৩রা ডিসেম্বর ২০১৬ সারাদেশব্যাপী মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা কালোব্যাজ ধারণ করবে এবং দিনটিকে সাদা এপ্রোন কলঙ্কিত ও নিষ্পাপ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসেবে "ন্যাশনাল মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ডে" হিসেবে পালন করবার জোড়ালো আবেদন জানাচ্ছি সবাইকে।
_________________
আমার বিগত ০৪-১২-২০১৪ ইং তারিখের লেখাটিঃ
"প্রসঙ্গ যখনঃ ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি,বরিশাল এর নিরীহ মেডিকেল ছাত্র-ছাত্রীদের সাদা এপ্রোন-এ হায়েনার থাবা!! ছাত্র-ছাত্রীদের উপর নির্মম প্রহার,
নারীর মর্যাদা ভুলন্ঠিত _পুলিশ নামক কতিপয় দুষ্কৃতিকারী দ্বারা।"
_____________________________________
মহামান্য রাষ্ট্রপতি,
মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী,
মাননীয়া বিরোধীদলীয় নেত্রী,
মাননীয়া জাতীয় সংসদ উপনেতা,
মাননীয় মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ,
জাতীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ,
সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা-নেতৃবৃন্দঃ
আপনারা সমাজের এলিট শ্রেণির মানুষ, তাই সামান্য সর্দিকাশিতেও রোগ নির্নয়ের জন্য আপনারা ছোটেন সিংগাপুর মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে।
আর গরিব দেশের এই সংখ্যাগরিষ্ঠ, আর্থিকভাবে অক্ষম লোকগুলো রোগের শেষ পর্যায়ে আসে হাসপাতালে সেবা নিতে তথা রোগ নির্ণয় করতে,তাদেরই হতভাগ্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সন্তানদের কাছে। সেবা নিয়ে হাসিমুখে ফিরেও যায়।
আপনারা জানেনই না যে, স্বাস্থ্য খাতে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নামে একটি প্রজাতি /শ্রেণী /পদবি আছে,যারা প্রিয় বাংলাদেশের ধনী-গরিব নির্বিশেষে আপামর জনসাধারনের অত্যন্ত সফলভাবে রোগ নির্ণয় করে থাকেন।
আপনাদের স্মৃতিশক্তি অনেক কম,তারপরেও আপনারা শুধু মনে রাখতে পারেন ডাক্তার ও নার্সদেরকে! মনে রাখার যুক্তিযুক্ত কারনও আছে বটে!
তারা মাঝেমাঝেই সারাদেশে কর্মবিরতি দিয়ে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয় এবং সেইসাথে আপনাদের ক্ষমতার মসনদটিকেও প্রবলভাবে কাঁপিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
"কি আজব আপনাদের চরিত্র!
আপনারা শক্তের ভক্ত,নরমের যম!!"
জনাব-জনাবাবৃন্দ,
আমাদেরকে আর শান্ত ভাববেন না। সেই দিন শেষ আমাদের কাঁপুনি দেখার দূর্ভাগ্য আপনাদের এখন পর্যন্ত না হলেও,হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের সেই সরকার কিন্তু ঠিকই দেখেছেন!
একদিনের কর্মবিরতিতেই সব দাবীদাওয়া মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
অনেক বলেছি,আর অনুরোধসূচক কিছু বলছি না।
আহ্বান জানাই আপনাদের,মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ন্যায়সঙ্গত দাবীদাওয়া মেনে নিয়ে দ্রুত বাস্তবায়ন করুন।
বরিশাল ও রংপুর-এ পুলিশি action এ জড়িত দুষ্কৃতী কারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যাবস্থা নিতে হবে। সাদা এপ্রোনের মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে।
কোথায় নারীর মর্যাদা?
শুনে রাখুন,নির্যাতিত এইসব মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা জঙ্গি টেকনোলজিস্ট হতে চায় না।
"দয়া করে আমাদেরকে বিপথগামী করে তুলবেন না।"
____________________________________
মহামান্য উচ্চ আদালতের নিকট বিশেষ নিবেদনঃ
স্যার, গনতান্ত্রিক দেশে যে কেউ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবীদাওয়া কর্তৃপক্ষের নিকট বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন করতেই পারে।
এপ্রোন পরিহিত অবস্থায় মধ্যযুগীয় কায়দায় কেন ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নির্মম ও নির্দয়ভাবে পিটানো হলো?
