somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাস্তিকের ক্ষমতায় এলে কি করতে পারে?

২৯ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবীর অনেকগুলো দেশকে দীর্ঘ সময় শাসন করেছিলেন এইসব শাসকেরা।
কি দিয়েছেন তারা পৃথিবীকে? লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা পড়েছে এদের হাতে, মানবাধিকার হয়েছে লংঘিত। এদেশগুলোর অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়েছিল। দেশগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল বহির্বিশ্ব থেকে। ঠান্ডা স্নায়ু যুদ্ধে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল পৃথিবী।
একটি কাজ তারা ভালমতেই সেরেছেন, তা হল দেশগুলো থেকে ধর্মকে বিতাড়িত করা।

মংগোলিয়া লামাবাদ বা লামাইজমকে একেবারেই মুছে দেয়া হয়েছিল। বুদ্ধের সেক্যুলার ধর্মও তাদের মনপুত: হয়নি। স্তালিনের সাগরেদ মংগোলিয়া একনায়কের হাতে মারা পড়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ।
খোদ স্তালিনের হাতে কত লক্ষ মানুষ পড়েছে বা সাইবেরিয়ায় নির্বাসিত হয়েছিল, পৃথিবী প্রথম জানতে পারে সদ্য প্রয়াত লেখক আলেক্সান্ডার সোলজনৎস্কি লেখা থেকে।
চীনের বিরুদ্ধে এখনো মানবাধিকার লংঘন কিংবা বাকস্বাধীনতা হরনের অভিযোগ করা হয়।
বল্গে প্রায়শ:ই তালেবানদের নিয়ে ব্যংগ বিদ্রুপ করেন, বলেন মানবাধিকার লংঘনের কথা। কিন্তু এর আগে নাস্তিক শাসকেরা আফগানিস্তানের কি হাল করেছিলেন তা ভুলে যান। মোহাম্মদ দাউদকে হত্যা করে যখন সেখানে কমিউন্যিজম প্রতিষ্ঠার আয়োজন চলে তখন প্রথম ধাক্কাতেই মেরে ফেলা হয় ১১ হাজার রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে।
একলক্ষ রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক নেতৃত্ব কাবুল ছেড়ে পালিয়ে যায়, যার ফলে সবক্ষেত্রেই শূন্যতার সৃষ্টি হয়। ধর্মকে মুছে ফেলার আয়োজন চলে। দাড়ি রাখা নিষিদ্ধ করা হয়, বোরখা পড়া নিষিদ্ধ করা হয়, মসজিদের সংখ্যা কমিয়ে আনা হয়। সর্বত্র সৃষ্টি করা হয় অরাজক পরিস্থিতির।
১৯৭৮ থেকে ১৯৭৯ সালে আরো মারা হয় ২৭ হাজার মানুষকে, যার অধিকাংশ ছিলেন মোল্লা কিংবা গোত্র প্রধান। আমিরিকান রাষ্ট্রদুতকেও মারতে দ্বিধা করেনি এরা।

শুধুমাত্র তালেবানরাই কি বুদ্ধমুর্তি ধংস করেছিল, নাস্তিকেরাও তাদের শাসনামলে কম্বোডিয়ায় বুদ্ধমুর্তি ধংস করেছিল। প্রার্থনা করলে কিংবা ধর্মীয় আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করলে সাথে সাথে মেরে ফেলা হত। মুসলমানদেরকে বাধ্য করা হত শুয়োরের মাংস খেতে। এদের হাতে ৮০% খ্রিষ্টান মারা পড়ে। মারা পড়েন অনেক ইমাম, পাদ্রী।

উত্তর কোরিয়ার এখনো মুক্তি ঘটেনি অর্ধ উন্মাদ একনায়কের হাত থেকে।
জনগন যখন না খেয়ে মরছে, এ তখন জৌলুষময় জীবন যাপনে ব্যস্ত। এদেশটির রয়েছে পৃথিবীর নিকৃষ্টতম মানবাধিকার লংঘনের ইতিহাস। এর বাবার বিরুদ্ধে রয়েছে অন্যদেশে বোমাবাজির মত সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ।

