

রবার্ট কিয়োসাকি একজন আমেরিকান ইনভেস্টর, বিজনেস ম্যান, সেল্ফ-হেল্প অথর এবং মোটিভেশনাল স্পিকার (ঠিকঠাকভাবে বাংলা করতে না পারায় দু:খিত)। রিচ ড্যাড ব্র্যাণ্ডের আন্ডারে প্রকাশিত রিচ ড্যাড পুওর ড্যাড বইটির জন্য উনি সর্বাধিক বিখ্যাত। এই রিচ ড্যাড সিরিজে উনি ১৫ টি বই লিখেছেন যার সবগুলো মিলে ২৬ মিলিয়নেরও বেশি কপি বিক্রি হয়েছে। বই ছাড়াও তিনি ইয়াহু ফিন্যান্সের একজন নিয়মিত কলামিস্ট যার অবস্থান ফিন্যান্সের এক্সপার্ট সেকশনে।
তিনি বই ছাড়াও ভিডিও সিডি, অডিওটেপ এবং গেমসের মাধ্যমে মানুষকে ফিন্যান্সিয়াল নলেজ দিয়ে থাকেন। তার সেমিনার এবং প্রোগ্রামগুলো বিশ্বজুড়ে খুবই জনপ্রিয়। যদিও উনি একজন ব্যবসায়ী কিন্তু তার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে তিনি একজন শিক্ষক এবং উনি মানুষকে শেখাতে ভালবাসেন। তার শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বিশ্বের অসংখ্য মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি/স্বাধীনতা অর্জন করেছে এবং অধিকতর ভাল আর্থিক জীবন-যাপন করছে। তার রচিত বইগুলো টাকা এবং জীবন সম্পর্কে যেকোন মানুষের জ্ঞানের ভাণ্ডার খুলে দেয়।
উনি যে শিক্ষায় মানুষকে শিক্ষিত করতে চান সে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উনি নিজে আজ একজন অত্যন্ত সফল ব্যক্তি এবং উনি মন থেকে চান যেন পৃথিবীর সব মানুষ তার মত করেই সাফল্যের শিখরে আরোহণ করতে পারে। আর এজন্যই এত বড় মাপের একজন ব্যবসায়ী হয়েও তিনি মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
২০০৭ সালে আমেরিকার আবাসন ব্যবসার মোগল ডোনাল্ড ট্রাম্প (উনি নিজে একটি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানির মালিক) এবং কিয়োসাকি যৌথভাবে একটি বই লেখেন। বইটি অত্যন্ত চমৎকার এবং বইটিতে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে এই দুই ব্যক্তির সরাসরি উপদেশ উঠে এসেছে।

বইটিতে একটি অধ্যায় আছে এই নামে : why do you recommend network marketing

এ বিষয়ে কিয়োসাকি এবং ট্রাম্প দুজনেই তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আমি আজ কিয়োসাকির অভিমত এর বাংলা অনুবাদ করছি।
----------------------------------------------------------------------------------
যখন আমি প্রথম নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা সম্পর্কে শুনেছিলাম তখন আমি এর বিরুদ্ধে ছিলাম। আমি এর সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছিলাম। কিন্তু যখন আমি খুব গভীরভাবে চিন্তা করলাম ব্যবসাটা নিয়ে তখন আমি এই ব্যবসার মধ্যে এমন কিছু বিষয় লক্ষ্য করলাম যেটা খুব কম ব্যবসাতেই আছে। মূলত এই ব্যবসার কিছু চমৎকার অ্যাডভান্টেজ আছে যা সত্যিই অতুলনীয়।
জীবনের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য মূলত শিক্ষা, বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা এবং ব্যক্তিগত চরিত্রের ওপর বহুলাংশে নির্ভরশীল। বেশিরভাগ নেটওয়ার্ক মার্কেটিং কোম্পানি এইসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর ওপর তাদের পরিবেশকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
