ছাত্ররাজনীতি মুক্ত খুবিতে শিক্ষক রাজনীতি চরমে: ছাত্রদের উপর পুলিশি হামলা
অরাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত আমাদের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। রাত ১টায় ঘোষণা করা হ'লো কাল ভোর সাড়ে ৬ টার মধ্যে খালি করে দিতে হবে সমস্ত হল। কারণটা চরমভাবে রাজনৈতিক। আমার শ্রদ্ধেয় (!!!) শিক্ষকেরা একজন বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতা ও প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শাহ নেওয়াজকে রক্ষা ক'রতে ছাত্রদের উপর পুলিশ দিয়ে টিয়ার গ্যাস ছুড়েছেন। এতে আহত হয়ে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে। ভাবতেই অবাক লাগে, এটা নাকি অরাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয়!!! এখানে ছাত্র সংসদ না থাকলেও, মহান শিক্ষকদের জন্য রয়েছে অরাজনৈতিক (!!) শিক্ষক সমিতি।
ঘটনার একটু পিছনে ফেরা যাক। চার পাঁচ দিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের খানজাহান আলী হলের পাশের ফ্লেক্সীলোড-এর দোকানে বাল্যান্স টপ-আপ করতে এসে দোকানীর সাথে কথা কাটাকাটি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্কি ’০৫-এর ছাত্র নাহিয়ানের। উল্লেখ্য, ফ্লেক্সীলোড-এর দোকানের মালিক সেই বিশিষ্ট আওয়ামীলীগ ক্যাডার ও প্রথম আলোর ফটো সাংবাদিক শাহ নেওয়াজ। ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিৎ ছিলেন এই দাপুটে (!) নেতা। ঘটনার এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নাহিয়ানকে মারধর করেন ও মোটর সাইকেলযোগে তৎক্ষনাৎ পালিয়ে যান সেই মহান নেতা (!)। যিনি এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবেই পরিচিত। এই ঘটনার জের ধরেই তার (নেওয়াজ) বিরুদ্ধে গত ২৬ মার্চ মামলা করা হ'য়েছে।
গতকাল (এপ্রিল ৫, ২০১০) বিকেলে তিনি বেশ বুক ফুলিয়ে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করার জন্য প্রথম আলো’র একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ক্যাম্পাসে আসেন এবং ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের কক্ষে বসে নাস্তা করেন । ছাত্রদের প্রথম প্রশ্ন ছিলো, ক্যানো তাকে পুলিশ এখনো গ্রেফতার করেনি। এমতাবস্থায় খুব দ্রুতই পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে ক্যাম্পাসে। ইতিমধ্যেই খবর চলে যায় ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের (DSA)-এর কানে। সাধারন ছাত্ররা ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের কাছে দাবী করে যে, শাহ নেওয়াজ কে তার কৃত কর্মের জন্য জনসম্মুখে ক্ষমা চাইতে হবে। কিন্তু ছাত্র বিষয়ক পরিচালক বলেন যে, সেটা সম্ভব নয়, কারন সে ছাত্রলীগ নেতা ও প্রথম আলো’র ফটো সাংবাদিক। এদিকে সেই মহান নেতার ক্ষমা চাওয়া ও পুলিশ কর্ত্তৃক গ্রেফতারের দাবীতে প্রায় তিন শতাধিক সাধারণ ছাত্র অনড় অবস্থান নিতে শুরু করে। ছাত্ররা সংঘবদ্ধ হ'তে শুরু ক'রলেই ফোন ক'রে আনা হয় দাঙ্গা পুলিশ। উল্লেখ্য, সেই মহান নেতার সমর্থনে ততক্ষণে স্থানীয় আওয়ামী’ কর্মীরা ক্যাম্পাসে ভীড় জমাতে শুরু করে। ইতোমধ্যে দুই প্লাটুন দাংগা পুলিশ এসে উপস্থিত হয়। এক সময় কিছু বিক্ষুব্ধ ছাত্র (অনেকের মতে, স্থানীয় আওয়ামী কর্মীরা) ২নং ভবনের জানালার কাচ ভাঙচুর করে। তখনি পুলিশ ছাত্রদের উপর কাদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
অরাজনৈতিক ছাত্র হওয়ার সুবাদে খুব সহজেই টিয়ার গ্যাস মেরে কাবু করা সম্ভব খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের।
ফলাফল- অনির্দিষ্ট কালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ভ্যাকেন্ট। এই হল অরাজনৈতিক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।
কয়েকটি প্রশ্ন-
১. অরাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নিরীহ ছাত্রকে মারধর করা হলো, মামলা হ'লো কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার ক'রলো না ক্যানো?
২. সেই আওয়ামী নেতা ক্যাম্পাসে ঢোকে কোন ব্যাকআপে?
৩. আমাদের শিক্ষকদের কী স্বার্থ একজন আওয়ামী সন্ত্রাসীর জন্য কয়েক শত ছাত্রের উপর টিয়ার গ্যাস মারবার?
৪. মাত্র একজন সন্ত্রাসীর জন্য সাড়ে ৪ হাজার ছাত্রের ভবিষ্যত অনিশ্চিত ক্যানো?
