আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিলো কিশের ভিত্তিতে? ধর্ম? ভাষা? অনেক চেতনাধারী আবার বলে ধর্মনিরপেক্ষতা নাকি আমাদের মুক্তিযুদ্ধর মুল চেতনা!
আমি ইতিহাসের ছাত্র এখনো শিখছি,আমাকে কি একটু বলবেন? কবে? কখন? কোথায় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের জন্য বাঙ্গালি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো? আমার জানা মতে নাই। দেশ স্বাধীন হবার পর আপনারা আপনাদের মনগড়া কিছু জিনিশ আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। আর এখনো সেই চেতনার গল্প শুনিয়ে আমাদের ঘুমপাড়িয়ে রেখেছেন।
৫২ এর ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের বাঙ্গালি জাতির মুক্তির প্রথম বীজ বপন বলা যায়! তাই ভাষা নিয়ে আন্দোলন করে আমরা স্বাধীন রাষ্ট্র যুক্তির খাতিরে বলাযায়।
৬ দফাকে বলা হয় বাঙ্গালি জাতির মুক্তির সনদ। সনদে কোথাও ধর্মের কথা বলা হয়েছে? আপনাদের ধর্মনিরপেক্ষতা তাহলে মুক্তিযুদ্ধের মুল চেতনা হলো কিভাবে??
অর্থনৈতিক শোষণ, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী কতৃক বিমাতা সুলভ আচরণ। বাঙ্গালি জাতি তখন এই বৈষম্য থেকে বাচার জন্য স্বায়ত্তশাসন চেয়েছিলো। সে দিন যদি শেখ মুজিবের দাবী বা স্বায়ত্তশাসন মেনে নিত পাকিস্তানিরা, দেশ আজও স্বাধীন হত না! হংকং,তাইওয়ান যেমন চীনের অধীনে আছে আমাদেরও পাকিস্তানের অধীনে থাকতে হতো! তখন ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক হত যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাইওয়ান,হংকং র বর্তমান সম্পর্ক যেমন তেমন। গুটিবাজি সম্পর্ক!
ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে আমাদের জনগনকে মুল বিষয় থেকে দূরে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ জন্মের পিছনে অর্থনৈতিক এবং সুশাসন ছিল মুল এবং একমাত্র উপজীব্য বিষয়। এবং ধনী-গরিব,সব শ্রেণীর লোক তার অধিকার পাবে এটাই মুক্তিযুদ্ধ র মুল চেতনা! ধর্মনিরপেক্ষতা না!
সেই অর্থনৈতিক মুক্তি,সুশাসন আমাদের নেতারা আমাদের না দিয়ে তারা নিজেদের পকেট ভরতে ব্যস্ত,নিজেরা ক্ষমতায় গেলে প্রভুসুলভ আচরন করে দেশের জনগনকে কৃতদাস মনে করে।
স্বাধীনতার মুল ভিত্তি অর্থনৈতিক মুক্তি,সুশাসন এই বিষয়গুলো দূরে রেখে শাসকগোষ্ঠী আমাদের ধর্মনিরপেক্ষতার এক খালি কলসি জনগনের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছে। জনগণ সেই খালি কলসি বাজাতে ব্যস্ত,ভুলেগেল আমরা কেন স্বাধীন হয়েছি। এই সুযোগে শাসকশ্রেণী নিজেদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশে সামান্য ইউপি মেম্বার নির্বাচনে যদি ১০-১৫ লাখ টাকা খরচ করে।(বাস্তবে আরও বেশি) তাহলে বুঝতে হবে ঐ পদে বসে ২০/৩০ লাখ ইনকাম করার সুযোগ আছে। তা না হলে সে এত টাকা ইনভেষ্ট করবে কেন???
