দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলি গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। বিশেষত, বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার দিকে কূটনৈতিক মহলের নজর রয়েছে। সার্ক, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা, গত এক দশক ধরে কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এটি কি আবার কার্যকর হয়ে উঠতে পারে?
সার্কের অচলাবস্থা মূলত ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন থেকে উদ্ভূত। ২০১৬ সালে উরি হামলার পর ভারতের কঠোর অবস্থানের ফলে পাকিস্তানে নির্ধারিত সম্মেলন স্থগিত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ভারত এবং বাংলাদেশ বিমসটেকের দিকে মনোযোগ বাড়িয়ে তোলে, যা দক্ষিণ এশিয়ার পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে উঠেছে।
তবে, ড. ইউনূসের উদ্যোগ একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করছে। তাঁর মতে, সার্ক পুনরুজ্জীবিত করা হলে আঞ্চলিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, যেখানে পাকিস্তানকেও অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। এই প্রস্তাব ভারত কীভাবে নেবে, সেটাই এখন মূল প্রশ্ন। ভারত যদি সার্কে পুনরায় সক্রিয় হয়, তবে এটি তার ‘প্রতিবেশী প্রথম’ নীতির অংশ হিসেবে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক দৃশ্যপটকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক না করে ভারত সার্কে ফিরবে না বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, বিমসটেক এখনো পুরোপুরি কার্যকর হয়ে ওঠেনি, এবং দক্ষিণ এশিয়ার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং বহিরাগত প্রভাবের কারণে আঞ্চলিক ব্লকগুলোর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যখন আঞ্চলিক শক্তিগুলো নিজেদের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ সুরক্ষায় জোট গঠনের দিকে ঝুঁকছে, তখন দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোও তাদের দীর্ঘমেয়াদী কৌশল নিয়ে পুনর্বিবেচনা করছে।
সার্ক পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নটি কেবল ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয় নয়, বরং এটি বৃহত্তর আঞ্চলিক ভারসাম্যের বিষয়। চীন, যুক্তরাষ্ট্র, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই অঞ্চলের ওপর কৌশলগত নজর রাখছে। ভারত যদি এই অঞ্চলে প্রভাব ধরে রাখতে চায়, তবে তাকে কূটনৈতিক ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে হবে।
এপ্রিলে থাইল্যান্ডে নির্ধারিত বিমসটেক সম্মেলন ইউনূস ও মোদির মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের সুযোগ করে দিতে পারে। এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সার্ক পুনরুজ্জীবিত হবে নাকি বিমসটেকই ভবিষ্যতের দিকনির্দেশক প্ল্যাটফর্ম হবে—এটি নির্ভর করবে ভারত ও বাংলাদেশসহ আঞ্চলিক শক্তিগুলোর সিদ্ধান্তের ওপর।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩১