অহনার কয়েন সংগ্রহের বিষয়টা এখন আর কারো অজানা নয়। ইতিমধ্যে কয়েনের ছোটখাটো একটি সংগ্রহশালা হয়ে গেছে তার শোকেছ। এগুলোর বেশিরভাগ আব্বুই বিদেশ থেকে এনেছেন। পাশাপাশি আব্বুর ঘনিষ্ট বন্ধুরা বিদেশ ভ্রমণে গেলে অহনার জন্যে কয়েন নিয়ে আসেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা অহনাদের আন্তীয় স্বজনরাও দেশে আসার সময় অহনার জন্যে কয়েন আনতে ভুলেন না। এভাবে সকলের সহযোগিতায় সমৃদ্ধ হচ্ছে অহনার এই সংগ্রহশালা। শুধুমাত্র কয়েন সংগ্রহ করেই সকলের প্রিয় হওয়া যায়, পাওয়া যায় অনেক ¯েœহ ভালোবাসা। সকলের প্রিয় অহনাই তার প্রমাণ।
অহনা যেখানে যায় সেখানে এখন বাড়তি আদর পায়। স্কুলে, আতœীয় স্বজনের বাড়িতে, বন্ধুবান্ধবদের মাঝে অহনা থাকে একটু স্পেশাল। এই স্পেশাল থাকার পেছনে মূল কারণ তার স্পেশাল কাজ। আর এই স্পেশাল কাজ হচ্ছে কয়েন সংগ্রহ করা।
অহনার মাথায় কয়েন সংগ্রহের সখটা ছিলো অনেক দিনের। সেই শখ বাস্তবায়নের পেছনে একটা মজার স্টোরি আছে। স্টোরিটা হচ্ছেÑ অহনার আব্বু সেবার ভারত সফরে গিয়েছিলেন। দেশে আসার সময় প্রতিবারের মতো অহনাদের জন্যে অনেক কিছু নিয়ে আসেন। সেবার অহনার আব্বুর বেগে হয়ে কীভাবে যেনো বেশ কয়েকটি ভারতীয় কয়েন চলে আসে। যার জন্যে যা কিছু এনেছেন তা তা ঠিকমতো বুঝিয়ে দিয়েছে আব্বু। একদম শেষে বেগ ঝাড়তে গিয়ে ঝনঝন করে কয়েকটি কয়েন ঘরের মেঝেতে পড়ে গেলো। ঝনঝন শব্দ শুনে অহনা দৌড়ে এলো। কয়েনগুলো তুলে আব্বুর হাতে দিতে দিতে বললÑ আব্বু আমি কি কয়েনগুলো রাখতে পারি?
Ñ হ্যা, অবশ্যই রাখতে পারো। কয়েনগুলো তোমার পছন্দ হয়েছে?
Ñ হ্যা।
Ñ তাহলে রেখে দাও তুমি।
Ñ না থাক। তোমার লস হয়ে যাবে।
Ñ আরে লস হবে না। তুমি রেখে দাও। তা তুমি কয়েনগুলো দিয়ে কী করবে শুনি?
Ñ কিছুই করবো না, এমনিই রেখে দেবো।
Ñ ঠিক আছে রাখো। তবে, তুমি চাইলে আমি তোমাকে ভালো একটা পরমর্শ দিতে পারি। দেবো?
Ñ দাও তো, তোমার পরামর্শটা শুনি আগে।
Ñ তুমি কয়েন সংগ্রহ শুরু করে দিতে পারো। গড়ে তুলতে পারো কয়েনের একটি সংগ্রহশালা। হয়ে উঠতে পারো সবার থেকে স্পেশাল।
Ñ মানে? কী বলছো আব্বু তুমি এসব?
Ñ আমি ঠিকই বলছি। তুমি ভেবে দেখতে পারো।
Ñ আব্বু শোন। সত্যিই কয়েনের প্রতি আমার আকর্ষণ খুব বেশি। আমার কাছে আমাদের দেশের সবগুলো কয়েন আছে। দাড়াও আমি দেখাচ্ছি তোমাকে।
অহনা একদৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে ছ্ট্টো একটি খাম নিয়ে আসে। আব্বুর সামনে থাকা সোফার টেবিলের কাচের উপর কয়েনগুলো ঝনঝন করে ঢালে। আব্বু দেখেন সেখানে আমাদের দেশের প্রায় সবগুলো কয়েন আছে। এক টাকা, দুই টাকা, পাঁচ টাকা এমনকি কিছুদিন আগের পঞ্চাশ পয়সার কয়েনও আছে। কয়েনগুলো দেখে আব্বু বেশ আশ্চর্য হয়ে বললেনÑ এগুলো তুমি পেলে কী করে?
