তখন ২০০৭ এর মার্চ মাস। প্রথম পেশাগত পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ করে ছুটি কাটিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরেছি। বাসা থেকে তখনকার জিপিআরএস সক্ষম ক্যামেরা ফোন সিমেন্স এম -৬৫ কিনে নিয়ে আসি। এসেই জানতে পারলাম আমার কয়েকজন জুনিয়র আর ব্যাচমেট বছরের শুরু থেকে মিগ-৩৩ নামক চ্যাটিং সফটওয়্যার মোবাইলে ব্যবহার করছে। তাদের আবার একটা কমিউনিটিও তৈরি হয়েছে। আমি ২০০৪ সাল থেকে সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ইয়াহু সার্চ ইঞ্জিনের চ্যাটরুম গুলোতে ঢু মারতাম। আর কোন ইনফরমেশন দরকার হলে সংশ্লিষ্ট চ্যাটরুমে প্রশ্ন করলে এ্যাডমিন প্যানেল তার উত্তর দিতো। আর উত্তর না জানা থাকলে রিডাইরেক্ট করে সংশ্লিষ্ট রুমে নিয়ে যেতো। তাছাড়া আমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকা আমার বড়ভাইয়ের সাথেও মেসেঞ্জারে চ্যাট করতাম। মাঝে মাঝে একটু বেজে বেজে ভয়েস চ্যাট করা যেতো; তা না হলে টেক্সট চ্যাটিং। সূতরাং মোবাইলে চ্যাটিং এর অপশন আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হলো। নতুন কিছু বিস্ময়কর মনে হবারই কথা।
যাইহোক, আমি দ্রুত মিগ কমিউনিতে ঢুকে পড়লাম। মিগ হয়ে উঠলো আড্ডা, আনন্দ, যোগাযোগ, আবেগ, ভালোবাসার নতুন যায়গা। তখন যেহেতু উচ্চপ্রান্তিক মোবাইলের সংখ্যা কম ছিলো আর ইন্টারনেট নিয়ে মানুষের ধারণাও কম ছিলো তাই শিক্ষিত কমিউনিটি আর ক্যাম্পাসগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো মিগ চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম। দিনগুলো ছিলো আনন্দের। আনন্দে সময়ন কাটানোর একটা নতুন জায়গা। একটা সিম দিয়ে একটা আইডি খোলা যেতো। আমি বাড়ির সবগুলো সিম দিয়ে প্রায় দশটার মতো আইডি খুলে ফেললাম। আইডি খোলার সুবিধা ছিলো, একটা আইডি খুললে মাদার আইডিতে তিনদিনের ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যেত আর সম্ভবতঃ বিশটা ফ্রি এসএমএস গিফট পাওয়া যেত। আর অনেকগুলো আইডি থেকে আলাদা আলাদাভাবে লগইন করা যেত। কোন একটা চ্যাটরুমে ঢুকে সেখানের লগইনকৃত যেকোন মেম্বারের সাথে প্রাইভেট চ্যাট অথবা গ্রুপেও চ্যাট করা যেতো। কেউ ভুল করলে তাকে কয়েকজন মেম্বার মিলে কিক করা যেতো। বা অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ ঢুকলে কয়েকটা আইডি একসাথে কিক করলে গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া যেতো।
মিগের চ্যাটের দিনগুলোর অনেক স্মৃতি রয়েছে। আমার এক বন্ধুর রিলেশন ব্রেকআপ হওয়ার পর মিগে ইন্দোনেশিয়ান মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব করে ফেললো। তাদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট হতো। সে ইন্দোনেশিয়ান ভাষার বেশকিছু শব্দও আয়ত্ত করে ফেললো। আমরা তাকে কসমিক লাভার বলে ডাকতাম। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু জুনিয়র ফ্রেন্ডও হয়ে যায়। তখন মিগটায় একটা ভুবন হয়ে যায়। এখনও মিগের কিছু বন্ধু রয়ে গেছে। তাদের সাথে কথা হলে পুরনো স্মৃতিগুলো হাতড়ে ফিরি। তখনো ফিরে যাই আমার জীবনের সোনালী দিনগুলোতে।
২০০৮ সালে ফেসবুক আইডি খুলি বন্ধুদের মারফতে। শুরুতে উইন্ডোস ছাড়া ফেসবুক ব্যবহার করা যেতোনা। ফেসবুক এদেশে তখনও পপুলার হয়নি আর ব্যান্ডউইথের মন্থর গতি এবং আকাশচুম্বি দামের কারণে পিসিতে ব্যবহার করে মজা পাওয়া যেতোনা। ২০০৯ সালে ক্যাম্পাসকেন্দ্রিক ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকলো। আর মুঠোফোনেও লিমিটেডভাবে ব্যবহার শুরু হলো। সবকিছু সত্ত্বেও ২০১০ এর শেষ পর্যন্ত মিগেই বুদ হয়ে ছিলাম। সময়ের উদ্বর্তনে ক্রমশঃ মিগ জৌলুস হারিয়ে ফেললো আর ফেসবুকের আগ্রাসন শুরু হলো। আমার জীবন থেকেও মিগ হারিয়ে গেল। তবুও মিগ -৩৩ এর স্মৃতিগুলো আমার জীবনে অমলিন থেকে যাবে চিরকাল।
চ্যাটরুমে ঢুকে সেখানের লগইনকৃত যেকোন মেম্বারের সাথে প্রাইভেট চ্যাট অথবা গ্রুপেও চ্যাট করা যেতো। কেউ ভুল করলে তাকে কয়েকজন মেম্বার মিলে কিক করা যেতো। বা অনাকাঙ্ক্ষিত কেউ ঢুকলে কয়েকটা আইডি একসাথে কিক করলে গ্রুপ থেকে বের করে দেওয়া যেতো।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:২৮