জানালার ধারের ইজিচেয়ারটায় গা এলিয়ে বসে আছে কেউ একজন! মানুষটার কোলের কাছে কালো মলাটের একটা পেটমোটা বই। ভ্রু কুঁচকে গভীর মনযোগে সে চোখ রেখেছে বইয়ের পাতায়। সকালের নরম রোদ জানালা ডিঙ্গিয়ে তার শরীরে লেপ্টে আছে বাটা হলুদের মত।
‘সকাল দেখতে অনেক সুন্দর হয়।‘ যেন স্পষ্ট শুনলাম সে বলছে আমাকে!
ধড়ফড় করে উঠে বসেছি বিছানায়! আধোঘুম চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ইজিচেয়ারটার দিকে। আদতে সেখানে কেউ নেই!...... তবে !
এইতো সেদিন,
লোকাল বাসটা এসে থামল শুক্রাবাদের মোড়ে। ভিড় ঠেলে আমি তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়েই হঠাৎ নজড়ে পরলো মানুষটা। মহা বিরক্তি ভাব নিয়ে এগিয়ে আসছে এদিকটাতেই, ‘আহ! সাবধানে! এতো অস্থির হলে চলে! তুমি আমার হাতটা ধরে নামোতো!’
বাড়িয়ে দেয়া হাত ধরতে যাবো এমনি সময় সম্বিত ফিড়ে পেলাম হেল্পার ছেলেটার ডাকে ‘আফা নামেন।‘
অকারন মন খারাপ নিয়ে জানি কেউ নেই তবু সেই চেনা মুখটাকে এক নজর খুঁজে পাবার আশায় চোখ রাখি চারপাশে। নাহ, ভীড় ঠেলে কেউ এগিয়ে এসে আমার লাল চুড়ি পরা হাতটা ধরে বলেনি, ‘নিজের খেয়াল রেখেছিলে তো!’
আমি ফুটপাথ ধরে এগিয়ে যাই পান্থপথের দিকে। আর আমার সাথে পা মিলিয়ে এগিয়ে চলে কালো ছায়াটা। আমি, কেবল আমিই টের পাই সে ছায়া নয়, আর কেউ। দুটো শাসন বারন চোখ আর একটা সরল ভালবাসা মন নিয়ে যে দেখেশুনে রাখছে আমায় আড়াল থেকে, সে।
আমি কি প্রেমে পড়েছি ?
এ কেমন প্রেম, যার অস্তিত্ব বলে কিছু নেই আমি তাকে ভেবে কাটিয়ে দিচ্ছি আমার দিন-কাল-মাস!
আদৌ কি মানুষটা আছে?
কে সে ?
কোথায় ?