অসাম্প্রদায়িকতা, অসাম্প্রদায়িকতা বলে বলে দেশে আপনারা আরও সাম্প্রদায়িকতা উসকে দিচ্ছেন। আমার দেশের এক বিশেষ দল অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে বেশি বেশি কথা বলে সংখ্যালঘুদের ভোট নেয়,আবার তাদের সময়ই সংখ্যালঘুরা বেশি নির্যাতিত হয়।
“”তারা দেশে থাকলে ভোট আমার,ইন্ডিয়া চলেগেলে জমি আমার”
এই নীতিতে তারা চলে।
ধরুন পরিবারে স্বামী স্ত্রী র ভিতর স্বামী তাদের মেয়েকে বেশি আদর করে। স্বাম-স্ত্রীর ঝগড়া হলে দেখবেন স্ত্রী তার রাগটা সেই মেয়ের উপরেই ঝাড়ে। আমাদের প্রধান দুই দলের অবস্থা অনেকটা এমনি।
গত কয়েকবছর আগে অসাম্প্রদায়িকতা নিয়ে মানুষ এত ভাবত না কিন্তু সবাই মিলেমিশেই ছিলো। গত ৫/১০ বছরে কি এমন অসাম্প্রদায়িকতা আপনারা আমদানি করলেন যে এখন অন্যধর্মের লোকেরা নির্যাতিত হচ্ছে।
এখানেও আপনাদের লাভ,ভোট আপনাদের।
পাকিস্তান পাকিস্তান বলে কতইনা গালি দিচ্ছি! পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র,ধ্বংস্তুপে পরিণত হওয়া বাতিল রাষ্ট্র বলছি! পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা আর আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থার মাঝে পার্থক্য আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমরা কতটা এগিয়েছি!
পাকিস্তানের ৬ টা বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং এ জায়গা করে নিয়েছে, ২০১৯ এ তারা শিক্ষায় আরও এগিয়েযাবে। প্রযুক্তির দিক দিয়ে তারা যে দক্ষতা দেখিয়ে, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০০ বছরেও পাকিস্তানের কাছাকাছি যেতে আমরা পারব কি না জানি না।
তাদের শিক্ষা খাতে রিসার্চের জন্য একটা বরাদ্দ রাখা হয়। আমাদের এমন কোন বিশ্ববিদ্যালয় কি আছে যেখানে রিসার্চ হয়। রিসার্চ ভিত্তিক পড়াশুনা হয়। আর ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং এ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান খুঁজতে যেয়ে নিজেই লজ্জা পাবেন।
ভারতে গরু,ধর্ষণ নিয়ে কম কথা হচ্ছে না,তারা টয়লেট ইউজ করতে জানে না। ৭৬% লোক খোলা আকাশের নিচে প্রাকৃতিক কাজ করে। এসব নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। ক্রিকেটে হারার পর কত গালাগালি, কত মারামারি। ক্রিকেট পেজে বিপক্ষ দলকে গালাগালি দিয়ে নিজের দেশকে এগিয়ে রাখছি।
আপনি জানেন “”এপেল র প্রতি তিনজন ইঞ্জিনিয়ারের একজন ইন্ডিয়ান?”” কি অবাক হচ্ছেন? এটাই সত্য। তারা শিক্ষাদিক্ষায় অনেক এগিয়ে গেছে। তাদের শিক্ষায় রিসার্চ সহ প্রযুক্তিকে বেশি প্রাধান্য দেয়। তাদের ২/৩ টা ইউনিভার্সিটি ওয়ার্ল্ড র্যাংকিং এ আছে। বাংলাদেশের?
ইরান শিয়াদের দেশ,তারা কাফের,তারা মুসলিম না। আমরা যখন এই নিয়ে ব্যস্ত তখন ইরান কতদূর এগিয়েছে জানেন??
“”বিশ্বের সবচে দ্রুত হারে প্রযুক্তিখাতে উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা ইরানের””
ইরান বুঝতে পেরেছে তেলের উপর নির্ভর করে তাদের অর্থনীতি বেশিদিন আগাবেনা। যুক্তরাষ্ট্র সহ শত্রু দেশের সাথে পাল্লা দিতে হলে দরকার প্রযুক্তি। দেশের মেধাবীরা বিদেশে যেয়ে রিসার্চ করে। দেশের মেধা চলে যাচ্ছে বাহিরে। তাই তারা রিসার্চের জন্য দেশেই ব্যবস্থা করেদিল। বর্তমানে তাদের শিক্ষাখাতে রিসার্চের জন্য ৩ ট্রিলিয়ন ডলারেরও বেশি বাজেটে বরাদ্দ দেয়া হয়। আমাদের কত টাকা?
