দেশের এই অবস্থায় বইয়ের পাঠপ্রতিক্রিয়া প্রকাশ করাটা আমার নিজেরই ভাল লাগছিল না। তবুও অশান্তি থেকে অল্প সময়ের ছুটিরও প্রয়োজন আছে। তাই বই ই ভরসা ঐসব সময়ে।
......বই নিয়ে কিছু কথা
থৃলার সাহিত্যে বিপ্লব আনার সাথে সাথে বাতিঘরের নাজিম উদ্দিন ভাই বেশি কিছু ইউনিক কাজ করছেন। তার মধ্যে এই নোভেলা বের করাটা সেরকম একটা কাজ। চমৎকার দুটি ছোট উপন্যাসিকা এক মলাটে … সত্যিই অন্যরকম আইডিয়া। তার উপরে আবার প্রচ্ছদ, বইয়ের দুই পিঠে দুই নোভেলার জন্য আলাদা আলাদা প্রচ্ছদ … বইটা উল্টে পাল্টে দেখলে একে একটা বই মনে হবে না। মনে হবে দুইটা বইই। বইয়ে এমনভাবে নোভেলা দুইটি সাজানো হয়েছে, যাতে মনে হবে এই বইয়ের কোন শেষ নেই।
নতুনদের জন্য প্লাটফর্ম হিসেবে বাতিঘরের এই পদক্ষেপ সত্যিই খুব চমৎকারভাবে কাজ করবে।
কেটজালকোয়াটল ও সৃষ্টিবিনাশ রহস্য
তানজীম রহমান
কাহিনি সংক্ষেপ
শুধু একটা খুন নয়-ধ্বংস হয়ে গেছে পুরো একটা বিশ্ব। সাধারণ কোনো গোয়েন্দা নয়, তদন্তে নেমেছে স্বয়ং সে বিশ্বের স্রষ্টা, দেবতা কেটজালকোয়াটল। সে জানে না এ তদন্ত তাকে নিয়ে যাবে অজানা ভুবনে, দাঁড় করাবে অকল্পনীয় বিপদের মুখোমুখি, দিতে বাধ্য করবে অসম্ভব সব পরীক্ষা। ধীরে ধীরে উন্মোচিত হবে দেবতা, দানব, জাদু আর মৃত্যুর আড়ালে লুকিয়ে থাকা ষড়যন্ত্রের জাল।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
কিংবদন্তি আর ফ্যান্টাসি; দুইটাতেই আমার খুব আগ্রহ। সাথে যদি মিথোলজি যোগ হয়, তাহলে তা আর বলার অপেক্ষাই রাখে না। মিথোলজি খুব পছন্দের টপিক হলেও খুচরো আর্টিকেল ছাড়া তেমন কিছু পড়া হয়নি। তাই বলা যায় মিথোলজি নিয়ে 'কেটজালকোয়াটল ও সৃষ্টিবিনাশ রহস্য' আমার পড়া প্রথম উপন্যাসিকা। এবং প্রথমটাই মিথোলজির প্রতি আমার আগ্রহ খুব বাড়িয়ে দিয়েছে।
রূপকথার গল্প বলতে আমরা কেবল বাচ্চাদের জন্য গল্পকে বুঝি। এই নোভেলাকে আমি রূপকথাই বলবো, যেটা মোটেও ছোটদের জন্য নয়। একজন বয়োপ্রাপ্ত থৃলারপ্রেমি এই রূপকথা পছন্দ করতে বাধ্য হবে।
ক্লাস ফোরে যখন পড়ি, তখন বিটিভিতে তমালিকার একটা নাটক দেখেছিলাম। যে জীবিত হয়েও মৃত্যুনদী পারি দিয়ে মৃত্যুপুরীতে গিয়েছিল। ওখানে মৃত্যুনদীর মাঝি আর মৃত্যুসম্রাটের সাথে দেখা হয়েছিল তার। কাহিনিটা ভালো করে মনে নাই আমার, কিন্তু তখন থেকেই এই বিষয়ে গল্প পড়ার খুব আকাঙ্খা জন্মেছিল। নোভেলাটা পড়ে সেই শখ অনেকটাই মিটেছে।