Ñ টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আব্বু।
Ñ এইতো এভাবেই সংগ্রহ করবে কয়েন।
Ñ কী যে বলোনা তুমি আব্বু। এভাবে তো আমাদের বাংলাদেশের কয়েন সংগ্রহ করেছি। আগামীতে নতুন যে কয়েন আসবে সেটাও সংগ্রহ করে নিতে পারবো। কিন্তু নিজের দেশের কয়েন দিয়েইতো আর সংগ্রহশালা তৈরী করা যাবে না। অন্য আরো অনেক দেশের কয়েন লাগবে। সেগুলো না পেলে তো আর কয়েন সংগ্রহে নেমে লাভ নেই।
Ñ ঠিক বলেছো তো।
Ñ কয়েন সংগ্রহের শখ আমার আগেই হয়েছিলো আব্বু। সংগ্রহ করতে পারবো না বলে শখটা কারো সাথে শেয়ার করি নি। আর করবোও না। মানুষের সব শখতো আর সব সময় পূরণ হয়না, তাই না আব্বু?
Ñ তোমার কথাটা পুরোপুরি ঠিক না আম্মু। সঠিক উদ্দেশ্য, আন্তরিক শ্রম আর একাগ্রতা থাকলে শখ পূরণ হয়। তোমারটাও হবে। তুমি তোমার সখ সবার সাথে শেয়ার করতে পারো।
Ñ কী যে বলো না তুমি আব্বু। শেয়ার করে কী হবে? আগে চিন্তা করো বাস্তবায়ন করা যাবে কী না?
Ñ আমি বললাম তো যাবে। শোন, এখন থেকে আমি তোমাকে কয়েন সংগ্রহে সাপোর্ট দেবো। আমি তো গড়ে প্রতিমাসেই বিভিন্ন দেশে যাই। এখন থেকে যে দেশে যাবো তোমার জন্যে সে দেশের কয়েন নিয়ে আসবো। পাশাপাশি সাপোর্ট নেবো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা আমাদের আন্তীয় স্বজন আর বন্ধু বান্ধবদের।
Ñ সত্যি আব্বু?
Ñ হ্যা, সত্যি।
আব্বুর কথা শোনে খুশিতে নেচে উঠে অহনা। আব্বুর গলা জড়িয়ে ধরে অনেক আদর করে। হাতের কয়েনগুলো দিয়ে সোফার টেবিলের কাচে ঝনঝন শব্দ তুলে। বাপ মেয়ের এমন খুশির জোয়ারে ঘরের অন্য সবাই ছুটে আসে। অনন্যা, ছড়া, দিদা, দাদুভাই, আম্মু এসে খুশিতে সামিল হয়। দিদা জানতে চানÑ তোরা বাপ মেয়ে কী শুরু করলি? এতো খুশির কী হলো রে?
আব্বু বললোÑ কিছু না আম্মা, অহনার সামান্য একটি শখ আছে। সেটা বাস্তবায়ন করবো ঠিক করেছি। এজন্যে সে খুশি হয়েছে। খুশি হয়েছি আমি নিজেও।
অহনা বললোÑ না দিদা। শখটা সামান্য নয়, অনেক বড় মনে হচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। এখন আব্বুর সাপোর্ট পেয়ে মনে হচ্ছে সম্ভব। হুররে...।
দিদা অনেকটা রাগ করার ভান করে বললেন
Ñ আরে রাখ তোর হুররে...। আগে শুনি শখটা কী?
Ñ কয়েন।
দিদা অবাক হয়ে ভূরু কুচকে বললেনÑ কয়েন!!
Ñ হ্যা দিদা, কয়েন। আমি কয়েন সংগ্রহ করবো। এটা আমার অনেক দিনের শখ।
Ñ কয়েন কেউ সংগ্রহ করে নাকি পাগল, কয়েন তো মানুষ খরচ করে।
Ñ সবাই খরচ করলেও কেউ কেউ কয়েন সংগ্রহও করে দিদা। আমিও করবো। কয়েন সংগ্রহ করেই একদিন সবার কাছে স্পেশাল হবো। দেখো তুমি।
আব্বুসহ অন্য সবাই কোন কথা না বলে মিটমিট করে হাসছে। অহনার কথা শোনে দিদা কি বুঝলেন জানি না, বিড়বিড় করতে করতে নিজের রুমের দিকে চলে গেলেন। অন্যরাও চলে গেলো যে যার রুমে। আব্বু আর অহনা আরো কতোক্ষণ কথাবার্তা বললো। যার বেশিরভাগই ছিলো কয়েনের সংগ্রশালা তৈরীর বিষয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০১৮ সকাল ৯:২৮