প্রতিকী ছবি
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত পায়রা বন্দর শুরু থেকেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের সাম্প্রতিক মন্তব্য বিষয়টির গভীরতা আরও উন্মোচিত করেছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, এটি কোনো সমুদ্রবন্দর তো নয়ই, এমনকি নদীবন্দর হিসেবেও কার্যকর নয়।
প্রকল্পটি মূলত কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু এখন এটি একটি বিশাল ব্যয়ে পরিণত হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, শুরুতেই যদি যথাযথ অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সমীক্ষা করা হতো, তবে হয়তো এই প্রকল্প গ্রহণই করা হতো না। এখন যেহেতু প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়ে গেছে, তাই একে বাতিল করাও সম্ভব নয়।
পায়রা বন্দরের প্রকৃত অবস্থা অনুধাবন করতে গেলে দেখা যায়, এটি কোনো আন্তর্জাতিক মানের গভীর সমুদ্রবন্দর নয়। এখানে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না, যার ফলে এটি কার্যত একটি ঘাট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে বিশেষ কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না, বরং বিপুল পরিমাণ সরকারি বিনিয়োগ আটকে আছে।
অন্যদিকে, পরিবেশের উপর এর প্রভাবও মারাত্মক। এ বন্দরের জন্য বিস্তীর্ণ কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুন্দরবনের নিকটবর্তী এই অঞ্চলে এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে পরিবেশগত ঝুঁকি বিবেচনা করা উচিত ছিল।
অর্থনৈতিকভাবে পায়রা বন্দরের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। যদি এটি কেবল কয়লা আমদানির জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে এর লাভজনকতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ফলে কয়লা নির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। যদি কয়লা আমদানি কমে যায়, তবে বন্দরের কার্যকারিতা আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে।
তবে, এ প্রকল্পের ইতিবাচক দিকও কিছু আছে। যেহেতু বিশাল বিনিয়োগ ইতোমধ্যে করা হয়েছে, সরকার যদি যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে একে লাভজনক করার উদ্যোগ নেয়, তবে কিছু সুফল পাওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য উপযোগী করে গড়ে তোলা যেতে পারে, যার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলের সুযোগ তৈরি করা সম্ভব।
সব মিলিয়ে, পায়রা বন্দর বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি হয়তো পরিকল্পনার অভাব বা অপরিকল্পিত বিনিয়োগের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখন সময় এসেছে, প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার, যাতে সরকারের ব্যয় কমে এবং দেশের অর্থনীতি এতে উপকৃত হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২৪