আমরা যখন ইরানকে কাফের, অমুক তমুক রাষ্ট্র বলতে ব্যস্ত তারা শিক্ষায়,প্রযুক্তিতে আমাদের থেকে এখনো জোযনজোযন দূর এগিয়ে। আমরা ১৫০০ বছর আগের সমাধান করা বউ কিভাবে তালাক দিব,কয় বিয়া জায়েজ,হিল্লা বিয়ে দিব কি না? এসব নিয়ে যখন নিজেরাই মারামারি করি,ইরান সহ অন্যান্য দেশ তখন রকেটে করে চাঁদ সহ অন্যান্য গ্রহে যাচ্ছে। বুঝতে হবে আমাদের চিন্তা চেতনা কই এবং কোথায় আটকে আছে।
স্বাধীনতার ৪৫/৪৬ বছর হয়েগেল এখনো আমাদের বাজেট প্রণয়ন করার জন্য বিদেশি সহায়াতার জন্য তাকিয়ে থাকতে হয়।
“বাংলাদেশ ইজ আ ডেন্সলি পপুলেটেডে পুওর কান্ট্রি”
বলে বিদেশ থেকে নামে বেনামে ইনজিওর মাধ্যমে বা এজেন্ট হিসাবে কাজ করে সাহায্যের অনেকাংশ নিজের পকেটেই চলে যায়। শাসকগোষ্ঠী যতদিন বাংলাদেশকে গরিব রাষ্ট্র হিসাবে দেখাতে পারবে। তাদের লাভও ততদিন থাকবে। সহায়াতার নামে আসবে টাকা!
ঐ ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে বেশি কথা না বলে সবাই বাংলাদেশি হিসাবে চিন্তা করুন। মুক্তিযুদ্ধ র চেতনা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্টের নামে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প না ছড়িয়ে আসল যে সত্য,অর্থনৈতিক মুক্তি,শোষণ থেকে মুক্তি,সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা, এটা প্রচার করুন।
তাহলে জনগণ সাম্প্রদায়িকতা ভুলে সুশাসন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনোযোগ দিবে। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে পত্রিকায় আজ কোন হিন্দু মরল,কাল কোন পাহাড়ি মরবে। মন্দির,প্রতিমা ভাংচুর এসব আর দেখবে না। সবাই তখন দেসের সুশাসন আর অর্থনৈতিক অবস্থার কি হাল সেটা নিয়েই বেশি সরব হবে।
একটা দেশের উন্নয়ন প্রযুক্তি ছাড়া কোনভাবেই সম্ভব না! আর নতুন নতুন প্রযুক্তি আসবে রিসার্চ গবেষণার মাধ্যমে। তাই দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চের আয়ব্যয় শুধু কাগজেই না রেখে বাস্তবে রুপদানের জন্য সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাধ্য করতে হবে এবং তাদের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। তবেই সম্ভব দেশের উন্নতি।
আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থা সেই বাবা আদমের যুগের যা এখনো পরিবর্তন হয় নাই। বুয়েট পড়ে ব্যাংকে জব। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বিসিএস প্রস্তুতি। গবেষণার বা যে যে বিষয়ে পড়াশুনো করেছে সে বিষয়ে চাকরি,জব নাই,সুযোগ নাই। তাহলে এসব বিষয়ে পড়ে লাভ কি? জ্ঞান সংগ্রহ করলাম কিন্তু কাজে লাগাতে পারলাম না। লাভ কি সেই জ্ঞান আহরণ করে।
“”একদিন অর্থনৈতিক মুক্তি পাবে আমাদের সোনার বাংলাদেশে সুশাসনের মাধ্যমে,এই স্বপনটাই দেখি বারবার””
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৫