বাংলাদেশের আসবাবপত্র শিল্প গত কয়েক দশকে ব্যাপক উন্নতি করেছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এই খাতের ধারাবাহিক পরিবর্তন দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রভাব ফেলেছে। সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগ, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং টেকসই ডিজাইনের সংযোজনের ফলে আসবাবপত্র শিল্প এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর ভূমিকা এই শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। অটবি, হাতিল, নাদিয়া, পারটেক্স, বনহিল, রানারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান উন্নতমানের আসবাবপত্র তৈরি করছে, যা শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আধুনিক আসবাবপত্র তৈরিতে সিএনসি কাটিং, ল্যামিনেটেড বোর্ড, স্মার্ট কাঠ ও 3D ডিজাইন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা আসবাবের গুণগত মান বৃদ্ধি করেছে। পাশাপাশি, পরিবেশবান্ধব উপকরণ যেমন বাঁশ, বেত, সুপারি পাতা ও পুনর্ব্যবহৃত কাঠের ব্যবহার ক্রমশ বাড়ছে। এসব নতুন উদ্যোগ একদিকে যেমন পরিবেশের জন্য ভালো, অন্যদিকে ক্রেতাদের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশের আসবাবপত্র শিল্প শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাচ্ছে না, বরং রপ্তানিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আসবাবপত্র রপ্তানি বাড়ছে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখা, নকশায় বৈচিত্র্য আনা এবং টেকসই উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের প্রসারের ফলে ক্রেতারা এখন অনলাইনে পছন্দমতো ডিজাইন কাস্টমাইজ করে অর্ডার দিতে পারছেন, যা এই শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করছে।
সরকার এই শিল্পকে আরও আধুনিক করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফআইডিসি)-কে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন ডিজাইন ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এখন থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দ মতো আসবাবপত্র তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া, সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে কাঠের উৎপাদন বাড়াতে উন্নতমানের ক্লোন রাবার গাছ আমদানি করা হবে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে সুপারি পাতা, বাঁশ ও বেত দিয়ে পরিবেশবান্ধব আসবাবপত্র তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাজারেও বাড়তি চাহিদা সৃষ্টি করতে পারে।
বাংলাদেশের আসবাবপত্র শিল্পের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা বাড়ানোর জন্য ডিজিটাল বিপণন কৌশল গ্রহণ, পরিবেশবান্ধব উপকরণের ব্যবহার বাড়ানো এবং নতুন বাজার সম্প্রসারণের দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। সময়োপযোগী পরিকল্পনা ও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ খুব শিগগিরই আসবাব রপ্তানিতে বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি হতে পারে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৪০