চল যায় বসন্তের দেশে
আব্দুল মান্নান মল্লিক
আমাদের এ-ই বৈচিত্র্যময় বাংলা, সারা বিশ্বের মধ্যে অন্যতম। ছয় ঋতুর ষড়ঋতু, অর্থাৎ শেষ ঋতু বসন্ত। ছয় ঋতুর পাঁচ ঋতুকে বিভিন্ন রূপ-জৌলুষে দেখলেও বসন্তের রূপ-জৌলুষ অন্যতম।
তবে একেবারে না বললেই নই। বসন্তকাল আসতে না আসতেই মনে পড়ে যায় কোকিলের কুহু-কুহু মধুর বোল। বসন্তের দূত বলতে কোকিলের সাথেই আমরা বেশী পরিচিত। বসন্তকাল ছাড়াও কম-বেশি এদের-কে বছরের অধিকাংশ সময়ই ঝোপঝাড়ের আড়ালে লুকিয়ে থাকতে দেখা যায়। এমনও কিছু পাখি আছে যে, একমাত্র বসন্তকালেই দেখতে পাই। সুন্দর এ-ই পাখিটির নাম বৌরি পাখি। আমাদের বাংলার মানুষ কেউ-কেউ বসন্ত বৌরি নামেও সম্বোধন করে। বসন্তকালে আমাদের বাংলায় বড় পাখির তুলনায় বিভিন্ন ধরনের রঙবেরঙের ছোটো ছোটো পাখিদের ভীড় জমে বেশী।
এবার আসি বসন্তকালীন রংচঙে ফুলের কথায়। বসন্তকালে গাছে-গাছে বিভিন্ন রংচঙে ফুলের মাঝে মনে পড়ে যায় শিমুল ফুলের কথা। বসন্তকালের এই ফুলটির সাথেই বাংলার মানুষ বেশী পরিচিত।
আবহমান বসন্ত তার রূপ জৌলুশ নিয়ে দশ মাস পর পর প্রতি বছর দুই মাসের অতিথি হয়ে এসে আমাদের বাংলাকে নব যৌবন রূপে পুনর্জীবন করে তোলে। রঙে রঙে ভরে ওঠে সারা বাংলা।
আজ বসন্ত।
পাখি গাইবেই, ফুল ফুটবেই।
তরঙ্গে তরঙ্গে সুরভিত গুঞ্জরিত।
রঙ্গশালা বঙ্গ আমার এলোরে এলো বসন্ত।।
দীর্ঘদিনের অপেক্ষা ভেঙে উন্মুক্ত করে দিল বাংলা তার বদ্ধ দুয়ার দখিনা বাতাসের সম্মুখে।
এক গুচ্ছ রঙবেরঙের ফুলের সাজি আর ছোটো ছোটো রঙবেরঙের পাখিদের নাচ-গান নিয়ে বসন্তের পদার্পণ। গাছের বাহু জড়িয়ে ধরে নানান রঙে ফুলেদের হাসি আর পাখিদের গানে-গানে বাংলা আজ উল্লাসিত। বুড়িয়ে যাওয়া বড়-বড় গাছগুলো, যেমন কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, পলাশ, নাগেশ্বর, নাগকেশর, মহুয়া আরও কতকিছু এরা সবাই আজ বসন্তের ছোঁয়া পেয়ে পুরাতন শুকনো পাতার পরিধান ছেড়ে আজ ফুলে ফুলে সেজে উঠেছে নতুন সাজে। এখানে সেখানে, আদাড়ে বাদাড়ে অবহেলায় পড়ে থাকা নাম না জানা ছোটো ছোটো জংলী গাছগুলো দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর আজ তারা ও ফুলে ফুলে নতুন সাজে সেজে উঠেছে। গজিয়ে উঠেছে ঘাসফুল শুকানো খালবিলে। গাছে গাছে পাখিদের কলকাকলি, ফুলের রেণু গায়ে মেখে প্রজাপতিদের বক্র-পথে বিচরণ , আম বনের মৌগন্ধে মৌমাছিদের গুঞ্জরন, সোনা বউ পাখির টেরা চোখের চাহনিতে বুলি আওড়ানো বউ কথা কও, বউ কথা কও। সব মিলিয়ে সারা বাংলা আজ বসন্তের তালে তাল মিলিয়ে ঝলমলে হয়ে উঠেছে।
আহারে, আর কি চায় আমরা!
কিসের প্রয়োজন সাজানো ফুলের বাগান,
কি প্রয়োজন পোষ মানানো পখির গান।।
চাইনা গো আর বোতল বন্দী ঘরের সুঘ্রাণ।
সবার সেরা সব পেয়েছি স্রস্টার শ্রেষ্ঠ দান।।