ছোটকালে শুনতাম ইউরোপের একমাত্র মুসলিম দেশ হল গিয়ে আলবেনিয়া। অথচ এটির ছিল পৃথিবীর প্রথম এবং একমাত্র নাস্তিক দেশ।
পৃথিবীর প্রথম নাস্তিক দেশটির আয়ুস্কাল ছিল ১৯৬৭সাল থেকে ১৯৯১সাল পর্যন্ত। সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয় আনোয়ার হোজ্জা, আলবেনিয়াকে পৃথিবীর প্রথম নাস্তিক দেশ (এথ্যায়িস্ট স্ট্যাট) সরকারি ভাবে হিসাবে ঘোষনা দেন।
সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পদ দখল করে নেয়া হয়া, ধর্মীয় নেতাদের বিদেশি শক্তিগুলোর সাথে সহযোগীতা বন্ধ করে দেয়া হয়। বিভিন্নভাবে তাদেরকে আক্রমনের লক্ষ্যবস্তু করা হয়। কাউকে পাঠানো হয় জেলে, কাউকে বাধ্য করা হয় কলকারখানায় কাজ করতে।
এসবকিছুর পরও ধর্মীয়গোস্টিকে দমনে ব্যর্থ হয়ে হোজ্জার পার্টি শিক্ষাপ্রতিস্ঠানে নাস্তিকীয় শিক্ষা প্রচারে মনোনিবশন করে।
রমজানের মত পবিত্রদিনগুলোতে তারা হারাম খাদ্য পরিবেশন করা শুরু করে কারখানা এবং শিক্ষা প্রতিস্ঠান গুলোতে। খাবার গ্রহনে অস্বীকৃতি জানালে তাদেরকে লান্ছ্বিত করা হত। ১৯৬৭সালের ফেব্রুয়ারীতে আরো আক্রমনাত্বক পন্হা নেয় হয় নাস্তিকীয় শিক্ষা প্রচার করার জন্য।
যদিও হোজ্জা বলেন যে তিনি যে কোন সন্ত্রাসী পন্হা অবলম্বনের বিরোধী, তিনি চান বুঝিয়ে শুনিয়ে ধর্মের বিরুদ্ধে যে কোন একশন গ্রহনের শক্ত ভিত গঠন করা হোক।
এক্ষেত্রে তরুনদেরকে বেছে নেয়া হয়।
২,১৮৯টি মসজিদ এবং চার্চ বন্ধ করে দেয়া হয়। নাস্তিকবাদ অফিসিয়াল পলিসিতে পরিনত হয়। ধর্মীয় নামের শহর, নগরগুলোকে নতুন নাম দেয়া হয়, ব্যক্তির নামও বদলে ফেলা হয়। ১৯৮২ মানুষের নামের ডিকশনারি বের করা হয়। যার মধ্যে ৩,০০০ সেক্যুলার নাম ছিল। এরা ক্ষমতায় আসার সময় ৩০০ প্রিষ্ট ছিলেন, যাদের মধ্যে মাত্র ৩০জন প্রানে বাচতে পেরেছিলেন।
সমস্ত ধর্মীয় আচার অনুস্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৬৭সাল থেকে ১৯৯১সাল পর্যন্ত এই নাস্তিক দেশটিতে যারা জন্ম নিয়েছিল তারা ধর্মের ব্যপারে কিছুই জানত না। তাই তাই তারা ছিল হয় নাস্তিক নয়ত এ্যাগোনস্টিক।
আনোয়ার হোজ্জাকে চিত্রায়িত করা হয় এমন একজন জিনিয়সা হিসাবে যিনি কিনা সংস্কৃতি, অর্থনীতি, সামরিক ইত্যাদি জীবনের প্রতিটি নৈতিক উপদেশ দান করে গেছেন। প্রত্যেকটা স্কুলের বইতে সে যে বিষয়ের উপরই হোক না কেন তার উক্তি উদ্ধৃত করা হত। . এক আলবেনিয়ান তাই আক্ষেপ করে বলেছিলেন ফিজিক্সের ক্লাসে মধ্যাকর্ষ শক্তির সুত্রটির জন্য কৃতিত্বটা পেতেন হোজ্জা যা ছিল কিনা নিউটনের পাওনা। আলবেনিয়া সিক্রেট পুলিশ এজেন্সি কে জি মত সবধরনের দমনমুলক পন্হা অবলম্বন করত। আলবেনিয়ার প্রতি তিনজন নাগরিকের একজনকে হয়ত লেবার ক্যাম্পে কাটাতে হত কিংবা সম্মুখীন হতে হত আলবেনিয়া সিক্রেট পুলিশ অফিসারদের জেরার। ভিন্ন মতালম্বীদের দমনের জন্য সিস্টেমেটিক সব পন্হা অবলম্বন করা হত। চাকুরিচ্যুত করা, লেবার ক্যাম্পে আটকে এবং প্রায়শ:ই মৃত্যদন্ড দেয়া। সরকারী কর্মকর্তাদের সরকারি সফর ছাড়া কাউকে বিদেশ যেতে দেওয়া হত না। পশ্চিমা নাচ নিষিদ্ধ ছিল, আর্টকে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছিল সোসালিস্ট রিয়ালিজমের মধ্যে।

