বিডিয়ার বিদ্রোহে গ্রেফতারকৃত বিডিযারদের সাথে দেখা:
কখনো ভাবিনি ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০০৯ সালে সংঘটিত স্মরনকালের ভয়াবহতম বিডিয়ার বিদ্রোহের কারনে গ্রেফতারকৃত বিডিয়াদের সাথে দেখা হয়ে যাবে। শিবিরের একটি গ্রুপকে জেলখানায় পেয়ে তারা অনেক খুশি হয় এই কারনে যে কিছু শিক্ষিত পোলাপাইনের সাথে কথা বলতে পারবে। জেলখানার অশিক্ষিত বর্বর অপরাধীদের সাথে থাকতে থাকতে তারা অত্যন্ত বোর হয়ে গিয়েছিল। আমাদের সাথে তারা অত্যন্ত অমায়িক ব্যবহার করত। আমাদের হেল্প করতে পারলেই যেন তাদের স্বস্তি।
একদিন কথা হয় বিডিয়ার হাবিবের সাথে। সীমান্তে বিএসএফের সাথে কঠিন এক যুদ্ধে অল্পের জন্য বেচে যায় সে। পদুয়া না কি বেরুবাড়ী কি যেন নাম বলেছিল । ঐ যে গত আওয়ামী টার্মে (৯৬-২০০১) এ ঘটেছিল বিএসএফের সাথে ।আওয়ামীলীগ ভারতকে সরি বলে দিল সাথে সাথে । তারা আমাদের ভূখন্ড দখল করবে । আর প্রতিরোধ খাইয়া কচুকাটা হওয়ার পর শেখ হাসিনা বলে দিল সরি দাদা! বিডিয়ার হাবিব উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলছিল ১৯৭১ সালের যুদ্ধ দেখিনি। কিন্তু আমি দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি । আমাকে কেন শাস্তি পেতে হবে??? আমি জীবন বাজী রেখে দেশের জন্য যুদ্ধ করে আমাকে শাস্তি পেতে হলে এই দেশকে লাথি মারি!!!!
আমি তাকে বলতে পারিনি এটি বাংলাদেশ । এখানে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম । আওয়ামীলীগের কাছে ভারতের বিপক্ষে কিছু করা কোন বীরত্বের কাজ নয় । দেশের চেয়ে এখানে রাজনীতিটা বড়। দেশের মানুষের চেয়ে নিজের স্বার্থটা বড়। প্রজন্মের সমস্যা সমাধানের চাইতে বিচার খুনোখুনি এদের কাছে বড়। শেখ মুজিবের খুনিদের কানাডা থেকে আনলে আর ভারতকে সব দিয়ে দিলে বাংলাদেশ সিংগাপুর হয়ে যাবে। আমার ছোট ভাই ফান করে একটা কথা বলে আর তা হল "ভাইয়া, বাংলাদেশটাকে কেন আমেরিকা দখল করেনা? আমেরিকা দখল করে নিলে তো আমাদের ডিভিও দিতে হতনা আর আমেরিকা যাওয়ার সময় পাসপোর্ট , ভিসাও লাগত না। আর আমরা হয়ে যেতাম উন্নত দেশের নাগরিক।" আমি উত্তরে হেসেছি। বললাম এত সহজ সমীকরন পৃথিবীতে হয় না। ব্রিটিশরা এই দেশ দখল করে এইদেশকে ব্রিটেন বানায়নি।
আমাদের স্কুলের শান্ত নম্র মিশুক পরোপকারী ধার্মিক ছেলেটির নাম হল আনছার। পরে সে বিডিয়ারে যোগ দেয়। পরিবারে শান্তি ও আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসে। সেই ছেলেটিও চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জত থেকে গ্রেফতার হয়। সে ছিল অনডিউটিতে। বায়তুল ইজ্জতের অদুরে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী অবস্থান নেয় । তখন বিডিয়ার আনছার সহ অনেকেই ছুটোছুটি করে। এবং ফাকাঁ গুলি ছোড়ে।
গোলযোগ পূর্ন পরিবেশে তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে এমন করে । নম্র এই ছেলেটির সাত বছর জেল হয় এক প্রকার বিনা অপরাধে।
ঘরে তার নতুন বউ।নতুন বউটি স্বামীর বিরহে কাতরায়।বউটির প্রতিটি রাত আর দিন কাটে স্বামীর বিরহে। যৌবনের কামনা গুলো তাদের কুকড়িয়ে মারে। চোখের কোনে ফিনকি দেয় বিরহের অশ্রু। তবুও উপায় নেই । স্বামী-স্ত্রীর মধুর প্রেম ৭ বছরে আর ঘটবে না । হাহাকার আর কান্নার গোঙ্গানী জেলখানার দেয়ালে আছড়ে পড়ে হারিয়ে যাবে । কেহ তাদের উদ্ধার করবে না জেলের অপমানজনক বন্দীত্ব থেকে।
তার বক্তব্য হল আমরা মনে করেছিলাম আর্মি আমাদের মেরে ফেলবে তাই আমরা জানের ভয়ে এমন করেছি। ঢাকার ঘটনার সাথে ঢাকার বাইরের কোন ঘটনার যোগসাজস নেই। তারা অতি উৎসাহের কারনে ভূলগুলো করেছে । তাদের মাফ করে দিন । বয়স কম আর তারা তো এদেশেরই সন্তান ।
আরেক বিডিয়ার এর সাথে কথা হয় । গ্রেফতার হওয়ার ৫ দিন আগে তার এনগেজমেন্ট হয় প্রেমিকার সাথে। তারা দুজন দুজনকে পছন্দ করত। কিন্তু পরিবার মেনে নিচ্ছিলনা । অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের মিলনের পথে তারা পারিবারিক সম্মতিতে এনগেজমেন্ট এর মাধ্যমে এগিয়ে যায়। এই বিডিয়ারের বয়স ৩৫। তার ৭ বছরের জেল হয় । সে আমাকে বলল আমার প্রেমিকাকে তো আমি আর পাবনা । কনে পক্ষ অন্য জায়গায় বিয়ে দিযে দিবে। তারা তো এখন ছুতো পেয়েছে। আর আমিও কোন মুখে তাকে অপেক্ষা করতে বলব! আর আমার যখন ৪২ বছর বয়স হবে তখন জেল থেকে বের হলে কেউ কি আমাকে আর মেয়ে বিয়ে দিতে চাইবে? মধ্যব্ত্তি ঘরের এই যুবক গুলো ভূল করতে পারে কিন্তু কোন অপরাধ করতে পারেনা। কারো যদি কোন সামান্য মায়া দয়াও থাকে তাহলে ওদের মাফ করে দাও।
আওয়ামীলীগ সমর্থক অনেক বন্দী বিডিয়ারকে আমি আওয়ামী লীগের উপর কঠিন প্রতিশোধের শপথ নিতে দেখেছি।
বিডিয়ারের যৌক্তিক দাবীগুলো দেশের স্বার্থে যথাযথ কর্তৃপক্ষের শুনা উচিত। তারা স্বতন্ত্র বিডিয়ার বাহিনী চায়। আর্মি থেকে ধার করে এনে নেতৃত্ব দিক তারা এটা চায় না। প্রয়োজনে আইন সংশোধন হোক। দেশরক্ষী বাহিনীর ভিতর বিদ্রোহের আগুন পুষে রাখা দেশের জন্য মংগল নয় । মহান আল্লাহ এই সহজ সত্যটি সংষ্লিষ্ট সবাইকে বুঝার তৌফিক দিক। আমীন....
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১২ রাত ১০:৩৩