চরমোনাইদের ভাবছিলাম যে, এরা বিদয়াতী, শিরকি হলেও কিছু কিছু মাথায় আক্কেল আছে এখন দেখছি বেয়াদব, মূর্খ, জাহিল, ভন্ড এবং প্রতারকও। এখন দেখছি এদের মাঝে জাহিলিয়াত ছাড়া আর কিছু নেই। এদের এতবড় ধৃষ্টতা হয় কি করে বলে, রাসূল স. পীর ছিলেন? পবিত্র কুরআনে যেখানে তাকেঁ রাসূল নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে একাধিক জায়গায়। সাহাবায়ে আজমাইন তাকে রাসূল স. নামে সম্বোধন করতেন। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘মুহাম্মদ রাসূল ছাড়া আর কিছুই নন’’। তাহলে আল্লাহ তাকেঁ রাসূল বলেছেন তারই বা কি হবে? মুহাম্মদ স. কে রাসূল বাদ দিয়ে পীর নামে ডাকলে কি তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে? আপনি বলতে চেয়েছেন, রাসূল স. পীর ছিলেন আর তিনি সাহাবায়ে কেরামদের মুরীদ করেছেন, যেটা পবিত্র কুরআনে বায়াত এর নামে এসেছে। বায়াত নিয়ে আপনি কতটুকু পড়াশুনা করেছেন? পীরের বায়াত ছাড়া অন্য কোথাও বায়াত দেখেছেন কিনা সন্দেহ রয়েছে! রাসূল স. যার ভিত্তিতে বায়াত গ্রহণ করেছেন আপনার পীর কি তার ভিত্তিতে বায়াত দিচ্ছেন, নিচ্ছেন? বায়াত করা রাসূল স. এর নির্দেশ বটে। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত পীর-মুরীদীর বাইয়াত সম্পুর্ণ বিদয়াত, যেমন বিদয়াত স্বয়ং পীর-মুরীদী। বাইয়াত দিতে হবে এবং বাইয়াত না দিয়ে মারা গলে জাহিলিয়াতের মৃত্যু হবে সহীহ হাদিস দ্বারা একথা প্রমাণিত সত্য। কিন্তু এই বায়াত দিতে সমস্ত উম্মাহকে শুধুমাত্র একজন আমীরুল মুমিনীন বা খলীফাকে আনুগত্য করার শপথের মাধ্যমে। যেমন নবী স. ইন্তকালের পর খলীফা নির্বাচনী সভায় উমর ফারুক রা. সর্বপত্রথম বাইয়াত করলেন আবু বকর রা. এর হাতে।
চিশতীয়া, কাদিরিয়া, নকশাবন্দীয়া, মুজাদ্দিদিয়া, ও মুহাম্মদীয়া তরীকায় বাইয়াত নেওয়ার বর্তমানকালে প্রচলিত এই সিলসিলা কোথা থেকে এলো? এ বাইয়াতের সাথে নবী করীম সা. সাহাবাদের বাইয়াতের সম্পর্ক কি? মিল কোথায়? মূলত: এটা হলো ইসলামের একটি ভাল কাজকে খারাপ ক্ষেত্রে ও খারাপ উদ্দেশ্য ব্যবহার করার মত ব্যাপার। আর এ কারণেই পীর মুরীদার ক্ষেত্রে হাতে হাত কিংবা পাগড়ী ধরে অথবা পাগড়ী ধরা লোকের গায়ে গা মিলিয়ে বায়াত করা সম্পূর্ণ বিদয়াত। আরো বড় বিদয়াত হলো, কুরআন বাদ দিয়ে বিভিন্ন পীরের বাতলানো তরীকার যিকির করা। আপনারা বায়াত কে বৈধ করার জন্য যে সমস্ত দলিল পেশ করেন তা হলো কুরআনের সূরা ফাতাহের ১০নং আয়াত যে আয়াতে বাইয়াতুর রিদওয়ান এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
বর্তমানে প্রচলিত পীর-মুরীদির বায়াত তথা তরীক্বার বায়াত এর কোন ভিত্তি নেই। রাসূল স. এর জিবদ্দশায় সাহাবায়ে কিরাম বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিলেন। কিন্ত তারা কেউ নিজের পক্ষে বায়াত নেন নি। তেমনি ভাবে মুসলিম জাতির খিলাফত ব্যবস্থা চলাকালীন সময়ে সাহাবায়ে কিরামগণ বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েন। তারাও কেউ বায়াত নেন নি। ইমাম আবু হানিফা র., ইমাম মালেক র. ইমাম শাফী র. ইমাম আহমদ হাম্বল র. ইমাম বুখারী র. ইমাম মুসলিম র. সহ কোন ইমাম তার অনুসারীদের থেকে বাইয়াত নিয়েছেন এর কোন প্রমাণ নেই।
