আজকাল ছড়ার বহুমুখি চর্চা হচ্ছে। ছড়া নিয়ে হচ্ছে নানান রকম কাজ আর গবেষনা। ইদানিং ছড়ার চর্চাকারি ছড়াকর্মীর সংখ্যাও বেড়েছে বহুগুণে। তবে ছড়াকর্মীর সংখ্যা বাড়ার অনুপাতে ছড়ার উন্নতি হয়েছে কম। অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় ছড়াকর্মীর সংখ্যা এখন অনেক বেশি। কর্মীর সংখ্যা যেহেতু বেশি, তাই প্রোডাকশনও বেশিই হচ্ছে। কিন্তু বেশি প্রোডাকশন হলেও মান সম্মত ছড়ার সংখ্যা খুবই কম। এখন প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে এতো ছড়াকর্মী এলো কোথা থেকে? উত্তর হচ্ছেÑ প্রকাশ ক্ষেত্রের সহজলভ্যতা। এখন সারা বছর সারা দেশ থেকে প্রচুর পরিমানে লিটলম্যাগ কিংবা সাহিত্য পত্রিকা বেরুচ্ছে। যাতে প্রচুর পরিমাণে ছড়া ছাপা হয়। তাছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে থেকে অনেক লোকাল পত্রিকা প্রকাশিত হয়, সেগুলোতেও ছড়া ছাপা হয়। যা ছাপা হয় তার বেশির ভাগই নি¤œমানের। আমি সেদিকে যাচ্ছিনা। আমি ছড়া প্রকাশের অন্য জগৎ নিয়ে আলোচনা করবো।
২.
অনলাইন, ভার্চুয়াল, সাইবার কিংবা ইন্টারনেট যাই বলি না কেনো সেটা মানব কল্যানে খুব কাজে আসছে। ইন্টারনেটের বহুবিধ ব্যবহার মানুষের জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। সাহিত্য সংস্কৃতিতেও এসেছে নতুন জোয়ার। বিশেষ করে সাহিত্যের বহুমুখি চর্চায় ইন্টারনেট বেশ কার্যকরি। ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, অনলাইন পত্রিকা, ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ইত্যাদির মাধ্যমে চলছে সাহিত্য চর্চা। এসব চর্চার বেশিরভাগই হচ্ছে বস্তা পঁচা। সেসবের মধ্য থেকে আমি সাহিত্যের সবচেয়ে প্রাচীন আর সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ছড়ায় আলোকপাত করবো শুধু।
অনেকেই মনে করেন সাহিত্যের অন্য যেকোন মাধ্যমের চাইতে ছড়া লেখা সহজ। অনেকে হুট হাট করে ছড়ালেখা শুরুও করে দেন। কিন্তু দীর্ঘদিন লেখার পরও তার লেখার কোন উন্নতি হয়না। মান সম্মত কোনো লেখা বের হয় না তার হাত থেকে। হবে কি করে? কারণ, তার লেখাগুলো ভালো জানাশোনা কোন ছড়াকার সম্পাদনা করেন না। লেখক নিজে লিখে নিজেই প্রকাশ করে অনলাইনের বিভিন্ন জায়গায় এবং নিজের ফেসবুকের আইডিতে। কিছু বন্ধু বান্ধব লাইক কমেন্টস দেয়। এতেই সে বড়ো ছড়াকার হয়ে যাবার খুশিতে গদগদ হয়ে উঠে। মাঝে মধ্যে কিছু দৈনিকের অপরিপক্ষ বিভাগীয় সম্পাদকের কল্যাণে সাদা স্পেস ভরতে হয় বলে কিছু ছড়া প্রকাশিত হয়ে যায়। মাঝে সাঝে কিছু কাঁচা সম্পাদনার সাহিত্য পত্রিকায়ও কিছু ছড়া ছাপা হয়ে যায় বটে। এতে কারো কারো ছড়াকার হয়ে উঠার ভাব আরো বেড়ে যায়। আর বিভিন্ন অনলাইন দৈনিকের সাহিত্য কিংবা শিশু বিভাগে ঐ একই কারণে কিছু লেখা প্রকাশিত হয়ে যাওয়াতে খুশির সীমা থাকেনা ছড়াকারের। বাস্তবে এ দু পক্ষের কেউই জানে না ছড়া কী, ছড়া কাকে বলে কিংবা ছড়া কিভাবে লিখতে হয়? জানবে কী করে? জানার চাইতে লেখা ও লেখা প্রকাশের তাড়া বেশী থাকলে ছড়া শেখার ফুসরতটা পাবে কোথা থেকে?
৩.
