আমার কোন সময়েই জন্মদিন পালন করা হয়ে উঠেনি।অনেক সময় জন্মদিনের দিন আমার যে জন্মদিন সেটিই আমি ভূলে যেতোম। অনেক সময় বিকালে মনে পড়েছে যে আজ আমার জন্মদিন । যাই হোক
জন্মদিনটি আমি আমার আম্মু আব্বু ভাই বোনদের সাথে কাটাতে স্বাচ্ছন্দ ফিল করি। স্পেশালী ভাইবোনের সাথে। আমার ছোট বোন সাদিয়া । পিটাপিটি হওয়াতে ছোটবেলায় আমরা খুব ঝগড়া করতাম। আর এখন আমরা ভাল বন্ধু। সে খুব ভাল করে রান্না করে আমার জন্মদিনে আমাকে খাওয়ায়। তাকে খুব ফিল করি। এবারও চট্টগ্রামে যাব জন্মদিনে ভাইবোনদের সাথে সময় কাটাতে।
জন্মদিনের ফিলিংসটি ভাল করে আসে আমার মধ্যে জেলখানায়। ২০১০ সালের ৬ ই মে আমি জেলখানাতেই ছিলাম। সকাল থেকে মন আনচান করছিল। কিছুই ভাল লাগছিলনা। ভাইবোনদের খুব মিস করছিলাম। বন্দী থাকার দুঃখ আমাকে তীব্রভাবে টাচ করছিল। বন্দী খাচাঁটা থেকে পাখির মত ফুরুৎ করে উড়ে বাড়িতে চলে যেতে ইচ্ছা করছিল। দুঃখ খুব তীব্রভাবে মনের দোড় গোড়ায় কড়া নাড়ছিল। এমনিতে আমার কাছে জেলেপড়াটাই হাস্যস্পদ লাগত। মনে হত মিথ্যা। মনে হত আমি ঘুমে স্বপ্নে দেখছি। ঘুম ভেঙ্গে গেলে বাড়ি চলে যাব।
আমি বুঝতে চেষ্টা করলাম "সব ছেলেমেয়েরা আমার মত ব্যস্ত থাকে না। ব্যস্ততা কম থাকা মানুষগুলোর নিকট বিনোদনের উপলক্ষটা খুবই উচ্ছ্বাসের ও আনন্দের"। ক্লাশ টেনে সাথী হওয়ার পর থেকেই ব্যস্ত সময় কেটেছে আমার ।তাই হয়ত আমার নিকট জন্মদিনটা উপভোগ্য মনে হয়নি। কিন্তু জেলখানার অলস সময়ে আমার কাছে জন্মদিনটাকে অসহ্য ভাবে মনে হয়েছে। পীড়া দিয়েছে।
ইসলাম এমন নির্মম নয় যে জন্মদিনের মত মানুষের নির্মল আনন্দটুকু কেড়ে নেবে। মনে রাখতে হবে হারাম না হলে সব জায়েজ। আর কোরআন হাদীসে হারাম এর সীমারেখা স্পষ্ট। হারাম নিয়ে কোন অস্পষ্টতা নেই। জন্মদিনের মত অনুষ্ঠানগুলো কোর ফরমেটে করা যাবে তা নিয়ে ভাবতে হবে।
দেশীয় কালচার যা হারাম এর সাদৃশ্য নয় তা করা যাবে। সব গুলোকে ইসলামের সাথে সাংর্ঘষিক জায়গায় নিয়ে যাওয়া ইসলামী আদশের্র রাষ্ট্রীয় অবস্থানের জন্য ক্ষতিকর বা সহায়ক নয়। আরবী ব্যকরনের দিকে দৃষ্টি দেন দেখবেন ৯২ টি রুলস আরবের প্রচলিত রুলস আর ৮ টি হল উদ্ভাবিত রুলস। এখানেও প্রচলিত রুলসকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি । যদি প্রশ্ন করা হয় আগে ব্যাকরন না ভাষা? উত্তর হবে ভাষা। কারন শিশু ন্যাচারাল ভাবে ভাষা আগে শিখে পড়ে ব্যাকরন শিখে। একসিসটিং শক্তিগুলো বা বিষয় গুলো ইসলামাইজ করতে হবে। ব্যাংক রাসুলের যুগে ছিলনা। কিন্তু ইসলামের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের রাসুলের যুগের মৌলিক বিষয় গুলো গবেষনা করে কনভেনশনাল ব্যাংক ফরমেট চেইঞ্জ করে ইসলামী ব্যাংকিং হয়েছে । এইটিই ভাল নীতি। এভাবে চলমান বিষয়গুলোর মধ্যে যেগুলো জনপ্রিয় সেগুলোকে ইসলামাইজ করতে হবে। ১লা বৈশাখ, ১লা ফাল্গুন, জাতীয় দিবস, বিবাহ বার্ষিকী, জন্মবার্ষিকী, ভালবাসা দিবস ইত্যাদির ফরমেট চেইঞ্জ করতে হবে। বিরোধিতার ভাল ফল পাওয়া যাবে না। বিরোধিতা করে ইসলামকে সবকিছুর অপজিশনে দাড় করিয়ে দিলে আধুনিক মানুষেরা মূল ইসলামকেই ছুড়ে ফেলে দিবে। ছাড় দেয়ার মানসিকতা জরুরী। হারামগুলোকে কোরআন হাদীসে স্পষ্ট করা হয়েছে । "গেল গেল গেল গেল" জিগির না তুলে আধুনিক মননকে বুঝার ট্রাই করা উচিত। এই মানুষগুলো মজা করতে চায় ও মজা পেতে পায়। বিদাত-ইজতিহাদ-কিয়াস এর সীমারেখাগুলো মুসলিম উম্মাহর ছোটখাট লীডারদেরও ভাল করে বুঝতে হবে।
সারাদিন না না না না করা কিছু ইসলামী পন্থীর ফিতরাত। এরা কেন যে হাঁ হাঁ হাঁ হাঁ বলতে পারে না! আমার বুঝেই আসে না। যত্তসব নেগেটিভ মেন্টালিটির! জনগন কে বল ইয়েস ইয়েস ইয়েস। দেখবেন ওরা খুব খুশি। হারাম না হলে সব কিছুকে হাঁ বলতে হবে।
আমাদের আলেম সমাজ একসময় বলেছিলেন:
১. ইংরেজী শিক্ষা হারাম। একজন ভাই বললেন ঐ সময়ের ইজমা ছিল ইংরেজী না শিখার ব্যাপারে। কুরআন কি বলেছে ইংরেজী না শিখতে??? কুরআনের উপরে মাতবরী করার অধিকার আলেম সমাজকে কে দিয়েছিল?
