somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘ নিয়ে আলাপন - ছবি ব্লগ।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলা সাহিত্যের আকাশে মেঘের আনাগোনা শরতের শুভ্র কাশফুলের মতই। কখনো তা শুভ্রতার প্রতীক, কখনোবা বিষন্ন মনের প্রতিচ্ছবি। আবার কখনোবা প্রেমিক মনের পরমোচ্ছাসের তীব্র বহিঃপ্রকাশের মাধ্যম এই মেঘ । আকাশে এদের বৈচিত্রময় উপস্থিতিই জানান দেয়, এরা কত উপায়ে আমাদের মনের মাঝে ভাবের বাহন হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই কেবল সাহিত্যিক মনের মাঝেই নয়, ভাবহীন মনের মাঝেও একটু রসবোধ জাগ্রত করতে জুড়ি নেই এই কখনো-শুভ্র-কখনো-ঘন-কালো বারি-সঞ্চারীর।

ভাদ্দুরে রোদ্দুরে যখন অবস্থা প্রায় চরমে, আকাশের এক কোনে শুভ্র মেঘের উপস্থিতি আমাদের মনে আশার সঞ্চার করে- এই বুঝি সুতীব্র ঘন কালো রুপ ধারণ করে আমাদের চারপাশ ভিজিয়ে দিয়ে একটু প্রশান্তির বরষ নিয়ে এলো। কিন্তু বৈশাখের আকাশে এই মেঘই ধারণ করে এক ভয়াল মুর্তি। মুহুর্তেই ঘনকৃষ্ণ রুপ ধরে, চারিপাশ অন্ধকার করে, এমনভাবে উপস্থিত হয়; যেন সমগ্র ধরাটাকে একেবারে এক গ্রাসেই গিলে ফেলবে। তারপরই শুরু হয় অঝর ধারা। সেই সাথে যদি মলয়বাবু তাঁর তান্ডব নৃত্য নিয়ে সশরীরে হাজির হন, তাহলে তো কথায় নেই।

দূর আকাশে দৃষ্টি দিলে কখনো এমন দেখা যায় যে, আকাশের সাথে সাথে মেঘও যেন পৃথিবীর সঙ্গে মিতালী করেছে। মেঘ-মাটিতে মিলেমিশে একেবারে একাকার। মেঘ-মাটিতে মাখামাখি যেন নববধুর পতির প্রতি প্রগাঢ় ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। আবার কখনো এমন মনে হয় যে, মেঘের চাদরে গা ঢাকা দিয়েছে সুনীলবসনা। মেঘের সাথে মিতালী করে আকাশ এই যে নানা সময়ে নানা রুপে তার আবির্ভাব ঘটাচ্ছে, একটু করে হলেও আপনার অরন্যমৃগবৎ ছুটে চলা জীবনের রাশ টেনে ধরতে তার জুড়ি নেই। আপনাকে একটু করে হলেও ভাবাচ্ছে। অথবা, আপনার দীর্ঘ-বিলম্বিত কাজকে আরও একটু প্রলম্বিত করছে। আর এতেই প্রমানিত হয়; আপনি কতটা প্রভাবিত হন, নানা পসরা-সাজিয়ে-উপস্থিত হওয়া এই বাহারী মেঘের রুপ দ্বারা।

তবে, সাদা মেঘের দলই শুধু নয়, আপনাকে ভাবুক করে তোলার জন্য কৃষ্ণরঙা মেঘও কোন অংশে কম যায়না। সারাদিনের কর্মক্লান্তির পর বাড়ি ফিরছেন, হঠাৎ দেখলেন, সময়ের সান্ধ্য প্রসাধনের মত অন্ধকার নেমে আসলো আর পশ্চিমাকাশে মাথাচাড়া দিয়ে জেগে উঠলো এক খন্ড কালো মেঘ। কালবোশেখীর দূর্গারুপ ভুলে গিয়ে যদি আপনি আপনার প্রেয়সী মেঘসম ঘন কালো কেশরাজির কথা মনে করে একটু বিচলিতও হন, তাতে বিস্ময়ে অবাক হয়ে যাওয়ার মত কোন ব্যাপার ঘটেনা। অথবা, আপনি যদি আপনার অন্তরব্যাপিনীর কাজল কালো নয়নের কৃষ্ণ সাগরে ডুব দেয়ার কথা ভেবে একটু আনমনা হয়ে যান, ঘন কালো মেঘের দল তাতে লজ্জা পাবে বলেও প্রতীয়মান হয় না।