দু:খের সাথে বলতে হয় যে বেশিরভাগ স্কুলই ছাত্রছাত্রীদেরকে ই এবং এস কোয়াড্রেন্টের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলে। যদি আপনি ঐ কোয়াড্রেন্টগুলোতেই আপনার জীবন কাটিয়ে দিতে চান তবে সেটা নিতান্তই আপনার ইচ্ছে। বেশিরভাগ এমবিএ প্রোগ্রামে শিক্ষার্থীদের মূলত কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডে উচ্চ বেতনের চাকুরির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদেরকে ই কোয়াড্রেন্টের অন্তর্ভুক্ত করে গড়ে তোলা হয়, কখনই বি কোয়াড্রেন্টের কোন শিক্ষা দেয়া হয় না।


তাহলে যদি আপনাকে ই বা এস কোয়াড্রেন্টের জন্য শিক্ষা দেয়া হয়ে থাকে
এবং আপনি পরবর্তীতে সেই কোয়াড্রেন্ট পরিবর্তন করতে চান তবে আপনি কি করবেন? আপনি যদি বি কোয়াড্রেন্টে যেতে চান তবে আপনার কি করা উচিৎ? বি কোয়াড্রেন্টে যাবার জন্য যে শিক্ষা দরকার সেটা আপনি কোথা থেকে পেতে পারেন? এক্ষেত্রেই আমি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসার জন্য সুপারিশ করব। আমি তাদেরকেই এই নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ইন্ডাষ্ট্রিতে প্রবেশ করতে বলব যারা নিজেদের জীবনে পরিবর্তন আনতে চায় এবং বি কোয়াড্রেন্টে সফলতা লাভের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং মনোভাব অর্জন করতে চায়।
একজন ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা হওয়া এবং বি কোয়াড্রেন্টের ব্যবসা শুরু করা চাট্টিখানি কথা নয়। আমার মতে, একজন মানুষ জীবনে যতগুলো চ্যালেঞ্জ স্বেচ্ছায় গ্রহণ করতে পারে, বি কোয়াড্রেন্টের ব্যবসা গড়ে তোলা তার মধ্যে অন্যতম। বেশিরভাগ মানুষই ই বা এস কোয়াড্রেন্টে নিজেদের জীবন কাটিয়ে দেয় কারণ ঐ কোয়াড্রেন্ট দুটোতে কাজ করা বি কোয়াড্রেন্ট অপেক্ষা অনেক সহজ। এ ধরনের মানুষেরা এজন্যই বলে,'যদি বি কোয়াড্রেন্ট ব্যবসা সহজ হত তবে সবাই বি কোয়াড্রেন্টের ব্যবসা শুরু করত।'
ব্যক্তিগতভাবে আমাকে দ্বিধা, সংশয়, লজ্জা এবং প্রত্যাখ্যাত হওয়ার ভয় কিভাবে দূর করতে হয় সেটা শিখতে হয়েছিল। পাশাপাশি আমি এটাও শিখেছিলাম যে কিভাবে ব্যর্থ হবার পরও আমি নিজেকে টেনে তুলতে পারি এবং পুনরায় সামনে এগিয়ে যেতে পারি। যদি একজন মানুষ বি কোয়াড্রেন্টের ব্যবসায় সফলতা লাভ করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই যে বিষয়গুলো আমি একটু আগে উল্লেখ করলাম সে বিষয়গুলো শিখতে হবে। বি কোয়াড্রেন্টের ব্যবসা বলতে কেবলমাত্র আমি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং বোঝাচ্ছিনা, হতে পারে সেটা কোন ফ্র্যাঞ্চাইস ব্যবসা বা নিজস্ব কোম্পানি শুরু করার প্রক্রিয়া।
বি কোয়াড্রেন্টে সফল হবার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে নেতৃত্বের দক্ষতা। আপনি কি কর্মসাধনের উদ্দেশ্যে নিজস্ব ভয়কে জয় করতে প্রস্তুত? পাশাপাশি আপনার সাথে যারা কাজ করবে তাদের ভয়ও কি আপনি দূর করতে পারবেন? এ দক্ষতাটা আমি ম্যারিন কর্পোরেশন থেকে শিখেছি। একজন ম্যারিন অফিসারের জন্য এটা অবশ্য কর্তব্য ছিল যে তার পুরো টিমকে যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে যাবার জন্য নেতৃত্ব দিতে হবে, যদিও এটা সেই অফিসার সহ সকলেই জানত যে এগিয়ে গেলে মৃত্যুও হতে পারে।