একটু চোখ বুলিয়ে আসি বর্তমান জেনারেশনের মাত্র দুই দশক আগের লেখক ছড়াকার হয়ে ওঠার বিষয়টাতে। আগেকার যুগের সব ধরনের সকল লেখকের লেখক হয়ে ওঠার পেছনে কঠোর পরিশ্রমের ইতিহাস আছে। বর্তমান সময়ের যেসব ছড়াকার সকলের আদর্শ হিসেবে জায়গা দখল করে আছেন তাঁরা সবাই কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তাঁরা লিখেতেন অনেক লেখা। কিন্তু প্রকাশ হতো হাতে গোণা কিছু লেখা মাত্র। তবে যেগুলো প্রকাশ হয়েছে তা মান সম্মত লেখা হিসেবেই প্রকাশ পেয়েছে। আর যাঁদের হাত দিয়ে এসব লেখা প্রকাশিত হয়েছে তারা ছিলেন অনেক জানা শোনা মানুষ। এই জানা শোনা মানুষগুলো কঠোর হাতে সম্পাদনা করতেন একেকটি লেখা। তরুণ লেখকরা সেগুলো ফলো করতেন মনোযোগ দিয়ে। জানাশোনা মানুষগুলোর গাইডলাইন ফলো করতেন তাঁরা। প্রচুর পরিমাণে ভালো ভালো লেখা পড়তেন। জানার চেষ্টা করতেন ছন্দ, অলংকার আর মাত্রার বিষয়গুলোকে। পড়তেন বেশি, লিখতেন কম, আর প্রকাশ হতো আরো কম। এভাবে পরিপক্ক হয়ে ওঠার পর তারা যা লিখেছেন সেগুলো ভালো লেখা হিসেবে গণ্য হয়েছে। অবশ্য এখানে মেধারও একটা ব্যাপার থাকে। ভালো মেধা ধাকলে ভালো লেখার ব্যাপারটা একটু সহজ হয় বটে। তবে শুধু মেধা দিয়ে ভালো ছড়াকার কিংবা লেখক হওয়া যায না। মেধাকে শান দিতে হয় প্রচুর পড়ার মাধ্যমে, জানার মাধ্যমে, জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে। তারপর আসে সফলতা। বর্তমান সময়ে সঠিক গাইডলাইন দেবার মতো সম্পাদকের সংখ্যা একেবারেই কম। বর্তমানের বেশির ভাগ সম্পাদক হাতের কাছে যা পাচ্ছেন তাই প্রকাশ করছেন। সম্পাদক নিজেই জানেন না একটি লেখার ভালো মন্দ। একটি কাঁচা লেখাকে সম্পাদনা করে ভালো লেখা করার ক্ষমতাও নেই আজকালকার সম্পাদকদের অনেকের। তাহলে ভালো ছড়াকার তৈরী হবে কিভাবে?
৪.
আবার আসি অনলাইনে। বর্তমানে অনলাইন জগত ছড়া কিংবা যেকোনো লেখা প্রকাশের এক অতি সহজ মাধ্যম। এখানে সহজে নিজেকে উপস্থাপন করা যায়। একটি লেখাকে সহজে পাঠকের কাছে পৌছে দেয়া যায়। আজকাল ব্লগ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি দৈনিক পত্রিকা, সাহিত্য পত্রিকা, কিংবা কিছু কিছু লিটলম্যাগেরও অনলাইন ভার্সন পাওয়া যায়। আবার অনেকে বিভিন্ন কাগজে প্রকাশিত নিজের ছড়ার পোষ্ট দেন বিভিন্ন অনলাইন পেজে এবং নিজের ফেসবুক আইডিতে। এটা খুবই পজেটিভ একটা বিষয়। এর ফলে সাহিত্য সহজে সকলের কাছে পৌছে যাচ্ছে। আমরা নিমেষে জেনে যেতে পারছি, কোন মাধ্যমে কার কি লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। অনলাইনের কল্যাণে সারাবিশ্ব আজ একটি দেশে পরিণত হয়েছে। অতি সহজে বিশ্বের যেকোন প্রান্তের সাহিত্য সংস্কৃতি বা অন্য যেকোন কিছু আমরা নিমেষে জেনে যাচ্ছি। আমরা নিমেষে পেয়ে যাচ্ছি ভালোমন্দ খবরা খবর। আমাদের ছড়ারও সেসবের সুফল ভোগ করবার কথা থাকলেও, ছড়া কোনো সুফল পাচ্ছে না। কারণ পাঠকের মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতো তেমন কোন ছড়া কি পোষ্ট হচ্ছে অনলাইনে? হয়তো হচ্ছে। তবে তা খুবই নগণ্য। বেশি পোষ্ট হচ্ছে ছড়ার নামে আবর্জনা।
ফেসবুকে ছড়া বিষয়ক অনেকগুলো গ্রুপ বা পেজ আছে। আছে কবিতার গ্রুপও। যেখানে ছড়াও পোষ্ট হচ্ছে। যেমন গোলপাতার ছাউনি, কবি ও কবিতার আসর, লিখব যা বলতে চাই, ছড়াপত্র, ছড়া সংঘ, ছড়ার হাঠবাজার, লোকছড়া, ছন্দালাপ, ছড়াআনন্দ, ছড়াছড়ি ইত্যাদি। এসব পেজে নবীন ছড়াকাররাই বেশি ছড়া পোষ্ট করেন। কোন কোনটায় প্রবীণ বা সিনিওয় কিছু ছড়াকারও তাদের পোষ্ট দিয়ে থাকেন। একামাত্র গোলপাতার ছাউনিতে কিছু ভালো ছড়া পোষ্ট হয়। কারণ এ পেজটির এডমিন হিসেবে আছেন শক্তিমান কয়েকজন ছড়াকার। এই গ্রুপটির বেশিরভাগ সদস্যও প্রতিষ্ঠিত ছড়াকার। যারা ছড়া ভালো লিখেন, ছড়া ভালো বোঝেন। কিন্তু আফসোসের কথা হলোÑ এখানেও দুর্বল ছড়া পোষ্ট হয়। এই পেজের এডমিনরা চাইলে পেইজটাকে আরো বিশুদ্ধ রাখতে পারতেন। কাঁচা ছড়াগুলোকে সম্পাদনা করে প্রকাশ করতে পারতেন। এতে ছড়া সমৃদ্ধ হতো। নতুনরা পেতো গাইড লাইন। অন্য দুএকটি পেজের এডমিনের দাযিত্বে কিছু ছড়াকার আছেন বটে। কিন্তু তারাও ছড়া সম্পাদনা না করেই পোষ্ট এপ্রোভ করেন। অথবা সম্পাদনা করতে ভয় পান। অথবা সম্পাদনা করতে পারেন না। ফেসবুকের এসব পেজে সিনিওর অনেক ছড়াকারের কাঁচা বা দুর্বল ছড়া দেখে হতাশ হতে হয়। উদাহরনের জন্যে অনেকগুলো পেইজ ভিজিট করে একই চিত্র দেখা গেছে। এসব জায়গায় দুর্বল আর কাঁচা সংখ্যাই বেশি। তাই উদাহরণ হিসেবে ওগুলো তুলে দিয়ে অযতা লেখাটির কলেবর বৃদ্ধি করা থেকে বিরত থাকলাম। এতে আর যাই হোক আমার এই লেখাটির মাধ্যমে অন্তত দুর্বল ছড়ার প্রচারটা হবে না।
৫.
শুধু ছড়ার গ্রুপ বা পেজেই নয়। ছড়াকাররা দুই হাতে ছড়া লিখছেন আর নিজের ব্যক্তিগত আইডিতেও সেগুলো পোষ্ট করছেন। নিজে লেখক, নিজে প্রকাশক। তাই যা লিখছেন মিনেষে ছেড়ে দিচ্ছেন হাজারো মানুষের সামনে। লেখকের কিছু ঘনিষ্ট বন্ধু বুঝে না বুঝে সেগুলোর প্রশংসা করছেন। হঠাৎ জানা শোনা কেউ লেখাটির কোন ভুলক্রুটি ধরিয়ে দিলে লেখক নিজে কিংবা অন্যরা ক্ষেপে গিয়ে রিপ্লাই দিচ্ছেন উল্টা পাল্টা। এ এক বিচিত্র খেলাই বটে। অথচ নিজে লেখক-নিজে প্রকাশক এর মাঝখানে নিজে সম্পাদক হলে হয়তো ছড়াটা আরেকটু ভালো হতো। একটি লেখা শেষ হবার সাথে সাথে সেটি পোষ্ট না দিয়ে ভালোমত পড়ে, ভুল ঠিক করে পোষ্ট দিলে পাঠক একটি ভাল ছড়া পড়ে হয়তো আনন্দ পেতে পারতো। কিন্তু ভার্চুয়ালের ছড়া লেখকদের এ আবেগ কণ্ট্রোল করা কঠিন। লেখক আবার লেখা পোষ্ট করে বন্ধুদেরকে ফোন দিয়ে কিংবা তাদের ইনবক্সে মেসেজ দিয়ে লেখাটি দেখে লাইক কমেন্টস করতে অনুরোধ করে। কি নির্লজ্জ হলে এমনটি করা যায় ভাবতে অবাক লাগে। এরকম বিরক্তিকর ফালতু রিকোয়েস্ট আমিও পাই মাঝে মাঝে। এ প্রসঙ্গটি চলে আসায় মনে পড়ে গেলো আমার এক ছড়াকার বন্ধুর কথা। বেশ নাম ডাক তার, কাগজে বেশ লেখা টেখা প্রকাশও হয় নিয়মিত। সে এই ফালতু রিকোয়েস্টের কাজটি খুব ভালো পারে। ফোনে কথা টতা হলে কিংবা দেখা হলে এখনও মাঝে মাঝে বন্ধুটি অনুযোগ করে আমি তার