১৯৮১সালে হোজ্জা অনেক পার্টির নেতা এবং সরকারী কর্মকর্তাকে শুলে চড়ান। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শেহু এইসময় আত্মহত্যা করেন অন্তর্দলীয় কোন্দলের কারনে। এটি ব্যপকভাবে বিস্বাস করা হয় যে তাকে হত্যা করা হয়েছিল।

১৯৮৫সালে হোজ্জা যখন মারা যান আলবেনিয়া তখন সারা বিশ্বের কাছে একটি নিষিদ্ধ দেশ, যারা বহির্বিশ্বের কাছে থেকে বিচ্ছিন্ন। তার শাসনামলের প্রায় সবটুকু জুড়েই আলবেনিয়া ছিল ইউরোপের সবচাইতে গরীব দেশ।

১৯৯০ সালে হোজ্জার প্রতিষ্ঠিত একদলীয় শাসনের অবসান ঘটে। ১৯৯২ সালে পরাজিত হয় সোসালিস্ট পার্টি।

আজ আলবেনিয়া হোজ্জা লিগ্যাসীর সামান্য কিছুই অবশিস্ট আছে। ধর্মীয় স্বাধীনতা জনগনকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আরও মজার ব্যপার আলবেনিয়া এখন ওআইসির সদস্য।
শেষ করছি একটি জোক দিয়ে।

এক বিদেশী গেছে মস্কোতে বেড়াতে।
সবজায়গায় কড়াকড়িতে বেচারা ত্যক্ত বিরক্ত। সবকিছুতে নজরদাড়ি।
হোটেলে ফিরে মন হালকা করার জন্য বেচারা টিভি খুলে বসল।
টিভি খুলতেই লেলিনের বক্তৃতা। অন্য চ্যানেল টিপলে, ওখানে স্তালিনের স্তুতি।
একের পর এক চ্যানেলে একই যন্ত্রনা। শেষ একটি চ্যানেল টিপলে পর্দায় কেজিবির মুর্তি ভেসে উঠল, হাতে পিস্তল তাক করা। ভাংগা ইংরেজীতে বিদেশীর দিকে তাকিয়ে বলল, আরেকবার চ্যানেল বদলিয়েছ ত গুলি মেরে মাথার খুলি উড়িয়ে ফেলব।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১০ সকাল ৮:৩৯
৩৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×