তানজীম রহমানের লেখায় মুগ্ধতা দিন দিন বাড়ছেই। ভিন্নধর্মী, নতুন আর সম্পূর্ণ অপরিচিত কিছু জগৎকে তিনি তার থৃলারের মাধ্যমে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। তাই ধন্যবাদটা তার বিশেষভাবে পাওনা। অনেক অনেক ধন্যবাদ তানজীম ভাই।
দিন শেষে
রবিন জামান খান
কাহিনি সংক্ষেপ
হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে এক রোগির মৃত্যুর পরই সক্রিয় হয়ে উঠলো একাধিক গোষ্ঠি। ভয়ঙ্কর মানুষগুলোর উদ্দেশ্য একদমই অজানা।বাধ্য হয়ে প্রাণ বাঁচাতে অজ্ঞাত একজনের সাহায্য নিতে হয় ডাক্তার তুলিকে। অজ্ঞাত সেই লোকের উদ্দেশ্যও অস্পষ্ট। কাকে বিশ্বাস করবে আর কার কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে সে জানে না। দিন শেষে, ক্ষমতা, লোভ, বিশ্বাসঘাতকতা আর প্রতিহিংসার পর কার উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়?
পাঠ প্রতিক্রিয়া
রবিন জামান ভাইয়ের বর্ণনাভঙ্গী চমৎকার। কিন্তু একই সিচুয়েশনের বর্ণনা দুজনের ভিউ থেকে দুইবার দেওয়ার দ্বিতীয়বার পড়তে বিরক্ত লেগেছে। অন্তত তুলি আর আফসারের দেখা হয়ে যাওয়ার পরের আফসারের বর্ণনাটুকু বাহুল্য মনে হয়েছে। আর তৃতীয়বার তানভীরের ভিউ থেকে কমন বর্ণনাটা রীতিমত বিরক্তিকর ঠেকছিল। আমি তো এখানে এসে বাদ দিয়ে দিয়ে পড়ছিলাম। মানে যে জায়গাগুলি আগেই পড়া হয়েছে, সেগুলো। আফসারের বর্ণনাটুকু তুলির সাথে দেখা হবার সাথে সাথে থেমে গেলে তানভীরেরটুকু আর বিরক্ত লাগতো না। কারণ এখানে আবার আনকমন ঘটনাও ছিল।
ফোর্টি এইট আওয়ার্স পড়ে খুব হতাশ হয়েছিলাম, কারণ প্রথম অধ্যায়েই কে খুনি, এবং সে কেন খুন করেছে, বুঝে ফেলেছিলাম। ফলে পুরোটা গল্পই আমাকে পড়তে হয়েছে নিতান্তই অনিচ্ছায়। শুধু এটা জানতে বইটা পড়ে গিয়েছিলাম, মারুফকে দায় থেকে মুক্ত করা হবে কীভাবে। চূড়ান্ত টুইস্টটা আমাকে মোটেও চমকাতে পারেনি।
কিন্তু এই দিনশেষে নোভেলায় সেটা খুব ভালো করেই পেরেছে। উপন্যাসের বোনকে ( নোভেলাকে উপন্যাসের ভাই না ধরে বোনই ধরলাম) পড়তে পড়তে মনেই হয়নি এমন একটা টুইস্ট আমার জন্য অপেক্ষা করছে। খুবই চমকিত হয়েছি। এবং শেষটা ভালো লেগেছে।
বই পরিচিতি
প্রচ্ছদ : ডিলান
পৃষ্ঠা: ১৭৬
মূল্য: ১৭০
প্রকাশনীঃ বাতিঘর প্রকাশনী
প্রকাশকালঃ জুন - ১৬
রেটিংঃ ৪/৫
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৫:৪১