আমি সাধারণত বই পড়ে বড়জোর নিজের মনোভাবটা প্রকাশ করি। বন্ধু বান্ধবরা বহুবার রিকুয়েস্ট করেছে আরেকটু সাজিয়ে গুছিয়ে রিভিউ লিখতে। অলসতাকে জয় করে সেটা করা হয়ে উঠেনি। তবুও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে রিভিউ লিখতে শুরু করেছিলাম একটা স্বার্থপর চিন্তা নিয়ে। আমি কেবলমাত্র নতুন লেখকদের বইয়ের রিভিউ গুছিয়ে লিখি।
আমার কাছে রিভিউর মানে হলো পাঠককে আকর্ষণ করা। আমার লেখায় যদি দুই একজন পাঠক আকর্ষিত হয়, ওটুকুই আমার কাছে রিভিউ লেখার পূর্ণতা। তাই আমি কেবলমাত্র সেইসব বইয়ের রিভিউই লিখি, যেসব বই আমার কাছে ভালো লাগে। যেসব বই ভালো লাগে না, সেসব বইয়ের রিভিউ লেখাকে সময়ের অপচয় মনে হয়।
লম্বা সময় থ্রিলারে ডুবে থাকার পর হুমায়ূন স্যারের বইয়ের কোন বিকল্পই নেই। আমি হুমায়ূন স্যারের অনেক বই পড়েছি। কোন কোন বই একাধিকবার করেও পড়েছি। তাঁর কোন বই পড়ে সাজিয়ে গুছিয়ে রিভিউ লিখিনি। কারণ, তাঁর বই সবাই পড়ে। নেহায়েত যে কোনদিন আউট বই পড়েনি, সেও স্যারের বই উল্টেপাল্টে দেখেছে। তাছাড়া অল্পকিছু (স্যারের লেখা মোট বইয়ের সং্খ্যার সাথে তুলনা করলে। উনার বই ২৮০+) মাস্টারপিস ছাড়া স্যারের বেশিরভাগ বইয়ের কাহিনি একই প্লটে, একই প্রেক্ষাপটে, একই গতিতে এগিয়ে গেছে। ফলে বইগুলি পড়ার সময় একটা মোহ, ঘোর, ভালোলাগা কাজ করলেও, পড়া শেষ করার পর তা বিশেষত্বহীন লাগে। উল্লেখ করার মত তেমন কিছুই খুঁজে পাই না তখন আর। তাই কিছু লেখাও হয় না তা নিয়ে।
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই - আত্মজীবনীমূলক বই। এতে চুয়ান্নটি ছোটবড় রচনা আছে।
উনার শেষ দিককার রংপেন্সিল, কাঠপেন্সিল, বলপয়েন্ট, ফাউন্টেনপেন, হিজিবিজি - টাইপ আত্মজীবনীমূলক লেখাগুলি আমার তেমন ভালো লাগেনি। ঘুরেফিরে একই কাহিনি যেন অনেকবার এসেছে। কিন্তু এই বইটা, খুব খুব চমৎকার। আসলে স্যারের আগের বইগুলি, সবই চমৎকার।
আগের বইগুলি, বিশেষ করে ওই সময়ের আত্মজীবনীগুলি আমার ভালো লাগার কারণ একজন - গুলতেকিন। উনার সাথেকার সময়টা, ওই পরিবারের বাচ্চাদের সাথের স্মৃতিগুলি আমাকে খুব নাড়া দেয়। আমার খুব ভালো লাগে। এই পরম মমতাময়ী মানসীকে নিয়ে স্যারের অনুভূতিগুলি আমাকে ছুঁয়ে গেছে। বার বার ছুঁয়ে গেছে।
আমি জানি, একজন সাধারণ পাঠিকা হয়ে তাঁর মত কারোর ব্যক্তিগত জীবনের দোষ ত্রুটি ধরে বর্ণনা করাটা আমার শোভা পায় না। তবুও কিছু ব্যাপার না বলে পারি না।
আমার মাথায় ধরে না তিনি কী করে, কেমন করে এতগুলি বছরের ভালোবাসা ছেড়ে দিলেন। খুব কষ্ট হয়। মাঝেমাঝে জানতে ইচ্ছে করে, কেমন লেগেছিল গুলতেকিন ম্যামের? এই অসহ্য কষ্ট কেমন করে সহ্য করেছিলেন তিনি?
যাকগে, এই বইটা অসম্ভব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে উনার ছোটবেলায় দেশের এমাথা থেকে ও মাথায় ঘুরে বেড়ানোর কাহিনি, ওসব এলাকার দারুণ সব বর্ণনা, খুবই চমৎকার লেগেছে।
আমেরিকা, আমেরিকার প্রকৃতি, আমেরিকানদের দৃষ্টিভঙ্গী, স্বভাব, এসবকিছুর বর্ণনা পড়েও খুব ভালো লেগেছে। দেশের প্রতি তাঁর প্রচন্ড ভালোবাসাও ছিল চোখে পড়ার মত।
হুমায়ূন আহমেদ পড়তে শুরু করলে অদ্ভুত কিছু অনুভূতি হয়। হুট করে জীবনের মানে খুঁজতে ইচ্ছে হয়। কিছু না বলা কথা বলতে ইচ্ছে হয়।
কিছু অজানাকে জানতে, কিছু পাগলামিকে প্রশ্রয় দিতে, বৃষ্টি-জোছনাকে উপভোগ করতে তো স্যারই শিখিয়ে গেছেন। এসবের জন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।
।
।
।
এই লেখাটা আমার অন্যান্য বইকথাগুলো থেকে একটু আলাদা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:০০