কোথায় থাকে নারীর সন্মান,যখন পুলিশের অমানুষিক মারপিট সহ্য করে রাজপথে লুটিয়ে পরে শ্বাস কষ্টে ভোগে,রক্ত ঝরে?
উল্টো পুলিশের গণগ্রেফতার কি গনতন্ত্রের প্রতি অশনিসংকেত বহন করে না?
মহামান্য আদালত,
দেশের কল্যানের জন্য আপনারা মাঝেমধ্যেই স্বপ্রনোদিত হয়ে সুয়োমুটা রুল জারী করে থাকেন।
আমাদের আজকের দাবী ও অনুরোধ,
সাদা এপ্রোনের মর্যাদা,নারীর সন্মান রক্ষায়, নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর এই নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে পুলিশের এই Action কে অবৈধ ঘোষনা করে,জড়িতদের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট মহলে একটি রুল জারী করুন।
স্বাস্থ্য সেবা রক্ষায় ও এর উন্নতি কল্পে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দের দাবীগুলো মেনে নিতে সরকারের প্রতি আর একটি রুল জারী করুন,প্লিজ।
আপনারাই আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল।
যেখানে আপনার আমার স্বাস্থ্য জড়িত, সেখানে কোন ছাড় নয়,অন্যায়ের সাথে আপোস হতে পারে না।
___________________________________
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়,
পুলিশ সদর দপ্তর ও ডি,এম,পি;
বরিশাল মহানগর পুলিশ(বি,এম,পি),
বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ঃ
"দেশের প্রায় সবগুলো প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া গুরুত্ত্বের সাথে Institute Of Health Technology,বরিশালের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশি action এর যেসব দৃশ্য দেখালো,তাতে বিবেকবান সকল মানুষের হৃদয়েই মোচড় দিয়ে উঠেছে।
আজ সাধারণ মানুষের মনের ভিতর রক্তক্ষরণ হয়েছে, ভয় কাজ করছে।
তারা আর হয়তো চাইবে না চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই শাখায় ভর্তি হয়ে Medical Technologist হতে গিয়ে তাদের ছেলে-মেয়েরা এপ্রোন পরিহিত অবস্থায় তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের মার খাক,ন্যাক্কার এই অত্যাচার সহ্য করুক।
দেখলাম একজন পুলিশ একহাতে একজন ছাত্রকে ধরে রেখেছেন এবং অন্য হাতে অন্য পুলিশদের বাধা দিচ্ছেন না মারতে। কিন্তু তার বাধা সত্ত্বেও নিচু ও মানসিক বৈকল্যের শিকার অনেক পুলিশ সদস্য মিলে কি নির্মমভাবে পিটাচ্ছিল সেই ছাত্রকে।
ছাত্র-ছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের এই মিলনমেলায় অনেক পুলিশ এমনভাবে লাঠিচার্জ করছেন,তা দেখে মনে হলো তারা যেন তাদের লাঠি কতখানি শক্ত ও মজবুত তা পরীক্ষায় গভীরভাবে অনুশীলনে ব্যাস্ত।
দেখে এও মনে হল,তারা ছাত্র-ছাত্রীদের কে নয়, একপাল গরু/গাধা কিংবা ঘোড়ার পিঠে চাবুক মারছেন।
তারা যেন ভুলেই গিয়েছিলেন যে,তাদের হাতে চাবুক নয় লাঠি আছে,যা হাড়গোর পর্যন্ত ভেংগে দিতে পারে।
"পুলিশের কিছু অতি উৎসাহী সদস্য নির্মমভাবে মারপিট
করছে ছাত্র-ছাত্রীদের।"
সেই মেয়েগুলো(ছেলেদের কথা বাদই দিলাম) যারা বেদম অত্যাচার সহ্য করে,মারপিট খেয়ে রাস্তায় পরেছিল তাঁদেরকে কোনপ্রকার সাহায্য তো দূরে থাক,পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে উল্টো গণগ্রেফতার শুরু করলেন!
