কি ঘটতে পারে, যদি পৃথিবীর নিজ অক্ষের ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যায়। ( what if earth stops spinning on its axes?)
দুটো গতি দ্বারা পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা হয়। আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি। পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘূর্ণনকে পৃথিবীর আহ্নিক গতি বলে। এই গতি পশ্চিম থেকে পূর্বের দিকে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত অভিমুখে হয়ে থাকে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির অক্ষ উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠকে ছেদ করে।এই গতিই ২৪ ঘণ্টা দিনের সময়কালের জন্য দায়ি। আর সূর্য কে একবার প্রদক্ষিণ করতে যে সময় লাগে তাকে বলে পৃথিবীর বার্ষিক গতি যা ৩৬৫ দিন ৬ ঘণ্টা বা ১ বছর।
পৃথিবী নিজেকে কেন্দ্র করে প্রতি ঘন্টায় প্রায় ১৬৭৫ কিলোমিটার গতিতে পশ্চিম থেকে পুর্ব দিকে ঘুরছে। এই ঘুর্ণন গতিটা আসলে আমাদেরকে দিচ্ছে সময়। আর সেই সময় আমাদেরকে দিচ্ছে জীবনধারণের সকল কিছু। এটা খুবই জটিল বিষয়। এখন আপনি যদি একেবারে বিষুব রেখাতে থাকেন তবে এই ঘুর্ণনের সর্বোচ্চ গতিটা পাবেন যেটা আমরা বাংলাদেশিরা পাই কারণ আমরা বিষুব রেখাতে বাস করি। আবার যদি কোন একটা মেরু অঞ্চলের দিকে যেতে থাকেন সেটা কমে যেতে থাকবে।
এখন কোন কারনে যদি পৃথিবীর আহ্নিক গতি কমে যায় তবে দিনের দৈর্ঘ যাবে বেড়ে অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টা থেকে বেশী। যদি পৃথিবীর আহ্নিক গতি আস্তে আস্তে কমতে থাকে তখন একটি দিন এক সাপ্তাহ, এক মাস এমনকি সর্বোচ্চ এক বছর হতে পারে যদি পৃথিবীর আহ্নিক গতি শূন্য হয়ে যায় অর্থাৎ পৃথিবী যদি থেমে যায়। কি হতে পারে এমন অবস্থায়? কি কি ঘটতে পারে যদি পৃথিবীর ঘূর্ণন কমতে কমতে বন্ধ হয়ে যায়? বিজ্ঞানীরা ফিজিক্স, ম্যাথম্যাটিকস, অ্যাস্ট্রলজি, ভুতত্ব সব কিছু বিবেচনায় নিয়ে একটি ধারণা দিয়েছেন এই ব্যাপারে।
১। চব্বিশ ঘণ্টার দিনরাত্রি বলে যা জানি, তার ইতি ঘটবে। এক একটি দিন হতে পারে ১ সাপ্তাহের সমান, এক মাসের সমান অর্থাৎ ১৫ দিন সূর্যের আলোকোজ্জ্বল দিন, ১৫ দিন অন্ধকার রাত, বা ৬ মাস দিন ৬ মাস রাত।
মজার কথা হচ্ছে যে যদিও আমাদের দিন-রাতের দৈর্ঘ্য বেড়ে গেছে, মাসের দৈর্ঘ্য কিন্তু একই থাকবে, কেননা আমাদের চাঁদ তার পুরোনো প্রথা মতোই পৃথিবীর চারধারে ঘুরে যাবে। তফাৎ হবে এই যে পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে চাঁদে জোয়ার-ভাঁটার (tidal) কিছু শক্তি সঞ্চারিত হয়, যার ফলে এখনকার চাঁদ আস্তে আস্তে পৃথিবীর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে, সেটা বন্ধ হয়ে যাবে। পৃথিবী স্থাণু হয়ে গেলে সেটি আর হবে না, ফলে চাঁদ আস্তে আস্তে আমাদের কাছে চলে আসতে আরম্ভ করবে।
কেয়ামতের চিহ্ন স্বরূপ দাজ্জালের আগমন এবং কর্মকাণ্ড নিয়ে মোহাম্মদ (সঃ) এর কিছু হাদিস আছে এমন ঃ সাহাবীগণ রাসূল (স) কে জিজ্ঞেস করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে। উত্তরে তিনি বলেছেন, “সে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত লম্বা। দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মত। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ার স্বাভাবিক দিনের মতই হবে”। আমরা বললাম, “যে দিনটি এক বছরের মত দীর্ঘ হবে সে দিন কি এক দিনের নামাযই যথেষ্ট হবে?” উত্তরে তিনি বললেন, “না, বরং তোমরা অনুমান করে সময় নির্ধারণ করে নামায পড়বে”। (সহীহ মুসলিম- কিতাবুল ফিতান)[১৩]
