১.
আমাকে এক হাজার একদিন ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছিল। এক
মাঘী-পূর্নিমার রাতে আমি ঘরছাড়া হলাম। আমার সারা অঙ্গে তখন অস্থিরতা। ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আমি ছুটতে লাগলাম। ছুটতে ছুটতে আমার পায়ের আঙ্গুল ঘষে পড়ল তবুও আমার পথ চলা থামে না। ছুটতে ছুটতে সকাল হল.....এক সময় মায়া দীঘির পাড়ে এসে থামল আমার গতি। তখন আমার কাজলটানা নয়নভরে ঘুম। আমি আছড়ে পড়লাম.....আঁকড়ে ধরলাম এক আজলা জল।
এরপর গুনে গুনে এক হাজার একটা পূর্নিমার রাত শেষ হবার পর লোকেমুখে শুনা যায়--আমি দীঘির বুকে পদ্মফুল হয়েছিলাম।
২.
চন্দ্রনাথ, আমার বাড়িতে আসার কথা ছিল তুর। তোকে দেব বলে সেগুন কাঠের সিন্দুকে ভরে রেখেছি ২০৫ টি বকুলের শুকনো মালা। দেয়াশলাইয়ের ছোট্ট বাক্সে তুলে রেখেছি একটা ডানাভাঙ্গা জোনাক।
চন্দ্রনাথ, তুর কাছে আমার লুকানোর তো কিছু নেই। তোকে সঁপে দিলাম আমার আমিত্বকে। আমার শরীরের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে যেই ফাগুনের দোলা তা তুই ছাড়া আর কে ছুঁয়ে দিবে বল! তুর সাথে যে বিধাতা আমায় বেঁধে দিয়েছেন। মনে মনে তোকে আমি পতি মান্য করে পূজো দিয়েছি কতশত!
.
.
.
তুর শব দাহের পর আমি ঠিক ঠিক আগুনে ঝাপ দিব আজ সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে। তুই নিজেকে একটুখানির জন্যও একা ভাবিস না।
৩.
বাতাস আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। আমি যতই ছেড়ে দিতে বলছিলাম ততই প্রবলবেগে আমাকে আমার চেনা জগৎ ছেড়ে আরো গভীরে নিয়ে যাচ্ছিল। অবশেষে এক মুক্তবনে এসে বাতাস তার বাহুডোর থেকে আমাকে চিরমুক্তি দিল।
এক হরিনীর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়। সে আমাকে দেখে পালিয়ে গেল না! তার ঢুলু ঢুলু চোখের মনিতে বিষাদের ছায়া। তার চোখের গভীরে চোখ রাখার পর জানতে পারলাম - আমি মৃত ছিলাম।
প্রেম কিংবা ছন্দপতন
১. রাখালকে আমি রেখে দিয়েছিলাম আমার নিপুণ খোঁপার ভাজে। তাকে কেউ কোনদিন দেখেনি। শুধু আমি তার গল্প বলে যাই। রাখাল থেকে যায় রূপকথার রাজ্যে। আমিই সেই ভাঙ্গাচুরা রূপকথা।
২.
আমি স্বর্নলতার সাথে বাতচিত করছিলাম।
স্বর্নলতা: তুমি কি?
আমি - আমি কাশবন।
: আমাকে সাজাও
- আমার রঙতুলি নেই যে
: আমাকে উড়াও
- আমি ডানাহীন
: আমাকে ভাসাও
- মেঘহীন আমি
: আমাকে পুড়াও
- অভিশপ্ত দীপ্ত শিখা নই
: তবে কি দিতে পার আমায়?
- প্রেম
অবশেষে এক ধুতরা ফুলগুচ্ছ দিয়ে সে আমাকে গ্রহণ করল। অতঃপর আমার হল অবসান। আর তার হল শুরু এক প্রেমপূর্ন রুমালের বুকে মাথা রেখে।
৩.
সে এসেছিল-তাকে আমি দেখিনি। আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম। সে ফিরে গেল। আমি চিরতরে নিদ্রাকে বিদায় দিলাম।
সে ফিরল না আর-----আমি তার আসার পথ চেয়ে বসে রইলাম। যুগ যুগ ধরে যেচোখে চেয়ে রইলাম সেই চোখে ছানি পড়ল একসময়--আমি অন্ধ হলাম।
সে ফিরে আসল। আমি তখনও তাকে দেখিনি। আমি অন্ধ ছিলাম। সে ফিরে গেল---আমার উদাসীনতা দেখে।
অবশেষে তাকে পাব বলে ঘরছাড়া হলাম। অন্ধ আমি তাকে হাতড়ে হাতড়ে খুঁজতে লাগলাম।
সে ফিরে আসল ঠিকই। আমার ঘর ছিল শূন্য। আমি তার জন্য পথে নেমেছিলাম। সে তার কিছুই জানত না।
সে ফিরে গেল চিরতরে। আমি নিঃস্ব, শূন্য তার জন্য পথে পথেই নিজেকে হারালাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ সকাল ৮:০৭