..........................................
পথজার্নালঃ 'মা তোর বদনখানি মলিন হলে'
--মাহমুদ টোকন
..........................................
মা'র বয়েস হয়েছে। আমার লক্ষ্মী দেবির মতো দেখতে মা'র মুখে এখন বলিরেখা, তবুও মা সুন্দর! ফোন দিলেই কাঁদে, আকুল হয়ে ওঠে সন্তানের জন্য... আমি কোনো শব্দ করি না, মুখে কথা থাকে না। চোখ জ্বালা করে! কানেও কম শোনেন কিছুটা কিন্তু প্রতিটি কথায় মমতার ফল্গুধারা! কাল রাতেও ফোনে মা'র কান্না, আমার শব্দহীন অশ্রুজল! আমার দুঃসময়ে মা'র কাছে যাই না, মাকে ব্যথিত মুখ দেখাতে ভালো লাগে না। চোখের গভীর থেকে মা খুঁজে পেতে পারেন ভেতরের যন্ত্রনা। চোখ তুলে তাকাতে পারি না!
আমার ভালো কিছু থাকলে(আছে কি-না জানি না)সেটি মা-বাবার থেকেই পেয়েছি। চারপাশের পরিজন থেকে পেয়েছি। অন্যকে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা করা, কাউকে আঘাত না করা, ধৈর্য, সহ্যক্ষমতা এবং সর্বপরী কল্যাণচিন্তা এসব তো তাদের থেকেই পেয়েছি! কখনও তাদের কথা শুনেছি, দেখে শিখেছি, উপলব্দি করেছি। আমার দুটি উপন্যাস- মাটির স্বর্গ এবং রক্তফুলের দিন বইয়ে যে মা'র উপস্থিতি তাতে মা'র কথাই উঠে এসেছে। কখনও ইচ্ছায়, কখনও একেবারেই অজান্তে!অজস্র শ্লোক, বচন(খনা ও অন্যদের) জানেন মা!কথায় কথায় তার চমৎকার ব্যবহারও করতেন!সেগুলো নিয়েই একটি উপন্যাস লেখার ইচ্ছে রয়েছে।
জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে মা, ভালোবাসতে জানলে কষ্ট অনিবার্য, মা-ই তার বিভিন্ন শ্লোকে বলতেন। মা'কে ছাড়া একটিদিন জীবনে কল্পনাও করিনি! আজ কতো সহজে মাকে ছেড়ে থাকি, খুব কাছে থাকলেও দেখতে যেতে পারি না, এর গ্লানি শুধু আমিই জানি! মাকে ছাড়া সত্যিকি থাকা যায়?
একবার বাড়িতে মামী, মামাতো বোনেরা এলো, আমার শোবার জায়গা হলো বাবার সঙ্গে। আমি শীতের সে দীর্ঘ রাত্রিটি আমাদের সেমি-দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে বসে কাটাই। আরেকবার দীর্ঘদিন আমাকে হাসপাতালে থাকতে হয়েছিলো ১০-১২ বছর বয়েসে। আমি চাচ্ছিলাম মা থাকবেন আমার সাথে, কিন্তু সেটি সম্ভব ছিলো না।বড়দা' ছিলো। সেই রাতে মা ছাড়া আমি এতোটাই ইমোশনাল হয়ে পরেছিলাম যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আত্মহত্যা করবো ৪তলা থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাতে বেড থেকে নেমে বারান্দার শেষ প্রান্তে চলে আসি। বড়দা' ফ্লোরে বিছানা পেতে অঘোরে ঘুমুচ্ছে। সে তখন সংবাদ পত্রিকায় কাজ করে। ঝাঁপ দেবার আগে আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। ডূকরে কেঁদে উঠলাম। পাশের বেড থেকে উঠে এলেন এক তরুণী। ২৫-৩০ বছর বয়েস। কী হয়েছে, কেনো কাঁদছি সব জেনে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, ধরে রুমে নিয়ে গেলেন। তারপর নিজের রুম থেকে কিছু চকোলেট, ফল এনে দিলেন। তিনিও মা। হাসপাতালে ছিলেন তার শিশুকণ্যাকে নিয়ে। আজও তার কোথা মনে পড়ে।মায়েরা এরকমই, ঠিক মায়ের মতো। প্রচলিত কোনো ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন দিয়ে এর গভীরতার সন্ধান মেলে না। মা-তো মা-ই। বুক জুড়ে, রক্তে!
-মাহমুদ টোকন
২০এপ্রিল২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:২৭