“মন্দিরে হামলার আগে আয়োজিত একটি সমাবেশে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁদের উপস্থিতিতেই উপাসনালয়ে হামলা হয়।…রাত সাড়ে নয়টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা সাদ্দাম হোসেন ও মৌলভি হাসানের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জন লোক মিছিল বের করে। মিছিল শেষে একটি সমাবেশ হয়। এতে রামু নাগরিক উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা নুরুল ইসলাম ওরফে সেলিম ও মৎস্যজীবী লীগের নেতা আনসারুল হক বক্তব্য দেন।”
প্রথম আলো’তে ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে মিছিলের ছবিটি না আসলেও স্থানীয় অনলাইন মিডিয়া রামুনিউজ ডটকম এ শনিবার রাতেই ছবিটি আমরা দেখেছি, আমার দেশ পত্রিকাতে বড় আকারে আসায় আমার দেশ থেকেই ছবিটি এখানে দেয়া হলো।
কালের কন্ঠ এ ব্যাপারে লিখেছে :
“রামুতে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম ফেসবুকে ট্যাগ করা ছবিটি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্যোগ নেন। তিনি রামু স্টেশনে উত্তেজনাকর বক্তব্যও দেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে রয়েছে রামু থানার পুলিশের সখ্য। এ সুযোগে তিনি শনিবার রাতের চলমান ঘটনা নিয়ে পুলিশকে নানা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেন। ওই ব্যক্তির সঙ্গে স্থানীয় বৌদ্ধ সমপ্রদায়ের কয়েকজনের সঙ্গে (যাঁদের কয়েকজন স্থানীয় সংবাদকর্মী) ব্যক্তিগত শত্রুতা থাকার জের ধরে এ রকম ঘটনায় তিনি ইন্ধন দেন বলে অনেকে বলছেন।“
আওয়ামিলীগের শুরু করা ঘটনা এরপর ছড়িয়ে পরা বিষয়ে প্রথম সমাবেশে উপস্থিত আওয়ামীলিগ নেতা নুরুল ইসলামের বরাত দিয়ে প্রথম আলো লিখেছে :
“হঠাৎ করে বিভিন্ন যানবাহনে করে শত শত লোক রামুর দিকে আসছে। ওই বহরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও ছিলেন। এভাবে রাত ১২টা পর্যন্ত সেখানে শত শত লোক জড়ো হয়। এরপর তারা হামলা শুরু করে। রাত সাড়ে তিনটা পর্যন্ত এ হামলা চলে। হামলায় আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাতের অন্ধকারে ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছিল না।”
ট্রাকে ট্রাকে লোকজন আসার ম্যাকানিজম সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায় কালের কন্ঠের রিপোর্টের এই বক্তব্য থেকে:
“শনিবারের সহিংস ঘটনার নেপথ্যে স্থানীয় মওলানা আবদুল হক নামে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থক এক ব্যক্তিও জড়িত। ওই ব্যক্তি স্থানীয় মুফতি হাবিবুল্লাহ নামের অন্য এক নেতাকে মোবাইল ফোন করার পরই ট্রাকে ট্রাকে লোকজন আসে রামু সদরে।”
একই ভাবে বিএনপির লোকজনও ঢুকে পড়ে , সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন চালায়:
“রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন বিএনপির দুজন তৃণমূল পর্যায়ের নেতার নেতৃত্বে হামলাকারীর দল লট উখিয়ারঘোনা এলাকার আর্যবংশ বৌদ্ধবিহারটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন। ওই বিহার পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমল বড়ুয়া গতকাল কালের কণ্ঠকে জানান, বিএনপির ওই দুই নেতার নেতৃত্বে শনিবার রাতে মিছিলকারীরা দুই জ্যারিকেন কেরোসিন এনেছিল। আমিন নামের স্থানীয় এক গ্রামবাসী কেরোসিন এবং অছিউর রহমান নামের অন্য একজন গ্রামবাসী খড় এনে বিহারটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।“
ফলে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে লুটপাটের এই মহোৎসবে আওয়ামি-বিএনপি-জামাত ইত্যাদি বুর্জোয়া শাসক শ্রেণীর সকল রাজনৈতিক দলেরই অংশগ্রহণ ছিলো। ব্যাক্তিগত গোষ্ঠীগত স্বার্থে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে দেখে নেয়ার উদ্দেশ্যে ফেসবুকে কোরআন অবমাননার বিষয়টি কাজে লাগানোর আওয়ামী ধান্দাকে এরপর জামাত এবং বিএনপিও যার যার মতো করে কাজে লাগায়, কোথাও মাদ্রাসার ছাত্র, কোথাও রোহিঙ্গা, কোথাও শ্রমিক আর কোথাও বা ধর্মপ্রাণ তরুণদেরকে আওয়ামিলীগের মতো একই কায়দায় ফেসবুকের ছবির প্রিন্ট দেখিয়ে উত্তেজিত করে এবং বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়।
সন্ধ্যা ৭টার দিকে উত্তেজনা সৃষ্টির পর কেউ কেউ এমনকি ট্রাক ভাড়া করে আশপাশ থেকে মানুষ নিয়ে আসে ফলে রাত ১২টা নাগাদ স্থানীয় এবং পাশ্ববর্তী স্থান থেকে ট্রাকে করে নিয়ে আসা লোকজন মিলে বেশ বড় আকারের একটা মব তৈরী হয়ে যায়। সন্ধায় উত্তেজনা শুরুর পর হামলার আগ পর্যন্ত যে ৫/৬ ঘন্টা সময় পাওয়া গেছে তা- আওয়ামিলীগ, বিএনপি, জামাত সহ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক দল,গোষ্ঠী, ব্যাক্তির পক্ষে গান পাউডার, কেরোসিন ইত্যাদি যোগার করা, ফেসবুকের প্রিন্ট করা ছবি দেখিয়ে লোকজনকে উত্তেজিত করা, জড়ো করে ট্রাক ভাড়া করে এক জায়াগায় নিয়ে আসার জন্য যথেষ্ট সময়।
আওয়ামিলীগ বিএনপি জামাত এরা সকলেই শাসক শ্রেণীর অংশ- কোথাও এমপি, কোথাও চেয়ারম্যান ইত্যাদি নানা ভাবেই তারা ক্ষমতা কাঠামোয় প্রতিনিধিত্ব করে। শাসন ক্ষমতায় বিভিন্ন ভাবে যুক্ত থাকা প্রভাবশালীদের ইন্ধন,সমর্থন, পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে মানুষ যতই ক্ষব্ধ হোক, কোন এলাকায় সারা রাত ধরে থানা, বিডিআর এবং আর্মি ক্যাম্পের একেবারে সন্নিকটের এলাকায় বিনা বাধায় এরকম আয়োজন করে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসযজ্ঞ চলতে পারে না।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৪৮