গত পোস্টে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কানাডা আসার জন্য দরকারি কিছু টিপস দিয়েছিলাম।
স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে যারা কানাডা আসতে চান তাদের জন্য কিছু টিপস
অনেক ব্লগার আমাকে মেইল করে কিংবা ব্লগে এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। তাই এইবার সবার কথা চিন্তা করে আরো কিছু টিপস দিচ্ছি।
১। আগে ঠিক করুন আপনি কি করতে যেতে যাচ্ছেন কানাডা। মাষ্টার্স নাকি ডিপ্লোমা? কয় বছরের কোর্স করতে যেতে চান। এখানে বলে রাখা ভাল যে ডিপ্লোমা কিংবা সার্টিফিকেট প্রোগ্রামের জন্য বাংলাদেশ থেকে ভিসা সাধারণত দেয়া হয় না। মূলত এগুলো লং প্রোগ্রাম নয় বলেই হয়তো এমন। তবে আপনি যদি মাষ্টার্স প্রোগ্রামের জন্য আসেন তাহলে ২ বছরের জন্য আসলেই ভাল। সাধারণত কানাডায় মাষ্টার্স ২ বছর মেয়াদী। আর তাই ভেবে চিন্তে ডিসিশন নিন।
২। এইবার আসি বিশ্ববিদ্যালয় / কলেজ নির্বাচন প্রসঙ্গে। এখানে আপনাকে অবশ্যই প্রভিন্স এবং শহর দুটোকেই প্রাধান্য দিতে হবে। তবে ১ টা কথা মাথায় রাখবেন যে হয়ত আপনি কোন প্রভিন্সেই আপনার মনের মত শতভাগ কিছু পাবেন না। হয়ত দেখা যাবে আপনি যেই সাবজেক্টে পড়তে যেতে চান সেই সাবজেক্টে পড়ার খরচ অনেক বেশি। কিংবা যেই প্রভিন্স এ যেতে চান সেখানে আপনার যাওয়ার ইচ্ছে নেই। তাই বলে হতাশ হবেন না। এসব নিয়ে চিন্তা না করাই ভাল।
http://uwaterloo.ca/canu/
এই ওয়েব সাইটিটি আমার অনেক কাজে দিয়েছিল। এখান থেকে কানাডার যত প্রভিন্স আর শহর আছে সব গুলোর লিস্ট পাবেন সাথে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় / কলেজ এর নাম আছে। একটা একটা করে দেখতে পারবেন।
৩। এই লিংকে আপনি পাবেন কানাডার সেরা বিশ্ববিদ্যালয় / কলেজ এর নাম।
http://www.4icu.org/ca/
৪। এইবার আসি বিশ্ববিদ্যালয় / কলেজ নির্বাচন এর পর কি করবেন সেই প্রসঙ্গে। যেই বিশ্ববিদ্যালয় / কলেজ নির্বাচন আপনি করেছেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় / কলেজ এর ওয়েব সাইটটি ভাল করে ঘাটুন। তারা কি কি চাচ্ছে আর আপনার কি কি আছে সব মিলিয়ে দেখুন। যদি কোন প্রশ্ন থেকে থাকে তাহলে তাদের সরাসরি ফোন করুন নয়তো মেইল করে জিজ্ঞেস করুন।
৫। এখানে বলে রাখা ভাল কানাডার বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় / কলেজ এখন IELTS , GMAT ২ টাই চাচ্ছে। আর এতে মিনিমাম স্কোর 6.50 চাচ্ছে তারা। কলেজ গুলোতেও এর ব্যতিক্রম নয়। জিম্যাটে ভাল স্কোর থাকা বাধ্যতামূলক। এর এসবে ভাল স্কোর থাকলে আপনি স্কলারশিপের জন্য আবেদন ও করতে পারেন।
৬। তবে আপনার ভাগ্য যদি ভাল হয় তাহলে আপনি IELTS , GMAT না করেও এ থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন। আর তাই এই সুবিধা আপনি পাবেন কি না তার জন্য আপনাকে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় / কলেজ এর ওয়েব সাইট আদ্যপান্ত ঘাটাঘাটি করতে হবে। এটা নির্ভর করবে আপনি বাংলাদেশের কোন প্রতিষ্ঠান থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন তার উপর।