কুরআন সুন্নাহর ভিতরে যত জায়গায় বায়াতের আলোনা রয়েছে তা কেবল মাত্র খলীফাতূল মুসলিমীনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। খলীফাতুল মুসলিমীন বিভিন্ন কাজের জন্য বায়াত নিতে পারেন, ইসলামের জন্য, বিশেষ কোন দায়িত্ব পালনের জন্য অথবা ব্যক্তিগত ইসলাহে নফসের জন্য ইত্যাদি। যেমন রাসূল স. বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজের জন্য বায়াত গ্রহন করেছেন। কিন্ত সাহাবায়ে কিরামগন বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েন কিন্ত তারা কি কোন বাইয়াত নিয়েছেন? না কোথাও তার প্রমান নেই। রাসূল স. এর মৃত্যুর পর আবু বকর রা. খলীফা হলেন। তাঁর কাছে লোকেরা বাইয়াত দিল। আবু বকর রা. খিলাফত চলাকালীন সময়ে কোন সাহাবী কি বাইয়াত নিয়েছিলেন ? না এরও কোন প্রমাণ নেই। এভাবে উমর, উসমান রা. সহ সকল খলীফার যুগে এই একই অবস্থা বিরাজমান ছিল। সে সময় ইসলাহে নফসের জন্য কোন পীর সাহেব ক্বেবলা বায়াত নেননি। কোন তরিকারও বায়াত নেননি। কারণ তারা নিম্মোক্ত হাদিস গুলো জানতেন।
হযরত আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত , রাসূল স. বলেছেন যদি একই সময়ে দুইজন খলীফা বায়াত গ্রহণ করে তাহলে দ্বিতীয় জনকে কতল (হত্যা) করে ফেল। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ থেকে নেয়া)
সহাবী আরফাজা রা. বলেন আমি রাসূলুল্লাহ কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, অচিরেই বিভিন্ন ধরণের নতুন নতুন বিশৃঙ্খলা ও কলহ-বিবাদের সৃষ্টি হবে। সুতারং যে ব্যক্তি এই উম্মতের ঐক্য ও সংহতির মধ্যে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে চায় এবং তাদের ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধারাতে চেষ্টা করে, তলোয়ার দ্বারা তোমরা তাকে শায়েস্তা কর। চাই সে যে-কেউ হোক না কেন। (সহিহ মুসলিম: ৪৯০২)
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা. বলেন, রাসূল স. বলেছেন, যেই ব্যক্তি ইমামের খলিফা() বাইয়াত করল এবং অন্তর হতে সেই বাইয়াতের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করল, সে যেন তার যথাসাধ্য আনুগত্য করে। এরপর যদি কোন ব্যক্তি প্রথম ইমামের মোকাবেলায় দাড়ায়, তখন তোমরা পরবর্তী দাবীদারের ঘার সংহার করে দাও। (মুসলীম: ৪৮৬২)
এ জাতীয় অন্তত বিশটি হাদিস পেশ করতে পারি। যেহেতু আলোচনা দীর্ঘ হবে তাই উল্লেখ করলাম না। জ্ঞানীরা এর থেকেই শিক্ষা নিবে আশা করি।
উপরোক্ত হাদীস গুলো থেকে বুঝা গেল যে, মুসলিমদের খলীফা হবেন একজন। একজন খলীফা থাকা অবস্থায় যদি আরেকজন খলীফা গজায় তাহলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাহ এর নির্দেশ মোতাবেক তার গর্দান উড়েয়ে দিতে হবে। সে যতবড় ব্যক্তিই হোক না কেন। এ কারণেই মুসলিম জাতির ইতিহাস পড়লে দেখা যায় যখনই দুই খলীফা বাইয়াত নেয়া শুরু করে তখনই এই হাদিসগুলোর উপর আমল করার জন্য উভয় গ্রুপ প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছে।
এদেশের পীর সাহবেগন মুরীদ বানাতে গিয়ে সাধারণ মসুলিমদের থেকে যে বাইয়াত নেন এবং পীরের কাছে মুরীদ হওয়া ফরজ বলেন, সে জন্য তারা কুরআন-হাদীসের ঐ দলিল গুলোই পেশ করেন। এখন আমার প্রশ্ন হলো যদি তরিকার পীর সাহেবগন কুরআন ও হাদীসের ঐ দলিলগুলো পীর মুরিদির জন্য ব্যবহার করে তাহলে আমার জিজ্ঞাসা হলো যে, একাধিক পীর হলে যে রাসূল স. প্রথম পীরকে বাদ দিয়ে বাকীদের হত্যা করতে বলেছেন এগুলোও কি আপনি পীর সাহেবদের বেলায় প্রয়োগ করবেন?
