জল্লাদ কাদের মোল্লা ও আশরাফুজ্জামানের সাথে জেনারেল নিয়াজীর ফটো এবং ভিডিও ফুটেজ দেখুন। ঐতিহাসিক ফুটেজ। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান নিয়াজী মারা গেছেন এবং রাও ফরমান আলী তার জায়গা নিয়েছেন এমন একটি গুজব ডিসেম্বরের শুরুতে যখন ডালপালা মেলেছে, তখন প্রকাশ্যে দেখা দেন নিয়াজী। হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালের (এখন শেরাটন) সামনে তার সঙ্গে বিবিসির মার্ক টালির একটি দারুণ ঝগড়া হয় যেখানে নিয়াজী দাবি করেন পাকিস্তান টিকবে, শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষা করবে সেনাবাহিনী। নিয়াজীর বাগাড়ম্বর সার। কিন্তু এই ফুটেজেই দেখা মিলেছে কিছু এদেশীয় দালালের। এরা সাংবাদিক হিসেবে সেখানে যায়নি। কারা এরা? আবদুল কাদের মোল্লা ও আশরাফুজ্জামান। ঢাকার বুকে আল-বদরের সবচেয়ে ত্রাস দুই জল্লাদের নাম।
বর্তমানে জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা কাদের মোল্লা একাত্তরে মীরপুরের জল্লাদ ও কসাই নামে কুখ্যাত ছিলেন। বুদ্ধিজীবিদের বধ্যভূমি শিয়ালবাড়ি ও রূপনগর এলাকায় হাজার হাজার স্বাধীনতাকামীর রক্তে তার হাত রাঙা। মিরপুর ১১ নম্বর বি ব্লকের বাসিন্দা ফজর আলী গণতদন্ত কমিশনকে দেওয়া সাক্ষ্যে তার ছোটভাই মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন। ২৯ মার্চ নবাবপুর থেকে পল্লবকে তুলে নিয়ে আসে কাদের মোল্লার সাঙ্গপাঙ্গরা। এরপর তার নির্দেশে ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর সেকশানের শাহ আলী মাজার পর্যন্ত হাতে দড়ি বেধে হেচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ছাত্রলীগ কর্মী পল্লবকে। এরপর আবার ১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর সেকশনের ঈদগাহ মাঠে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা ২ দিন একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয় পল্লবকে। ঘাতকরা এরপর তার দু হাতের সবকটি আঙুল কেটে ফেলে। ৫ এপ্রিল একটি মজার খেলা খেলেন কাদের মোল্লা। সঙ্গীদের নির্দেশ দেওয়া হয় গাছে ঝোলানো পল্লবকে গুলি করতে, যার গুলি লাগবে তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে। পরে কাদের মোল্লার সঙ্গী আখতার পল্লবের বুকে ৫টি গুলি করে পরপর। পল্লবের লাশ আরো দুইদিন ওই গাছে ঝুলিয়ে রাখেন কাদের মোল্লা, যাতে মানুষ বোঝে ভারতের দালালদের জন্য কি পরিণাম অপেক্ষা করছে। ১২ নম্বর সেকশানে কালাপানি ঝিলের পাশে আরো ৭ জন হতভাগার সঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া হয় পল্লবকে। অক্টোবরে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশানে একজন মহিলা কবি মেহরুন্নেসাকে প্রকাশ্যে নিজের হাতে নির্মমভাবে হত্যা করে কাদের মো্ল্লা। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন সিরাজ এই নৃশংসতায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মূলত বিহারীদের নিয়ে একটি খুনে দল তৈরী করেছিলেন কাদের মোল্লা আর বুলেট বাচাতে জবাই করা ছিলো তার কাছে বেশী প্রিয়।
পাকি জল্লাদের পিছনে দুই দেশীয় জল্লাদ।
আশরাফুজ্জামান এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। নামের আগে মাওলানা। বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডে প্রধান জল্লাদের ভূমিকা ছিলো তার। স্বাধীনতার পরপর ফেরারী ব্রিটেনে এখন জামাতে ইসলামীর বড় নেতা চৌধুরী মঈনউদ্দিনের সঙ্গী ছিলো সে। আশরাফুজ্জামান ইসলামী ছাত্র সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মঈনউদ্দিন ছিল অপারেশন ইন চার্জ আর আশরাফুজ্জামান ছিলো প্রধান জল্লাদ বা চিফ একজিকিউশনার। যে গাড়ি করে ঘাতকেরা বুদ্ধিজীবিদের রায়ের বাজারের শিয়ালবাড়ি বধ্যভূমিতে নিয়ে যেত, তার ড্রাইভার মফিজুদ্দিন ধরা পড়ার পর জবাববন্দীতে তার এই পরিচয়ই দেয়। দুজনে জামাতে ইসলামী অফিসের উল্টোদিকে থাকত। আশরাফুজ্জামানের ৩৫০ নম্বর নাখালপাড়ার বাড়ি থেকে একটি ব্যক্তিগত ডায়েরি উদ্ধার করে মুক্তিবাহিনী। সেখানে দুটো পৃষ্টায় ২০জন বুদ্ধিজীবির নাম পাওয়া যায় যাদের মধ্যে ৮ জনকে হত্যা করা হয়। তারা হলেন মুনীর চৌধুরী, ড. আবুল খায়ের, গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, রশিদুল হাসান, ড. ফয়জুল মহী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডাক্তার গোলাম মুর্তজা। এদের প্রত্যেককে আশরাফুজ্জামান নিজে গুলি করে হত্যা করেছিল বলে জবানবন্দী দেয় মফিজুদ্দিন। ডায়েরির অন্যান্য পাতায় দালাল বুদ্বিজীবিদের নামের পাশাপাশি আল-বদরের হাই কমান্ডের নামের তালিকা ছিলো। এতে মঈনউদ্দিন ছাড়াও ছিল কেন্দ্রীয় কমান্ড সদস্য শওকত ইমরান ও ঢাকা শহরপ্রধান শামসুল হকের নাম।
এই দুই জল্লাদের ফাঁসি চাই।
সূত্র : মুক্তিযুদ্ধ কোষ