সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ সেশনজট লেগেই আছে। এর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা বেশ করুন বলে খবরের কাগজে খবর বেরিয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন কোন বিভাগে সেশনজট বেশি এবং কোন কোন বিভাগে সেশনজট কম বলে খবরে জানা যায়। এ যেনো ভানুমতির খেল্। রসিক লালের ভাষায় বললে বলতে হয়-এ যেনো ন্যাংটা বাচ্চাদের বালু দিয়ে ঘর বানিয়ে সংসার সংসার খেলার উৎসব, মন চাইলে খেললাম, মন না চাইলে ভেঙ্গে ফেললাম।
জানা যায় বিজ্ঞান অনুষদের মনোবিজ্ঞান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান বিভাগেই সবচে বেশি সেশনজট। বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মহোদয় তা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু তিনি সেশনজট ভেঙ্গেচুরে বিনাশ করতে পারার কথা বলেননি। বলেছেন সেশনজট কমিয়ে আনার কথা। সে বিষয়েও তাঁর অসহায় বক্তব্য শুনে মনে হয়, হায় খোদা আমরা কোন্ দেশে বাস করি।
মাত্র ছয় বছর বয়সী বিশ্ববিদ্যালয়ে এতো ভয়াভয় সেশনজট কল্পনাতীত। কেনো এমন হচ্ছে? দেখার কি কেউ নেই?
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কোনো ধনবান/উচ্চবিত্ত্ব লোকের সন্তান, কোনো বড় ব্যবসায়ী্র সন্তান, কোনো রাজনৈতিক নেতার সন্তান, কোনো উচ্চ মধ্যবিত্ত্বের সন্তান পড়াশোনা করে না। তারা পড়াশোনা করে বিদেশে, কেউ কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে চাষাভুষার সন্তান, গরিবের সন্তান, নিম্নবিত্ত্বের সন্তান, নিম্নমধ্যবিত্ত্বের সন্তান, মধ্যবিত্ত্বের সন্তান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০% ছাত্রছাত্রীই উল্লেখিত শ্রেণীর লোকদের সন্তান। তাদের অর্থের বড় অভাব। তাদের সন্তানরা যতো তাড়াতাড়ি কোর্স শেষ করে বেরুতে পারবে ততই তাদের জন্য মঙ্গল। তাদের সন্তানরা ততই তাড়াতাড়ি সংসারের হাল ধরতে পারবে।
সেশনজটের কারণ হিসাবে বলা হয়েছে-ক্লাস ও ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের উদাসীনতা ও গাফিলতি, নির্ধারিত সময়ে সেমিস্টার পরীক্ষা না নেয়া, পরীক্ষা না হওয়া, শিক্ষক স্বল্পতা, পরীক্ষার খাতা চুড়ান্ত মূল্যায়ন শেষে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিকট থেকে সময়মতো ফেরত না পাওয়া।
কারণগুলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় সেশনজটের ৯০%-এর জন্য কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষকগণই দায়ী। তারা নিয়মিতভাবে ক্লাস ও ক্লাস পরীক্ষা নেন না, নির্ধারিত সময়ে সেমিস্টার পরীক্ষা নেন না, প্রয়োজন মতো শিক্ষক নিয়োগ করেন না (শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের), একটু কষ্ট করে একটু বেশি সময় দিয়ে শিক্ষক ঘাটতির সমস্যাজনিত কাজগুলি সমাপ্ত করেন না (দেশপ্রেম থাকলে এবং সেবাব্রতী হলে কম লোক দিয়েই বেশি কাজ করা সম্ভব। কিন্তু দুর্ভাগ্য এদিকে কেউ নজর দেয়ার তাগিদ অনুভব করেন না। সবাই ইয়া নফসি ইয়া নফসি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন।), অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দ্বারা পরীক্ষার খাতা চুড়ান্ত মূল্যায়ন না করিয়ে নিজেরাই মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা করেন না।
মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষকগণ, ছাত্র নেতাগণ
আমরা হতভাগ্য অর্থাভাবী অভিভাবক আপনাদের নিকট করজোরে মিনতি করছি, এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সেশনজটমুক্ত করুন। আমরা জানি আপনারা ইচ্ছে করলেই সেশনজটমুক্ত করতে পারেন। আল্লাহ আপনাদের মঙ্গল করবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১০:০৫