৭। ধরে নিলাম আপনার বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন শেষ হয়েছে। এইবার আপনি এর পরের ধাপে। আপনি যেই প্রোগ্রাম নির্বাচন করেছেন সেই প্রোগ্রামের অ্যাডভাইজার / ডিনকে মেইল করুন। উনাদের জানান আপনার পড়ার আগ্রহের কথা। আমার নিজের অভিজ্ঞতার আলোক বলতে পারি তারা আপনার একটা মেইল পেয়েই যে উত্তর দিয়ে দিবে এমনটি ভাবা বোকামী। আপনি তাই তাদের একটা মেইল দেয়ার পর ২/৩ দিন অপেক্ষা করে আবার মেইল পাঠান। দেখা যাবে যে আপনি ২০ টা মেইল দিলে তারা আপনাকে ১ / ২ টা মেইলের উত্তর দিবে। তাদের কাছে মেইল করে আপনি উক্ত প্রোগ্রামের আদ্যপান্ত জেনে নিন। তারা আপনাকে তাদের সাধ্যমত চেষ্টা করে যাবেন।
৮। এইবারের ধাপ হচ্ছে অ্যাপ্লিকেশন প্রসেসিং। আপনার ইচ্ছে সামার (মে – আগস্ট) সেশন ধরার। আর আপনি যদি ডিসেম্বর / জানুয়ারিতে সব কাগজপত্র জমা দেন তাহলে ধরে নিন আপনি সামার সেশন ধরতে পারবেন না। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি আমিও সব প্রসেস করে জমা দিতে দিতে ডিসেম্বরের প্রায় পুরো সময়টা চলে গিয়েছিল। যদিও আমি আস্তে আস্তে করে পাঠাচ্ছিলাম তাদের। হাতে সব কাগজপত্র আসতে আমার দেরি হচ্ছিল। এর ফলে আমি সামার সেশন ধরতে পারি নি। তারা আমাকে অফার লেটার পাঠিয়েছিল ৩ মাস পর।
যাই হোক, কমপক্ষে ৬/৭ মাস আপনার হাতে রেখে তারপর সব কাগজপত্র পাঠান। মনে রাখবেন বাংলাদেশ থেকে ভিসা পেতে আপনার প্রায় ২ মাস সময় লাগবে। আর তাই অফার লেটার আপনার হাতে আসার ১ সপ্তাহের মধ্যেই ভিসার কাগজপত্র জমা দেয়াটা ভাল।
৯। এইবার আসি ভিসার পাওয়ার জন্য আপনি কোথায় যাবেন।
http://www.vfs-canada.com.bd/wheretoapply.aspx
এই ওয়েব সাইটে আপনি যাবতীয় তথ্য পাবেন। প্রয়োজনে তাদের ফোন করে কিংবা অফিসে যেয়ে বিস্তারিত জেনে আসুন। তারা আপনাকে লেটেস্ট তথ্য দিয়ে সহায়তা করবেন।
১০। কানাডাতে যদি আপনার কোন আত্মীয় বা ভাই / বোন কেউ থাকে তাহলে তাদেরকে আপনি স্পন্সর হিসেবে দেখাবেন না। এতে করে কানাডার ভিসা পাওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে যেতে পারে (নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে)।
১১। যিনি আপনাকে স্পন্সর করবেন উনার চাকরি / ব্যবসা সঙ্গক্রান্ত যাবতীয় তথ্য, জমি জমার হিসেব, ব্যাংক ব্যা্লেন্স, ব্যাংক স্টেটমেন্ট এসগুলো আপনার ভিসা প্রসেস করতে লাগবে। আপনার প্রোগ্রাম যদি ২ বছরের জন্য হয় তাহলে ১ বছরের ব্যাংক হিসেব দেখাতে হবে।
এ সম্পর্ক এ আরো যদি কিছু জানতে চান তাহলে উপরে উল্লেখিত ওয়েব সাইট থেকে তাদের ফোন করে বা নিজে যেয়ে তাদের সাথে কথা বলে আসতে পারেন।
১২। আমাকে অনেকই প্রশ্ন করেছেন কতদিন পর্যন্ত ব্যাংকে টাকা রাখতে হয়? আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি আমি ভিসা না পাওয়া অবধি রেখেছিলাম। কারণ ভিসা অফিস / এম্বেসি থেকে ইনকোয়ারি (মাঝে মাঝে) করা হয় সত্যি আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা আছে কি না জানার জন্য। আর তাই উক্ত ব্যাংক ম্যানেজারকে আগে থেকেই বলে রাখবেন আপনার বিষয়টি।
আজ আর নয়। হাত আর চলছে না!
আশা করি আপনারা এই পোস্ট পড়ে কিছুটা হলেও লাভবান হবেন।
বিঃদ্রঃ কানাডার সরকার প্রতিনিয়ত তাদের নিয়ম কানুন বদল করছে। আর তাই শুধু এই লেখার উপর ডিপেন্ড না করে লেটেস্ট তথ্যের জন্য তাদের ওয়েব সাইট নিয়মিত ভিজিট করার অনুরোধ রইলো। তাদের ওয়েব সাইট -
http://www.cic.gc.ca/