তাহলে আসুন! এদেশের সকল পীরদের কোন এক মাঠে একত্র করি, তারপর তাদের মধ্যে যে সর্বপ্রথম পীর হয়েছে তাকে বহাল রেখে অবশিষ্ট সকলের উপর রাসুল স. এর হাদিস কার্যকর করনার্থে তরবারী দ্বারা তাদের গর্দানগুলো উড়িয়ে দেই। তখন আপনার পীর সাহেবগন ও আপনারা বলবেন যে, এই হত্যার নির্দেশ যে খলীফার জন্য দেওয়া হয়েছে সেটা আমাদের পীর সাহেবদের খলীফার কথা বলা হয়নি। বরং ওটা মুসলিমদের রাষ্ট্রীয় খলীফার জন্য প্রযোজ্য। ওহ! তাহলে হত্যা দেখলে বাইয়াতের হাদীস চলে যায় রাষ্ট্রীয় খলীফার জন্য। আর হালুয়া-রুটি ও গদী দেখলে তখন বায়াতের হাদীস চলে যায় পীর সাহেবের জন্য। আফসোস আপনাদের ইলমের জন্য, আফসোস হাদীস বিকৃতির জন্য, আফসোস মুসলিম জাতির খিলাফত ব্যবস্থাকে ছিনতাই করার জন্য। মূলত: মুসলিম জাতির একক নেতৃত্ত্বের প্রতিক খিলাফত ব্যবস্থাকে ইহুদী-খৃষ্টানরা ধংস করে দিয়ে নিজেরা পোপতন্ত্র চালূ করেছে, এখন দুনিয়ার সকল খৃষ্টানরা একজন পোপের নেতৃত্বে চলে। কিন্তু ওরা দেখল যে, তারা যদিও খিলাফত ব্যবস্থাকে ধংস করেছে কিন্তু খিলাফত-বাইয়াত সম্পর্কীয় যে আয়াত ও হাদিস রয়েছে তা তো মুছে ফেল সম্ভব হয় নি। তাই যদি মুসলিমরা ঐ আয়াত হাদীসগুলোর প্রতি উদ্বুদ্ধ হয়ে আবার খিলাফত ব্যবস্থা পুন:বহাল করে গোটা মুসলিম জাতিকে এক খলীফার অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘ইমাম ঢাল স্বরুপ তাঁর অধীনে মুসলিমরা যুদ্ধ করবে’ এই হাদিসের উপর আমল করা শুরু করে তাহলে দুনিয়ার কাফির-মুশরিক, হিন্দু-বৌদ্ধ, ইহুদী-খৃষ্টানরা পালানোর জায়গাও খুজেঁ পাবে না।
সে জন্য কুরআন-হাদীসে বর্ণিত খিলাফত-বাইয়াত কে পীর সাহেবদের ভিতর ঢুকিয়ে দিয়ে খিলাফত প্রতিষ্ঠার পথকে চিরস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত করা হয়েছে। আর সেই চক্রান্ত বাস্তবায়ন করছেন তরিকার পীর-মাশায়েখগন। তাইতো দেখি যখন তরিকতপন্থি মুহাদ্দিসগনে বাইয়াতেরর হাদীস পড়ান তখন তারা ছাত্রদেরকে উপদেশ প্রদান করেন যে, তোমরা ফারেগ হয়ে (লেখাপড়া শেষ করে) কোন হক্কানী পীরের হাতে হাত দিয়ে বাই’আত দিবা। এইভাবে একটা বিভ্রান্তির রঙীন গ্লাস চোখে লগিয়ে দেয়। এরপর ঐ ছাত্ররা আবার যখন শিক্ষক হয় তখন তাদের ছাত্রদের কে একইভাবে বিভ্রান্তির রঙীন গ্লাস পরিধঅন করিয়ে দে। এভাবেই খিলাফত-বাইআতের আয়াত ও হাদীসগুলোকে ছিনতাই করে দেয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৪৭