লেখায় লাইক কমেন্টস করি না বলে। আমি বললামÑ করি তো। সে বলেÑ আমি যতো পোষ্ট দেই তার কয়টায় তুমি কমেন্টস দাও? আমি বললামÑতুমিতো প্রতিদিন অসংখ্য পোষ্ট দাও। আমিও দেখি। এদের মাধ্যে বেশির ভাগই ছাইপাশ। ছাইপাশগুলোতে কিছুই করিনা আমি, যেটা ভালো লাগে সেটাতে শুধু লাইক দেই, আর যেটা বেশি ভালো লাগে সেটাতে কমেন্টস করি। অবশ্য তোমার লেখা ছাইপাশগুলোতেও তোমাকে বাঁশ দিয়ে গঠনমূলক কিছু লিখতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তুমিতো আবার এগুলো সহ্যও করতে পারো না। তখন ছড়াকার বন্ধুটি একটু শুকনো হাসি হেসে বলেÑ আরে মিয়া দেখছো, আমার একেকটি লেখায় কি পরিমাণ লাইক কমেন্টস পড়ে!!! আমি দু’একবার তাকে বুঝাবার চেষ্টা করেছি ‘কন্ট্রোল’ বলে। কিন্তু সস্তা লাইক কমেন্টসে যার আসক্তি, সে কি আর দামি কথা মানে? একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের আবেগটাই যখন এরকম, তখন একজন তরুনের আবেগ আরো বেশি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এই সস্তা আবেগটুকুকে কন্ট্রোল করে ভালো মন্দ জেনে বুঝে ছড়ার প্রচার করলে ছড়া ও ছড়াকর্মী উভয়ের কল্যাণ হতো।
অনেক ছড়াকার আবার ব্লগেও লিখে থাকেন। সেখানকার অবস্থাও প্রায় একই রকম। নিজে লেখক নিজে প্রকাশক হওয়াতে কোন ভালো ছড়া প্রডাকশন হচ্ছে না সেখানেও। তবে ফেসবুকের দৌরাত্বে ব্লগের বাজার আজ হুমকির মুখে। প্রায় সকলেই ব্লগিং বাদ দিয়ে বা কমিয়ে দিয়ে নিজের ফেসবুক আইডিকে সস্তা প্রচারে কাজে লাগাচ্ছেন। কিছু কিছু ছড়াকারের আবার নিজস্ব ওয়েব সাইটও আছে। সেখানেও চলছে ছড়া লেখা। কিন্তু সবখানেই ছড়ার রেজাল্ট কিন্তু জিরো।
৬.
‘ছড়া লেখক ও ছড়া চর্চাকারি’ এ দুয়ের মধ্যে সুর্নিষ্ট কিছু পার্থক্য বিদ্যমান। ছড়া লেখক হচ্ছেনÑ যে ছড়ার ভালোমন্দ নিয়ে ভাবে না, শুধু লিখে আর প্রকাশ করে। যার লেখার মান দীর্ঘদিন লেখালেখির পরও উন্নত হয় না। এদের অনেকে আবার নিজের নামের আগে নিজেই কবি কিংবা ছড়াকার শব্দটি জুড়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করে। প্রকৃতপক্ষে এরা কবি কিংবা ছড়াকার কোনটাই নয়। এরা জাষ্ট লেখক। দলিল লেখক যেমন লেখক তেমনি এরাও শুধুমাত্র লেখক।
আর ছড়া চর্চাাকারি হচ্ছেনÑ যে ছড়ার ভালো মন্দ নিয়ে ভাবে, পড়ে বেশি, লিখে কম, লেখা প্রকাশের চাইতে মান নিয়ে ভাবে বেশি। ছড়া চর্চাকারির লেখা ছড়ায় ক্রমাগত উন্নতি ধরা পড়ে। সে একটি ছড়া লিখে, সেটির ভালো মন্দ চিন্তা করে। ছড়ার ছন্দ অলংকার ফর্ম সবকিছু নিয়ে ভেবে তারপর ছড়া লেখে। তার ছড়ায় থাকে নতুনত্ব। তার উন্নতি পাঠক শুভাকাংখীদের চোখে সহজে ধরা পড়ে। একসময় সে বিদগ্ধ হয় এবং তার বেশির ভাগ ছড়াই ভালো লেখা হিসেবে গণ্য হয়।
আফসোরে কথা হচ্ছে ভার্চুয়ালে ছড়া চর্চাকারীর সংখ্যা একেবারেই নগন্য। বস্তা পঁচা লেখকের সংখ্যাই সেখানে বেশি। আরো বেশি আফসোস লাগে যখন দেখি একসময়ের শক্তিশালী ছড়াকাররাও ফেসবুকে সস্তা ছড়া লিখে পোষ্ট দিয়ে সস্তা লাইক কমেন্টসে উচ্ছ্বসিত হচ্ছেন।
৭.