কেন?
জবাব চাই,
বিজয়ের মাসে কি বিজয় করলো পুলিশ?
বরিশাল বিজয়ে কতখানি লাভবান হলেন?
বিবেকবান জনতার আদালতে গোটা পুলিশ প্রশাসনকে কেন কাঠগড়ায় দাড় করানো হলো?
পুলিশ প্রশাসন কেন দায় নিবে এই দুষ্কৃতিকারী কিছু সদস্যের?
অতিদ্রুত বিভাগীয় ব্যাবস্থা নিতে হবে আপনাদের।
মনে রেখ পুলিশ ভাই,
বেতন খুব বেশি পাওনা যে রোগ নির্নয়ের জন্য Mount Elizabeth Hospital এ যাওয়ার সুযোগ পাবে তুমি!
যাবে কোথায়?
লজ্জা পাবে না তোমার?
তোমার রোগনির্ণয় কে করবে?-- আমি সহ ওই নির্যাতিত আমার ভাই-বোনরাই।
আমরা সেবা দিব,কিন্তু মমতা ও আন্তরিকতার জায়গায় তোমরা বড় একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন একে দিলে!
_____________________________________
বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (IHT)
তে অধ্যয়নরত আমার প্রান-প্রিয় শিক্ষার্থী ভাই-বোনঃ
তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী।
ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।
মনে রেখ,প্রতিটি ভাল কাজের পিছনেই কাউকে না কাউকে অবদান রাখতে হয়।
আর যারা অবদান রাখে,দিনশেষে তারাই নায়ক হিসেবে মর্যাদা পায়।
তোমাদের অক্লান্ত চেষ্টা, রক্ত,জেল-জুলুম আমাদের ন্যায্য দাবী আদায়ে বৃথা যেতে পারে না।
তোমরা পিছুটান দিয়ো না,বন্ধু।
বলতে খারাপ লাগছে,তবুও বলছিঃ
"তোমাদের রক্তের মুল্য আমরা ইতিমধ্যেই পেতে শুরু করছি।
সারাদেশের সুশীল সমাজ পুলিশের জঘন্যতম এই ভুমিকার কড়া সমালোচনা করছে।
আমাদের অবদানকে আজ সবাই জানতে শুরু করছে।
মিডিয়া আমাদেরকে কভারেজ দিচ্ছে।
সরকারের উচ্চপর্যায়েও সমালোচনা চলছে।"
বন্ধুরা,স্বাস্থ্য সেবার ইতিহাসে কিংবা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দের সংগ্রামের ইতিহাসে তোমাদের নাম স্বর্নাক্ষরে লেখা থাকবে।
মাঠ ছেড়ে দিয়োনা বন্ধুরা।
সফলতা আর বেশি দূরে নেই।
"রাত যত গভীর হয়,প্রভাত তত নিকটে আসে।"
____________________
আমার ক্লাস ওয়ান পড়ুয়া ছাত্র গতকাল রাতে
আমাকে বলছেঃস্যার আমি আর ডাক্তার হবো না।
আমি বললামঃ কেন?
সে উত্তর দিলোঃ এপ্রোন পড়া ডাক্তারদেরকে পুলিশ খুব পিটায়।
আজকে টেলিভিশনে দেখছি।
তার কথার সুত্রে টেলিভিশনে যা দেখলাম তাতে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি।
সব মহলের কাছে আমি জানতে চাই,কি জবাব দিব আমি সেই শিশুটিকে?
কেন ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হলো তার মনে?
কেন একটি বাড়ন্ত স্বপ্নকে দ্বিধাগ্রস্ত করা হলো?৩রা ডিসেম্বর ২০১৬ সারাদেশব্যাপী মেডিকেল টেকনোলজিস্টরা কালোব্যাজ ধারণ করবে এবং দিনটিকে সাদা এপ্রোন কলঙ্কিত ও নিষ্পাপ ছাত্র-ছাত্রীদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ হিসেবে "ন্যাশনাল মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট ডে" হিসেবে পালন করবার জোড়ালো আবেদন জানাচ্ছি সবাইকে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪১