যারা প্রথম পর্বটি পড়েননি তারা প্রথম পর্বটি পড়ে দেখতে পারেন। নতুন বিনিয়োগকারীদের প্রথম প্রশ্নই হচ্ছে কোন শেয়ার কিনব?মজার ব্যাপার হচ্ছে এর সঠিক উত্তর আপনার কাছেই! কিভাবে? কারণ কোন শেয়ার আপনার জন্য উপযোগী তা আপনার চেয়ে ভাল কে জানবে! আপনার প্রশ্ন হতে পারে আমি কিভাবে বুঝব কোন শেয়ার আমার জন্য উপযোগী? হ্যাঁ এ ব্যাপারে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করতেই পোস্টের অবতারনা। এবার আলোচনায় যাওয়া যাক। আপনি জানেন কি আমাদের পুজিবাজারে কি কি সিকিউরিটি আছে? জেনে নেই তাহলে। আমাদের শেয়ার বাজারের সিকিউরিটি কে ২০ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা- ১) ব্যাংক ২) বিনিয়োগ ৩) বীমা ৪) প্রকৌশল ৫) খাদ্য ৬)জালানি ও শক্তি ৭) ঔষধ ও রসায়ন ৮)কাগজ ও মুদ্রণ ৯) সেবা ১০) পাট ১১) টেক্সটাইল ১২)সিমেন্ট১৩)আইটী ১৪)সিরামিক ১৫) আর্থিক প্রতিষ্ঠান ১৬) টেলিকম ১৭) ভ্রমন ও পর্যটন ১৮) বন্ড ১৯) চামড়া ও আনুষঙ্গিক ২০) বিবিধ। যে সব শেয়ার কে উপরের কোন ক্যাটাগরি তে ফেলা যায় না তাদের বিবিধতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় । এখন বন্ড সম্পর্কে বলা যাক। বন্ড হচ্ছে এক প্রকার ঋণপত্র । ঋণপত্র বলতে কোনো কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তার আর্থিক প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে জনগণ তথা পুজিবাজার হতে বা বিশেষ কোন প্রতিষ্ঠান থেকে নিদিষ্ট সুদের হারে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য যে ঋণ নিয়ে থাকে এ ধরনেরঋণ শেয়ার কে ঋণপত্র বলে। সাধারন শেয়ার ও ঋণপত্রের মধ্যে মুল পার্থক্য হচ্ছে সাধারন শেয়ার এ আপনি লাভ নাও পেতে পারেন কম্পানি লোকসান দিলে লাভ পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না আবার কম্পানি লাভ করলেও কোম্পানি প্রয়োজন বোধে আপনাকে লভ্যাংশ বন্টন নাও করতে পারে কিন্তু ঋণপত্রে লাভ বা সুদ নিশ্চিত । ঋণপত্র ও বিভিন্ন ধরনের হয়। বন্ড ও এর একটা প্রকার। বন্ডওবিভিন্ন ধরণের হতে পারে যেমন স্বল্পমেয়াদী দীর্ঘমেয়াদি মেয়াদবিহীন এবং এটি স্টক একচেঞ্জ তালিকাভুক্ত হতে পারে নাও পারে। আমাদের পুজিবাজারে ৩টা বন্ড আছে। যথা- ১) আইবিবিএল মুদারাবা পারপিউচুয়াল বন্ড। এটি ইসলামী ব্যাংকের ও মেয়াদ বিহীন শরিয়া সম্মত বন্ড। এ বন্ডের অর্থ বিনিয়োগ করে যা আয় হয় তা হতে বন্ডের উপর লাভের হার নির্ধারিত হয়। এছাড়াও ব্যাংক ঘোষিত বাৎসরিক লভ্যাংশের ২.৫% বন্ড মালিক কে দেয়া হবে। ২০০৮ ২০০৯ ও ২০১০ সালে এ বন্ডের উপর যথাক্রমে ১৩.২৫% ,১২.৩৫% ও১২.৩৫% হারে লাভ দেয়া হয়েছে। এর ফেসভেলু ১০০০ টাকা প্রতি শেয়ার এবং বন্ড এর মূল্যমান বেশিরভাগ ভাগ সময়ই ১০০০ টাকার নিচে থাকে। ফলে প্রকৃত লাভ আরও বেশি হবে। ২) এ সি আই ২০% কনভারটেবল জিরো কুপন বন্ড। জিরো কুপন বন্ড হল এক ধরনের বন্ড যা সুদ বহন করেনা কিন্তু ক্রেতা কেনার সময়ই এটা ডিস্কাউন্ট বা ফেসভেলুর কম মূল্যে কিনে। পরিপক্ক হওয়ার সময় আসতে আসতে এর মূল্য বেড়ে গেলে ক্রেতা বিক্রয় করে লাভবান হতে পারে। দাম না বাড়লেও মেয়াদ শেষে ইসুয়ার বা কোম্পানি এই বন্ডের পুরো মূল্য ক্রেতাকে ফেরত দেয়। এসিআই বন্ড টি ১০০০ টাকা মূল্য এর ৫ টি শেয়ার লট করে ৩৭৫০ টাকায় ছেড়ে ছিল অর্থাৎ ফেসভেলু ৫০০০ টাকার বন্ড ৩৭৫০ টাকায় ছাড়া হয়েছিল। ২০%কনভারটেবল মানে হচ্ছে প্রতি বছর বন্ড এর ৫টি শেয়ার হতে ১টী শেয়ার এ সি আই এর শেয়ার এ পরিনত হবে। এর বর্তমান বাজার মূল্য ৭৬০- ৭৬২ টাকা। ৩) ব্র্যাক ব্যাংক ২৫% কনভারটেবল বন্ড। সবশেষে আসি মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কে । অনেকে এটিকে শেয়ার মনে করেন। না এটী কোন কোম্পানির শেয়ার নয়। বিশেষ ভাবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত কোন প্রতিষ্ঠান কয়েকটি কম্পানির শেয়ারকে একত্র করে যে একক ইউনিট বা অর্থ ভাণ্ডার করে যে ফান্ড তৈরি করে তাকে মিউচুয়াল ফান্ড বলে। এরা শুধুমাত্র শেয়ার এ বিনিয়োগ করে। সোজা কথায় এরা আপনার আমার মতই বিভিন্ন শেয়ার এ বিনিয়োগ করে। বছর শেষে লাভ হলে এরা শেয়ার হোল্ডার দের লাভ দেয়। মিউচুয়াল ফান্ড ই পুজি বাজার এর প্রান। বাহিরের দেশে খাত ওয়ারি মিউচুয়াল ফান্ড আছে। যেমন টেক্সটাইল বা সিমেন্ট খাতের মিউচুয়াল ফান্ড শুধুমাত্র টেক্সটাইল বা সিমেন্ট খাতেই বিনিয়োগ করবে। অন্য কোন খাতে বিনিয়োগ করতে পারবে না। আমাদের পুজিবাজার ছোটো বলে আমাদের মিউচুয়াল ফান্ড গুলো সব শেয়ার ই বিনিয়োগ করতে পারে। বিস্তারিত ত হল। ত আপনি কি কিনবেন? শেয়ার , মিউচুয়াল ফান্ড না বন্ড? বন্ড ত বলেই দিলাম নিজে হিসাব করে দেখুন এ লাভে আপনার চলবে কিনা? বেশি লাভ চাইলে বন্ডে ঝুঁকার দরকার নাই। নতুন ও কম টাকার বিনিয়োগ কারী ও যারা তেমন বেশি ঝুকি নিতে চান না তারা মিউচুয়াল ফান্ড এ বিনিয়োগ করতে পারেন। এছাড়াও মিউচুয়াল ফান্ড এর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর লাভের ৮০% লভ্যাংশ হিসেবে বিনিয়োগ কারী দের দিয়ে দিতে হয়। এখানে শেয়ার এর মত লাভ রেখে দেবার নিয়ম নাই।যাদের কম পুঁজি ও দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ইচ্ছা আছে তারা ভাল কোন মিউচুয়াল ফান্ড এ বিনিয়োগ করতে পারেন। এতে শেয়ার এর তুলনায় ঝুঁকি কম থাকে। এটি বেশ নিরাপদ ও কারন দক্ষ ও অভিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজার রাই মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করেন। যিনি যত বেশি দক্ষ ম্যানেজার তার মিউচুয়াল ফান্ড তত বেশি লাভ করবে। মিউচুয়াল ফান্ড কিনতে ই. পি. এস ও পি. ই. রেশিও না দেখে নেট অ্যাসেট ভ্যালু দেখে শেয়ার ক্রয় করা উচিত । বিশেষজ্ঞ দের মতে প্রত্যেক বিনিয়োগ কারীর পোর্টফলিওতে একটি বা ২টী মিউচুয়াল ফান্ড এর শেয়ার থাকা ভাল। এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলা দরকার যারা ইসলাম সম্মত ভাবে বিনিয়োগ করতে চান তারা ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়া অন্য মিউচুয়াল ফান্ড এ বিনিয়োগ করতে পারবেন না। আজ এ পর্যন্তই । পরবর্তী পোস্টে আমি মৌল ভিত্তি শেয়ার সম্পর্কে আলোচনা করব। প্রিয় ব্লগার! কেমন লাগলো আজকের আলোচনা? আপনি কি কিছু জানতে পেরেছেন? আপনার মতামত- কি জানতে চান তা আমাকে জানান। আমি চেষ্টা করব আপনাকে সাহায্য করতে। ঋণপত্র নিয়ে বিস্তারিত লিখতে চেয়েছিলাম কিন্তু কলেবর বাড়বে ও আমাদের পুজিবাজারে এসবের আলোচনা বাহুল্য বিধায় লিখলাম না । যারা জানতে চান আমাকে জানাবেন। যারা পুজিবাজার এ বিনিয়োগ করতে চান তারা অবশ্যই পুজিবাজার সম্পর্কে জেনে আসবেন । অজ্ঞদের পুজিবাজার কক্ষনো ক্ষমা করে না। যে কোন কিছু করার পূর্বে তা সম্পর্কে ধারনা নেয়া উচিত। ব্যতিক্রম শুধু পুজিবাজার এ। ৬ মাস ১বছরে টাকা ডাবল হয় এমন হুজুগে অনেকেই মার্কেটে এসেছেন এবং ১০ টাকার যোগ্য নয় এমন শেয়ার ও ৩০০-৪০০ টাকা দিয়ে নিয়েছেন। তারা সাময়িক ভাবে লাভবান হলেও এর পরিনতি হয়েছে ভয়াবহ যার প্রভাব পুরো মার্কেটেই পড়েছে। মানুষ বাজারে গেলে মাছ তরি তরকারীও ন্যায্য দামে কিনে ১০ টাকার আলু বড়জোর ১২ টাকায় কিনে কিন্তু৪০ টাকায় ত কিনবেনা । অথচ ১০ টাকার যোগ্য নয় এমন শেয়ার ও ৩০০-৪০০ টাকায় মানুষ কিনেছে। অনেক কথাই হল। যারা এ লেখাটি পড়ছেন ও সামুর সব ব্লগার কে নববর্ষের শুভেচ্ছা। আনন্দে ও নিরাপদে কাটুক আপনার ও আপনার পরিবারের - বছরের প্রতিটা দিন। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১:৩২