আমি এস কোয়াড্রেন্টের এমন অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং বিশেষজ্ঞকে দেখেছি যারা বড় কিছু করতে চায় কিন্তু নেতৃত্বের গুণের অভাবে সেটা করতে পারেনা। কেউই তাদেরকে নেতা হিসেবে অনুসরণ করতে চায়না। কর্মীরা তাদের নেতাকে বিশ্বাস করেনা অথবা নেতারা ঠিকভাবে তাদের কর্মীদের এগিয়ে যাবার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারেনা।
আগেই বলেছি যে, ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে বি কোয়াড্রেন্টের ব্যবসা হল এমন একটি ব্যবসা যেখানে মালিকের অধীনে কমপক্ষে ৫০০ কর্মচারী কাজ করে। আর এজন্যই বি কোয়াড্রেন্টের ব্যবসায় নেতৃত্বদানের ক্ষমতা অত্যন্ত জরুরী।
আপনি এইরকম একটা ব্যবসা কোথায় পাবেন যে ব্যবসা আপনাকে আপনার ব্যবসা সফলভাবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক শিক্ষা এবং পাশাপাশি ব্যক্তিগত উন্নয়নমূলক শিক্ষা প্রদান করবে? এর উত্তর হচ্ছে : নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসা।
যেহেতু বি কোয়াড্রেন্টের ব্যবসা গড়ে তোলা সহজ কাজ নয় তাই নিজেকে একবার প্রশ্ন করুন : 'বি কোয়াড্রেন্টের ব্যবসা গড়ে তোলার জন্য সকল দক্ষতা কি আমার রয়েছে? আমি কি আমার কমফোর্ট জোনের বাইরে এসে কাজ করতে পারব?(অর্থাৎ আরাম-আয়েশ ত্যাগ করে কাজে মনোনিবেশ করতে পারব?) আমি কি আমার নেতাদের নেতৃত্ব মেনে চলতে পারব এবং পাশাপাশি আমার সহযোগীদের নেতৃত্ব দিতে পারব? আমার ভেতরে কি এমন একজন মানুষ রয়েছে যে সত্যই খুব ধনী হতে চায়?'
যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হ্যাঁ হয় তবে একটি নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসায় যোগ দিন যাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর ব্যবস্থা রয়েছে। আমি সেই কোম্পানির পণ্য বা মার্কেটিং প্ল্যানের ওপর গুরুত্ব দেবনা। বরঞ্চ কোম্পানির প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উপর বেশি জোর দেব যে প্রশিক্ষণ আপনাকে সফল ব্যবসা গড়ে তুলতে সর্বদাই সহায়তা করবে।
নেটওয়ার্ক মার্কেটিং ব্যবসাকে আমি বি কোয়াড্রেন্ট ব্যবসা বলি কারণ এর মধ্যে বি কোয়াড্রেন্ট ব্যবসার পাঁচটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলো হল :
১. Leverage (লিভারেজ) : আমি অন্য মানুষকে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তুলতে পারব যাতে তারা আমার জন্য কাজ করতে পারে
২. Control (কন্ট্রোল) : আমি একটি নিরাপদ সিস্টেমের আওতায় কাজ করি যেখানে পুরো সিস্টেমটাই আমি নিজে নিয়ন্ত্রণ করি
৩. Creativity (ক্রিয়েটিভিটি) : ব্যবসাটি আমাকে সৃষ্টিশীল হতে সহায়তা করে। উপরন্তু আমি আমার নিজস্ব স্টাইল এবং ব্যক্তিগত মেধার বহি:প্রকাশ ঘটাতে পারি।
৪. Expandability (এক্সপান্ডেবিলিটি) : আমার ব্যবসা সময়ের সাথে সাথে বড় হতে পারে এবং আমাকে সীমাহীন আয়ের সুযোগ দিতে পারে।
৫. Predictability (প্রেডিক্টেবিলিটি) : আমার যা করা উচিৎ সেটা যদি আমি করি তবে সে অনুযায়ী আমার আয় নিশ্চিত। আমার সাফল্যের উপরই আমার ব্যবসা বড় হবে এবং আমার আয়ও সে অনুপাতে বাড়বে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১১ রাত ২:০০