২। পৃথিবীর ঘূর্ণন বাআহ্নিক গতি যত কমতে থাকবে বাতাসের উপর সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স বা কেন্দ্র বিমুখী বল কমতে থাকবে যেই বল মহাসাগরের পানিকে অক্ষ রেখায় ধরে রাখে এবং যার ফলে পৃথিবীতে ৫ টি মহা সাগরের সৃষ্টি করেছে। এখন যদি এই পৃথিবীর ঘূর্ণন হ্রাসের ফলে এই বল কমতে থাকে তবে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে মহাসাগরের পানি দুই মেরুর ( উত্তর ও দক্ষিণ মেরু) দিকে যেতে থাকবে এবং পরিশেষে মাঝখানে বিশাল ভূভাগ রেখে দুইটি বিশাল মহাসাগরে পরিণত হবে। কানাডা, আমেরিকার বেশীরভাগ অংশ চলে যাবে পানির নিচে এবং ক্যারেবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বিশাল ভূভাগ সৃষ্টি করে ইউরোপ এশিয়া আফ্রিকা ওশেনিয়ার সাথে যুক্ত হবে। নিচের চিত্রের মত। অর্থাৎ বিশাল এক মহাদেশের সৃষ্টি হবে যার দুপাশে বিশাল দুই মহাসাগর।
এটি স্মরন করিয়ে দেয় মহানবী (সঃ) এর কেয়ামতের চিহ্ন স্বরূপ করা কিছু ভবিষ্যৎ বানীর কথা যেখানে তিনি বলেছিলেন কেয়ামত সন্নিকটে হওয়ার একটা চিহ্ন হচ্ছে জমিনের অংশ সমূহ পরস্পরের সাথে যুক্ত হওয়া বা নিকটবর্তী হওয়া।
৩। স্বাভাবিক ভাবে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল পৃথিবীর আহ্নিক গতি এবং অভিকর্ষ বলের সামঞ্জস্যতার প্রভাবে অক্ষ রেখার সমান্তরালে প্রবাহিত হয়। পৃথিবীর আহ্নিক গতি বা নিজ অক্ষ কে কেন্দ্র করে ঘূর্ণন যত কমতে থাকবে অভিকর্ষ বলের প্রভাবে বাতাস তত দুই মেরুর দিকে অগ্রসর হতে থাকবে প্রচণ্ড গতিতে। এটি সৃষ্টি করবে এমন ভয়ংকর ঝড়ের যা আজ পর্যন্ত পৃথিবী বাসী দেখেনি। প্রচণ্ড গতির এই বায়ু মহাসাগর থেকে পানিকে অবিশ্বাস্য গতিতে মেরুর দিকে নিয়ে যেতে চাইবে। ফলে সৃষ্টি হবে ভয়ংকর সুনামির। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন এমন জলোচ্ছ্বাসের ফলে ভূপৃষ্ঠের যেসব স্থানে পানির অস্তিত্ব নেই বা স্বল্প এবং যেসব স্থানে বৃষ্টি হয়না যেমন মরুভূমি, পাথুরে অঞ্চল ইত্যাদি সেসব স্থানেও সাগরের পানি যেতে পারে, আর বাতাসের সাথে বহনকারী মেঘের প্রভাবে সেসব স্থানেও বৃষ্টি হবে। তাদের মতে এমনটা ঘটলে সাহারা এবং আরবের মরুভূমি গুলোতে অনেক নদী নালার সৃষ্টি হবে।
এটি স্মরন করিয়ে মোহাম্মদ (সঃ) এর সেই হাদিসটি যাতে তিনি বলেছিলেন “ ততদিন পর্যন্ত কেয়ামত হবে না যতদিন আরব্যভুমি গাছপালা, নদী নালায় ভরপুর হবে” (সহিহ মুসলিম [৫:২২০৮])
৪। পানি এবং বাতাস যেহেতু শুধুমাত্র দু দিকে (উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুর দিকে) বাতাসের বহনকারী মেঘ বর্তমানের মত পুরো পৃথিবীতে মোটামুটি সমান ভাবে না থেকে শুধু মাত্র নির্দিষ্ট কিছু স্থানেই ঘনিষ্ট হতে থাকবে। আর স্বাভাবিক ভাবেই এখনকার মত প্রায় পুরো পৃথিবী নয় শুধুমাত্র নির্দিষ্ট সংখ্যক কিছু স্থান নিঃশ্বাস নেয়ার মত উপযোগী বাতাসের উপর নির্ভর করে মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়ে উঠবে। নির্দিষ্ট কিছু স্থানেই জীবন যাপন অপেক্ষাকৃত সহজতর হয়ে উঠবে। আর বিশাল ভূভাগ হয়ে পরবে বিরান ভুমিতে, সেসব স্থানে চলতে থাকবে প্রচণ্ড খরা, অনাবৃষ্টি। কিন্তু বসবাস যোগ্য অঞ্চল গুলোও যে খুব সুখে থাকবে তা কিন্তু না। মেঘ বাতাসের আধিক্যের ফলে ঘন ঘন ঝড়, প্রচণ্ড বজ্র সহ বিদ্যুতপাত এবং প্রবল বৃষ্টিপাতের মুখে পড়বে। প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে ঐসব অঞ্চলে কিন্তু শস্য উৎপাদন কঠিন হয়ে পড়বে অতিবৃষ্টির দরুন সংঘটিত বন্যার ফলে।
এসব কিছুই স্মরণ করিয়ে দেয় মহানবী (সঃ) এর কিয়ামতের লক্ষন স্বরূপ বর্ণীত কিছু কথা কে। যেমনঃ ১। প্রচণ্ড বজ্রপাত হবে, ২। অতিবৃষ্টি অনাবৃষ্টি এবং খরা ভয়ানক আকার ধারন করবে। ৩। প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে কিন্তু তা থেকে খুব স্বল্পই শস্য উৎপাদনের সহায়ক হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৮