শরতের সুনীল আকাশে সাদা মেঘ তো যেন শুদ্ধতার প্রতীক। তবে মেঘ কি শুধু আকাশকেই বর্ণিল রুপ দিয়েছে? আকাশে মেঘের ঘনঘটা মানেই তো কবি মনে ভাবের দোলাচাল। রকমারী ভাবে, নানা কথার সাজে কবি তখন ছন্দোবদ্ধ করেন প্রেমের নরম পেলব কবিতা। নজরুলে কথায়ই ভাবুন। বিদ্রোহের ঝান্ডা উচিয়ে ধরা নজরুল, একখন্ড মেঘের কাছেই কেমন নতজানু হয়েছেন! লিখেছেনঃ
কাহার্‌ ও-মেঘোপরি গমন গম-গম?
সখি রে মরি মরি, ভয়ে গা ছম-ছম!
গগনে ঘন ঘন
সঘনে শোন শোন-
ঝনন রণ রণ-
সজনি ধর ধর।।
(বাদল দিনে)

আরও দেখুন আমাদের প্রিয় পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের কবিতা। মেঘকে উপজীব্য করেই তিনি ক্ষ্যান্ত হননি, তুলে ধরেছেন বাহারী মেঘের রকমফের।
কালো মেঘা নামো নামো, ফুল-তোলা মেঘ নামো,
ধুলট মেঘা, তুলট মেঘা, তোমরা সবে ঘামো!
কানা মেঘা, টলমল বারো মেঘার ভাই,
আরও ফুটিক ডলক দিলে চিনার ভাত খাই!

কাজল মেঘা নামো নামো চোখের কাজল দিয়া,
তোমার ভালে টিপ আঁকিব মোদের হলে বিয়া!
আড়িয়া মেঘা, হাড়িয়া মেঘা, কুড়িয়া মেঘার নাতি,
নাকের নোলক বেচিয়া দিব তোমার মাথার ছাতি!
(নক্সী কাঁথার মাঠ)

সাহিত্যের মত গানের জগৎকেও সমৃদ্ধ করতে অপরিসীম ভুমিকা পালন করেছে এই মেঘমালা। “এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনা যে মন, কাছে যাবো, কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ? ......” গানের এই কথা গুলোর মতই মেঘলা দিনে আপনার মনটা প্রিয়তমার সাক্ষাৎলাভের আশায় একটু উতলা হয়ে উঠবে; সেই তো স্বাভাবিক সত্য। এছাড়াও, হাজারও গান আপনি পাবেন যেখানে মেঘকে উপজীব্য করেই আপনার মনের কথাগুলোর প্রকাশ ঘটানো হয়েছে। ‘মেঘ থম থম করে, কেউ নেই ......”, ‘মেঘ কালো, আঁধার কালো, আর কলংক যে কালো, ......”, “মেঘ হলে মন, বিকেল বেলায় একলা যেতাম মেঘের বাড়ি ......” এই গানগুলো সেই রকম কিছু গানেরই উদাহরণ। মেঘ নিয়ে তৈরি ইত্যাদি হাজারো গানের সাথে সুর মেলাতে গিয়ে আপনি যদি মেঘের প্রেমে আকন্ঠ নিমজ্জিত হোন, আপনার চলার গতিতে অবলা বলের প্রভাব প্রতক্ষ্য করা মোটেও বিচিত্র কিছু নয়।

মেঘ যে শুধু মানব মনকে প্রভাবিত করছে এমনটি ভাবার কোন সুযোগ নেই। প্রাণীকূলের মধ্যে এর প্রভাব সমভাবে প্রতক্ষ। মেঘলা দিনেই যে কেবল ময়ুর পেখম তুলে নাচে, কেকা সুরে ডাকে, এ তো আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×