আমাদের দেশে ইন্টানেটের সহজলভ্যতার বেশিদিন হয়নি। এখনও মোট জনগোষ্টির সামান্য একটি অংশ ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। আর ফেসবুকের একযুগের মতো বয়স হলেও আমাদের দেশে সেটা মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে মাত্র এই কয়েক বছরের থেকে। স্মার্ট ফোনের সহজলভ্যতা আর মোবাইল কোম্পানীগুলোর বিভিন্ সহজ প্যাকেজের কারণে সবার হাতে হাতে এখন ইন্টারনেট। ইন্টারনেট চালু করেই চালু হয় ফেসবুক আইডি। অতপর শুরু হয় চেনা অচেনা যাকে তাকে ফ্রে- রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে বিরক্ত করার প্রতিযোগিতা। সবচেয়ে বিরক্তিকর জিনিষ হচ্ছে ট্যাগিং। প্রতিদিন বিরক্তিকর ট্যাগিংয়ের শিকার হচ্ছি আমরা। বিশেষ করে কারো একটা ছড়া কোথাও ছাপা হলে ভালো মন্দ, উপযুক্ত অনুপযুক্ত, ছোট বড় কোন কিছু বিবেচনা না করেই আরেকজনের ওয়ালে ট্যাগ করা হচ্ছে। শুধু ছড়া নয় অপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই ট্যাগ করা হয় না বুঝে যা চরম বিরক্তিকর।
৮.
অনলাইনে ছড়া নিয়ে তো অনেকদিন যা খুশি তাই হলো। এখন সময় এসেছে কিছু ভালো কাজ করার। সেখানে ছড়া নিয়ে আমাদের এখন দরকার এমন কিছু বিশুদ্ধ পেজ, গ্রুপ, ব্লগ, বা অনলাইন পোর্টাল যেখানে শুধু বিশুদ্ধ ছড়ার চর্চা হবে। থাকবে ছোট বড় লেখক বিবেচনায় না এনে ভালো কিছু পোষ্ট বা লেখা। যেখানটার থাকবে ছড়া সম্পর্কে ভালো জানাশোনা সম্পাদনা প্যানেল। যেখানে ছড়া, ছড়াকার, আর ছড়া বিষয়ক নানান আয়োজন থাকবে। কোন দুর্বল লেখাই সেখানে স্থান পাবে না। সেখানটাতে একটি লেখা প্রকাশিত হলে লেখকের গর্ববোধ হবে। নতুনরা ক্রমাগত ছড়ার সঠিক চর্চা করবে, সেখানে ভালো ছড়া পোষ্ট দেবে। আজকের নতুন প্রজন্মের ছড়াকাররা একদিন বড়ো হয়ে তাদের অনুজ ছড়া লেখকদের কাছে এই সফল পেজ, গ্রুপ, ব্লগ, বা অনলাইন পোর্টালের গল্প করবে। গল্প করবে এগুলোর পেছনের সফল মানুষগুলোর সফল সম্পাদনা আর উৎসাহের স্মৃতিগুলোর। এখন যেমন আমরা আমাদের সিনিয়র ছড়াকারদের কাছ থেকে গল্প শুনি রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই, আফলাতুন, হাবিবুর রহমান কিংবা বজলুর রহমান ভাইয়ার কথা। আমরা অপেক্ষায় আছি অনলাইনের একজন দাদাভাই কিংবা আফলাতুনের। যাঁর সফল সম্পাদনা, নেতৃত্ব ও উৎসাহে বর্তমানের ছড়া লেখকরা হবেন ভালো ছড়াকার ও ছড়াকর্মী।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৬