২. চেয়ার টেবিলে বসে খাওয়া হারাম কারন ঐ টা ইহুদী নাসারাদের।
৩.টিভি দেখা হারাম।
৪. কম্পিউটার ব্যবহার হারাম।
৫. ইন্টারনেট ব্যাবহার হারাম বা বিদাত।
৭. নারী নেতৃত্ব হারাম । অথচ কয়েকদিন আগে দেখলাম কবি মতিউর রহমান মল্লিকের স্ত্রী ইসলামী ব্যাংকের এসিস্টেন্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এসিস্টেন্ট অফিসারদের একটি ট্রেইনিং গ্রুপের পরিচালক।
৮. মেয়েদের স্কুলে যাওয়া হারাম।পর্দা পর্দা পর্দা। এই তথাকথিত আলেমদের কথা শুনলে জনপ্রিয় ব্লগার পুষ্পিতার মত মহিলা ডাক্তার পাওযা যেতনা।
৯.মেয়েদের চাকরী করা হারাম। কেপাবিলিটি ইউজ করা নেতৃত্ব কিনা ভাবতে হবে। মেয়েদের কেপাবিলিটি ইউজ হলে আমি কোন সমস্যা দেখিনা।
১০. বিবাহ বার্ষিকী, জন্মবাষির্কী হারাম।
১১. বাংলা হিন্দুয়ানী ভাষা । এটা শিখা হারাম। অথচ বাঙ্গালী সালের প্রবর্তক সম্রাট আকবর। সম্রাট আকবর দ্বীনে এলাহী নাকি আকবরী শুরু করেছে । তাই তার সাথে শত্রুতা । এই শত্রুতা কয়দিন জিইয়ে রাখবেন??? দেশীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বৈশাখ। যা রবীন্দ্র ভক্তরা কৌশলে তাদের সংস্কৃতিতে রুপান্তরিত করে দিচ্ছে। আকবরের চালু করা জিনিষ হয়ে যাবে রবীন্দ্রনাথের। আর আমরা বৈশাখের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে পারলেই আত্বতৃপ্তি পায়।
এসব স্বল্প দৃষ্টি সম্পন্ন তথাকথিত আলেমদের এখন আমি কমগুরুত্ব দিই। এরা সব কিছুকে ইসলামের বিপক্ষে বলে আত্বতৃপ্তি বোধ করে। আর ইসলাম সম্পর্কে এদের স্টাডিটা ৩৩ মার্কের নীচে। এরা আগে বুঝে না । পরে বুঝে। লাথি খাওয়ার পরে বুঝে। এদের হাতে ইসলামের কোন বিজয় হবে না । এই ব্লগের অনেক তরুন ইসলামী চিন্তাবিদ প্রজন্মকে খুজছে ইসলাম। এই ব্লগের অনেক তরুন ইসলামী চিন্তাবিদদের চিন্তাভাবনাকে প্রাগ্রসর দেখতে পেয়েছি। আমাদের ভাল করে মাথায় ঢুকাতে হবে "ইসলাম এমন নির্মম নয় যে মানুষের নির্মল আনন্দটুকু কেড়ে নেবে।"
ইয়াসসিরু ওয়ালা তুয়াসসিরু বাশশিরু ওয়ালা তুনাফফিরু। "সহজ কর কঠিন করনা ,সুসংবাদ দাও বিতশ্রদ্ধ করনা।" এটাকে ইসলাম প্রতিষ্টার মূলনীতি বা স্ট্রাটেজি বানাতে হবে। ছাত্রশিবিরের সফলতার বড় কারন হল ইয়াসসিরু ওয়ালা তুয়াসসিরু বাশশিরু ওয়ালা তুনাফ্ফিরু। ছাত্রী সংস্থাও ইসলামকে কঠিন করেছে। দাওয়াতী কাজে এরা আনসায়েন্টিফিক। শিবির সহজ করে ইসলামকে উপস্থাপন করে সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। এগিয়ে যাও শিবির । তোমাদের দিকে তাকিয়ে আগামীর বাংলাদেশ । তোমরা আমাদের আশাহত কর না। তোমরাই পারবে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে।তুরস্ক , ইরান, মিশর, তিউনিসিয়ার পথে হাটবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের হাত ধরে। ছাত্রী সংস্থাকে যদি শিবিরের মত মডারেট হিসেবে পাওয়া যেত!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!! তাহলে আমরা আগামীর বাংলাদেশের ইতিহাসটা খুব দ্রুত লিখতে পারতাম।