তখন তার প্রেমকাল ছিলো ।
ছিলো ভার্সিটি ফাঁকি দেবার দিন ।
কিসের ক্লাস ? কিসের পড়াশোনা ? মেয়েটা অস্থির হয়ে ছুটে যেত সেই দেবদারু গাছটার নিচে। সেখানে লাল ইটের বাঁধানো বেদীতে বসে অপেক্ষা করে আছে কেও একজন। ছিপছিপে গড়নের লম্বা সেই মানুষটা, মাথা ভর্তি যার ঝাঁকরা চুল।
পৃথিবীর সব সুখ বুঝি ওই দেবদারুর পাতায় মাখা। ভাল লাগার অনুভূতি এতো তীব্র কেন!
মেয়ের ভালবাসতে ইচ্ছে করে আরো বেশি, আরও অনেক বেশি।
চুরি করা সময় বলে এবার বাড়ি ফেরার পালা । না ফেরার ইচ্ছেটাকে গলা টিপে ভর দুপুরের আধখালি বাসে উঠে যায় মেয়ে । খোলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে সেই মানুষ, তার চলে যাওয়া দেখবে বলে । মেয়ে জানে বাস ছেড়ে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে মানুষটা লাফিয়ে বাসে উঠবে। তার পাশে বসতে বসতে বলবে,’একা যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না । চল তোমায় বাসায় দিয়ে আসি।‘
পৃথিবীর সব সুখ বুঝি ওই ভরদুপুরের রোদে মিশে আছে। ভাল লাগার অনুভূতি এতো তীব্র কেন!
মেয়ে জানে তার আর কিচ্ছু চাই না, কিচ্ছু না ।
সেদিন শেষবারের মত দেখা হয়ে গেলো মানুষটার সাথে। দেখা হয়ে গেল , কথা ছিলো না তবু।
একটা ফুলের মত মেয়ে তার মানুষটার সাথে, খুব কাছে। ঠিক তেমনি, যেমনটি মেয়ে থাকতো সেই দেবদারুর বাঁধানো বেদীতে।
ফুলটাকে মেয়ে চেনে!
হ্যাঁ, ফুলটাকে মেয়ে চেনে!
ফুলও চেনে তাকে, জানে তাদের দুজনকে.........তবে ?
হিসেবের গড়মিলে ঠায় দাঁড়িয়ে মেয়ে তখন অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।
অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অপর প্রান্তের তারা দুজন। কেননা দেখা হয়ে গেল কথা ছিলো না তবু ।
হঠাত কি জানি কি হল, জলাতঙ্ক কুকুরের মত খেঁকিয়ে ওঠে ফুল, খাবলে ধরে সেই মানুষটার হাত। মেয়ের দিকে আঙুল তুলে বলতে থাকে, ’ ও একটা অনুভুতিহীন মানুষ, ভালোবাসতে যানে না। ওর কাছে যেও না তুমি ।ওর কাছে যেও না ।‘
ঠায় দাঁড়িয়ে মেয়ে । ভেতরে তার জলোচ্ছ্বাস। অসহ্য ব্যথায় দুমড়েমুচড়ে যায় তার পৃথিবী। মেয়ে তখন দুঃস্বপ্ন থেকে জেগে ওঠার তীব্র প্রতীক্ষায়।
সে অসহায়ের মত চোখে চোখ রাখে মানুষটার। না বলা প্রস্নের উত্তর খোঁজে সেথায় । কিন্তু এ অচেনা চোখজোড়া মেয়ে আগে কখনো কি দেখেছে ?
সেদিন শেষবারের মত কথা বলেছিল মানুষটা, ’চলে যাও ।‘
অনুভুতিহীন মানুষ বলেই অভিযোগ সব বাতাসে উড়িয়ে ফিরতি পথে চলে গ্যাছে মেয়ে।
তা না হলে যে সেদিন ঘৃণার তীব্রতায় পৃথিবীতে আগুন ধরে যেত!
এরপর দিন যায়,মাস যায়, বছর ঘুরে সেদিন আবার আসে। দিন শেষে রাতে মিলিয়ে যায়। ঘুরে ফিরে আরো একবার আসে । একটু একটু করে আবার ফুরায় পরের বছর আসবে বলে ।
তবু মেয়েটি ভালো থাকে, ভালো থাকে তার চারপাশ।
কেবল বুকের ভেতর বেঁচে থাকে একটা অনুভূতিহীন ১৯শে জুন ।