আজকের বিশ্বে এখন পর্যন্ত মানসিক অসুস্থতা একটা স্টিগমা। এটা নিয়ে কথা বলাই লজ্জাস্কর একটা ব্যপার। আর তৃতীয় বিশ্বের আমাদের মতো দরিদ্র দেশগুলোতে এটা রীতিমতো একটা পাপ। উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন স্তরের নারীপুরুষ থেকে শুরু করে সেলেব্রেটিরা পর্যন্ত মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। সর্বশেষ ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের সাথে দীর্ঘ সংগ্রাম করে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তম ব্যান্ড লিনকিন পার্কের ভোকাল, লিরিসিস্ট, সুরকার চেস্টার বেনিংটন ২০১৭ সালের জুলাই মাসে আত্মহত্যা করেন। এর আগে ক্রিস কর্ণেল আত্মহত্যা করেন। ১৫- ৪৫ বছরের মধ্যে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা, যার একমাত্র কারণ মানসিক সমস্যা। ইউএসএতে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোননা কোন সময় ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে ভুগেন। আমাদের দেশে সঠিকভাবে স্টাডি হলে সংখ্যাটা খুব কম হবেনা। এদেশে প্রতিবছর ১৫ হাজার নারীপুরুষ আত্মহত্যা করে, যার প্রধান কারণ মানসিক সমস্যা। কিন্তু আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। মৃত্যু ছাড়া পৃথিবীর সকল সমস্যায় সমাধানযোগ্য। মানসিক সমস্যার পরিসংখ্যান অতি দীর্ঘ এবং জটিল। আজ আর সেদিকে না যাই।
আমি আজ আমার মানসিক সমস্যা নিয়ে কিছু কথা বলতে এসেছি। আমি আমার ৩৫ বছরের জীবনের ২১ বছর যাবৎ বাইপোলার -২ নামক মানসিক রোগের সাথে যু্দ্ধ করে বেঁচে আছি। মাত্র ৩০ মিনিট আগেও মনে হচ্ছিলো এই অসহ্য যন্ত্রণাবিদ্ধ জীবন নিয়ে আর কতোকাল যুদ্ধ করবো! মস্তিষ্কে প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছিলো। সবকিছু শূণ্য লাগছিলো। প্রচন্ড বিষণ্নতা কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিলো আমায়। এরকম অনুভূতি হামেশাই হয়। তবুও বেঁচে থাকি নতুন ভোরের প্রত্যাশা নিয়ে। আমি কখনোই রণে ভঙ্গ দিবোনা। শেষ নিঃশ্বাস অবধি যুদ্ধ করে যাবো। মৃত্যুর আগে কখনোই মরতে চাইনা একবারের জন্যেও। আমি জানি এবং হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি একজন মানুষ কোন অবস্থায় আত্মহত্যা করে। যখন প্যান্ডোরার বাক্সের শেষ আশাটুকুও নিভে যায় তখন সবাই তা নিতে পারেনা। মানসিক সমস্যাগ্রস্থ একটা বড় অংশের নরনারী আত্মহত্যা করে একসময় এই অবস্থায়। আমি নিজেও প্রতিনিয়ত এইরকম অনুভূতির মুখোমুখি হোই। কিন্তু প্রতিটি দিনকে নতুন দিন আর প্রতিটি যুদ্ধকে নতুন যুদ্ধ ভেবে, অতীতের অর্জনের জন্যে স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা, কিছুটা আশা নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বেঁচে থাকি; কখনোবা কৃত্তিমভাবে ঔষধের দ্বারা নিজের সব অনুভূতি আর চেতনার জগৎকে ভোঁতা করে।
