স্বাভাবিক, মেজাজ খারাপ হলো।
"জ্বী ভাই, ক্যানভাসে নকল করা লেখা ছাপা হয়না।"
"রাগ করবেন না ভাই। এমনিই প্রশ্ন করেছি। আপনার নিজের মুখ থেকে শুনে ভাল লাগলো।"
বুঝে গেলাম প্রশ্নকর্তার বয়স বেশি না।
সাথে লিখলো, "আমি এইচ.এস.সি ক্যান্ডিডেট। আপনার আজকের লেখাটা ("স্কুলের রেজাল্ট দিয়ে বাবা মারা যেন বাচ্চাদের দূরে ঠেলে না দেন" - বিষয়ের উপর লেখা) খুবই ভাল লাগলো। আবার খুব খারাপও।"
আমার লেখা ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগলো। খারাপ লাগলো শুনে অবশ্য খারাপ লাগলো না। আমার লেখা ভাল লাগা পাবলিকের সংখ্যাই বরং কম। দেখেন না, ইদানিং গ্রুপে মানুষ কিভাবে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিচ্ছে?
"এইটা কেন লিখলেন? ঐটা কেন লিখেন নাই?" অতি ধার্মিকেরা বলে "আপনি মুনাফেক!" অতি নাস্তিকেরা বলে "আপনি ছুপা ছাগু!"
"না ভাই, রাগ করিনাই। তবে লেখাটি তোমার জন্য না। তোমার মা বাবাকে পড়াও।"
ছেলেটা জানালো তাঁর মা বাবা নেই।
শুনে মনটাই খারাপ হয়ে গেল।
আমার বাবা মারা গেছেন আমি যখন নিজের খাবার নিজে কিনে খেতে পারি। নিজের থাকার জন্যও কারোর উপর নির্ভর করতে হয় না। তারপরেও মনে হয়েছিল হঠাৎ করেই আমি যেন গৃহহীন হয়ে গেছি। হঠাৎ করেই উপলব্ধি হলো, এখন থেকে আমার যাবতীয় সমস্যা আমার নিজেকেই সমাধান করতে হবে, সব সমস্যার সমাধান নিয়ে বাবা আর কোনদিন হাসিমুখে এগিয়ে আসবেন না। তখন আমার বয়স ছাব্বিশ। যদি বয়স বাষট্টিও হতো, আমি নিশ্চিত, তখনও একই উপলব্ধি হতো।
অথচ এই ছেলে মাত্র কলেজে পড়ে। এইচএসসির মতন জীবনের একটি মহা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে কেউ নেই মাথায় হাত বুলিয়ে বলবেন, "ভয় নেই ব্যাটা! নিজের উপর ভরসা রাখ। তোকে দিয়েই হবে।"
"আমি দুঃখিত।"
"ভাইয়া, একটা রিকুয়েস্ট রাখতে হবে।"
"বল।"
"কিছুদিন আগে একটা ডাক্তার আপুর ঘটনা শুনেছেন যে ছিনতাইকারীদের শিকার হয়ে কয়েক বছর ধরে কোমায় আছে?"
"হ্যা।"
"আমি ক্লাস টেনে থাকতে আমার আম্মার সাথেও ঠিক একই কাজ হয়। অনেক বড় ঘটনা, আম্মা সাত দিন কোমায় থাকার পর আল্লাহর কাছে চলে গেছে। যেই ছেলেগুলা কাজটা করছে, ওরা অনেক ভাল ফ্যামিলির, দেখতে শুনতেও ভাল, আমি নিজেই ছিলাম ওইদিন আম্মার সাথে।রিক্সায়। আমার আম্মার জন্য না, তবে এসব কাজ যারা করে, তারা তো কয়েকটা টাকা, ফোন এগুলা পাওয়ার জন্য এসব করে, কিন্তু তারা হয়তো জানেও না, যে তারা কারো শেষ আশ্রয়টুকুও হয়তো কেড়ে নেয়। আমি অনেক সাফার করছি, আরো করবো। তবে এরা যাতে চেঞ্জ হয়, নিজের মেন্টালিটি চেঞ্জ করে, এর জন্য কিছু একটা লিখবেন। আমার ভালো লাগবে। আমি অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম, আপনাকে এটা বলবো। সময় পেলে লিখার চেষ্টা করবেন।এতটুকুই।"
ছেলেটির ঘটনা শোনার পর থেকে মাথাটা একদম খালি হয়ে গেছে। আমার এক বন্ধুর বাবাকেও এইভাবে সামান্য কিছু টাকার জন্য পেটে ছুরি ঢুকিয়ে দিয়েছিল ছিনতাইকারী। আঙ্কেলও সেদিন বাঁচতে পারেননি। পিতৃহীন বন্ধুটির কষ্ট আমি নিজের চোখে দেখেছি।
কথা হচ্ছে, এমন ঘটনাতো এখন প্রতিদিনই ঘটছে। কিন্তু এই বিষয়ে লেখালেখি করার কোন ক্ষমতা কী আমার আছে? আমি, আপনি, আমরা সবাই লিখলেই কী কিছু ঘটবে? আমাদের লেখালেখিতে কী কখনও ছেলেটার কষ্টটা ফুটে উঠবে? ছেলেটা কোন সান্তনা পাবে? জানোয়ারগুলি শুধরাবে? সবচেয়ে বড় কথা, ওরা কী পড়ে? বই পড়তে হলে একটি সুন্দর মনের প্রয়োজন হয়। সেই মনটা কী তাদের আছে?
মাত্র কয়েকটা টাকার জন্য একটি ছেলের কাছ থেকে তাঁর মাকে কেড়ে নেয়া হয়েছে। ওরা কী করেছে সে টাকা দিয়ে? নেশা? ড্রাগস? ইয়াবা?
কতটা অমানুষ হয়ে যাচ্ছি আমরা সেটা কী উপলব্ধি করছি?
কুকুর পাগল হলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলতে হয়। নাহলে কামড়ে অন্যের জলাতঙ্কের কারন হয়।
আমাদের দেশে এখন অনেক পাগলা কুকুর বেড়ে গেছে। অনেক।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:১১
১০টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×