আমার সমস্যার সূত্রপাত একদম বয়সঃন্ধির শুরু থেকে। তখন বয়স মাত্র চৌদ্দ ছুঁই ছুঁই করে। তার আগে বলে নেই বাইপোলার মুড ডিসর্ডারে আত্মহত্যা আর মাদকাসক্তির হার অন্যসকল মানসিক রোগের চেয়ে বেশি। বাইপোলার ডিসর্ডারে ১৫-২০ শতাংশ নরনারী আত্মহত্যা করে আর ৫০-৬০ শতাংশ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৫-৮ গুণ বেশি আর হৃদরোগের ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি। বাইপোলার মুড ডিসর্ডারে আক্রান্তরা সাধারণ মানুষের তুলনায় কমপক্ষে দশবছর কম বাঁচে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পূর্বপুরুষ আক্রান্ত হবার ইতিহাস থাকে। আমি ডায়াবেটিসে গত ৫ বছর ধরে আক্রান্ত। কিন্তু মাদক আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি, এজন্যে স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করি। আমার যে প্রকারভেদ - বাইপোলার মুড ডিসর্ডার টাইপ -২, সেটাতেই আত্মহত্যার হার বেশি। একবার সবকিছু শূণ্য হয়ে গেলে ক্যালকুলেটেড আত্মহত্যার চেষ্টা করি। কিন্তু স্রষ্টার ইচ্ছেতে বেশকিছু শারীরিক ক্ষতির মধ্য দিয়ে হলেও বেঁচে যায়। এখন আমি আমার নিজের জীবনকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি শত কষ্টের মাঝেও।
বাইপোলার ডিসর্ডার -২ তে থাকে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন, হাইপোম্যানিক এবং মিক্সড এপিসোড। সবাই আত্মহত্যা করে ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের সময়। হাইপোম্যানিক এপিসোডে অনেকে বিভিন্ন উপসর্গের সাথে ক্রিয়েটিভ হয়ে যায়। কেউ কেউ এই সময়টাতে অনেককিছু ক্রিয়েট করতে পারে। একবার আমার সাইকোথেরাপিস্ট বলেন, " আপনিতো যুদ্ধ করে অনেককিছুই অর্জন করেছেন যা অনেকের কাছে স্বপ্নের মতো। বিউটিফুল মাইন্ডের জন ন্যাশ যদি পারেন তবে আপনি কেন পারবেন না?" কথাগুলো আমাকে খুব আন্দোলিত করে। যুদ্ধ করি যাতে মস্তিষ্কের নতুন নিউরাল পাথওয়ে সৃষ্টি হয় আর আমি একটু ভালোভাবে বাঁচতে পারি। আজ এ পর্যন্তই। যারা মানসিক সমস্যার সাথে যুদ্ধ করছেন, তাদের প্রতি শুভকামনা, দোয়া এবং ভালবাসা রইলো। এর পরের পর্বগুলোতে আরো বিশদ আলোচনা থাকবে আশাকরি।
আজকের বিশ্বে এখন পর্যন্ত মানসিক অসুস্থতা একটা স্টিগমা। এটা নিয়ে কথা বলাই লজ্জাস্কর একটা ব্যপার। আর তৃতীয় বিশ্বের আমাদের মতো দরিদ্র দেশগুলোতে এটা রীতিমতো একটা পাপ। উন্নত দেশগুলোর বিভিন্ন স্তরের নারীপুরুষ থেকে শুরু করে সেলেব্রেটিরা পর্যন্ত মানসিক সমস্যা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছেন। সর্বশেষ ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের সাথে দীর্ঘ সংগ্রাম করে পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় এবং তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়তম ব্যান্ড লিনকিন পার্কের ভোকাল, লিরিসিস্ট, সুরকার চেস্টার বেনিংটন ২০১৭ সালের জুলাই মাসে আত্মহত্যা করেন। এর আগে ক্রিস কর্ণেল আত্মহত্যা করেন। ১৫- ৪৫ বছরের মধ্যে মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা, যার একমাত্র কারণ মানসিক সমস্যা। ইউএসএতে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোননা কোন সময় ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনে ভুগেন। আমাদের দেশে সঠিকভাবে স্টাডি হলে সংখ্যাটা খুব কম হবেনা। এদেশে প্রতিবছর ১৫ হাজার নারীপুরুষ আত্মহত্যা করে, যার প্রধান কারণ মানসিক সমস্যা। কিন্তু আত্মহত্যা কোন সমাধান নয়। মৃত্যু ছাড়া পৃথিবীর সকল সমস্যায় সমাধানযোগ্য। মানসিক সমস্যার পরিসংখ্যান অতি দীর্ঘ এবং জটিল। আজ আর সেদিকে না যাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৫১