প্রথম আলোর মিথ্যাচারঃ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল সোমবার রাতে প্রথম আলোর স্থানীয় আলোকচিত্রী শাহ নেওয়াজকে ধাওয়া করা এবং ক্যাম্পাস থেকে বের হতে না দেওয়ার জের ধরে ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। শিক্ষার্থীরা আজ সকাল সাড়ে ছয়টার মধ্যে হল ত্যাগ করেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটি স্বার্থান্বেষী মহল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। হলে বহিরাগতদের উপস্থিতি এবং এ ব্যাপারে সন্দেহজনক আচরণের কারণে পুলিশ হলের তত্ত্বাবধায়ক ও দুজন নিরাপত্তাকর্মীকে আটক করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রথম আলোর আলোকচিত্রী শাহ নেওয়াজ গত সোমবার বিকেলে বন্ধুসভার সহযোগিতায় আয়োজিত এইডস ও মাদকবিরোধী এক অনুষ্ঠানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। পূর্ব ঘটনার জের ধরে এ সময় অনুষ্ঠানস্থল ২ নম্বর একাডেমিক ভবনের সামনে একদল ছাত্র তাঁকে ধাওয়া ও লাঞ্ছিত করেন। একপর্যায়ে শাহ নেওয়াজ শিক্ষকদের সহায়তায় ২ নম্বর একাডেমিক ভবনে আশ্রয় নেন। এরপর উত্তেজিত ছাত্ররা ওই ভবনের সামনে জড়ো হতে থাকেন এবং শাহ নেওয়াজকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানান। বিশ্বদ্যািলয়ের সহ-উপাচার্যসহ শিক্ষকেরা পরিস্থিতি শান্ত করতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ছাত্ররা তাঁদের দাবিতে অনড় থাকেন। রাত ১২টা পর্যন্ত অচলাবস্থার একপর্যায়ে ছাত্ররা ২ নম্বর একাডেমি ভবনের দরজা ও জানালার কাচ ভাঙচুর করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে পুলিশ ক্যাম্পাসে ঢুকে কাঁদুনে গ্যাস ছুড়ে করে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ছয় ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে শাহ নেওয়াজ মুক্ত হন। উত্তেজিত ছাত্ররা এ সময় ফিসারিজ বিভাগের ল্যাব, সার্লি ইসলাম লাইব্রেরি ও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির জানালার কাচ ভাঙচুর করেন। পরে খানজাহান আলী হলে জড়ো হয়ে সেখানেও ভাঙচুর শুরু করা হয়। তাঁরা এ হলের নামফলক, সিকিউরিটি রুম, অতিথি কক্ষ ও অফিস কক্ষ ভাঙচুর করেন। তাঁরা অফিসের দরজা ভেঙে ভেতরের ফ্রিজ, ফ্যান ও কিছু মালামালও ভাঙচুর করেন।
গভীর রাতে উপাচার্য সাইফুদ্দিন শাহর সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সাধারণ ছাত্ররা আজ সকালেই হল ত্যাগ করেন। তবে খানজাহান আলী হলের সামনে সকাল সাড়ে ছয়টার পরও ছাত্রদের জটলা দেখা যায়। পরে পুলিশ ছাত্রদের হল ছাড়তে বাধ্য করে।
হলে বহিরাগতদের উপস্থিতি এবং এ ব্যাপারে সন্দেহজনক আচরণের অভিযোগে পুলিশ হলের তত্ত্বাবধায়ক ও অফিস সহকারী মোশারফ হোসেন, নিরাপত্তাকর্মী শেখ মো. আবদুল্লাহ ও জাহাঙ্গীর আলমকে আটক করে।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে একটি দোকানে তুচ্ছ ঘটনায় একজন ছাত্রের সঙ্গে শাহ নেওয়াজের বচসা হয়। পরে প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের মধ্যস্থতায় বিষয়টির সুরাহা করা হয়।
শাহ নেওয়াজকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আজ বেলা ১১টায় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সভা হয়। সভায় বক্তারা ন্যক্কারজনক এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় এ ঘটনা তদন্তে নয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সূত্রঃ এখানে
স্থানীয় পত্রিকা পূর্বাঞ্চলের মিথ্যাচারঃ
ফটো সাংবাদিককে অবরুদ্ধ করে রাখাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় আজ মঙ্গলবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আজ ভোর সাড়ে ছ’টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডঃ সাইফুদ্দিন শাহ্রে সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের জরুরী এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। গতকাল প্রথম আলোর নিজস্ব ফটো সাংবাদিক শাহনেওয়াজকে (২৮) খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) এক দল ছাত্র বিকেল ৫টায় অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় একাডেমিক ভবনে আটকে রাখে। ফটো সাংবাদিক শাহনেওয়াজ খুবির ক্যাম্পাসে প্রথম আলো বন্ধু সভার একটি অনুষ্ঠানে গতকাল সোমবার বিকেলে ছবি তুলতে যান। বিকেল ৫টায় অনুষ্ঠান থেকে অফিসে ফেরার পথে স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের কয়েকজন ছাত্রের উস্কানীতে ২০/২৫ জনের একদল ছাত্র তাকে অপহরণ করে ছাত্র হলে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে খুলনার কর্মরত সাংবাদিকরা
ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা ক্যাম্পাসের ভিতরে প্রবেশ করতে গেলে উচ্ছৃংখল ছাত্ররা সাংবাদিকদের ভিতরে প্রবেশ করতে দেয়নি। এসময় তারা সাংবাদিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এবিষয়ে সাংবাদিকরা খুবির ভিসির সাথে
মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেন। সন্ধ্যা ৭টায় কয়েকজন শিক্ষক ফটো সাংবাদিক শাহনেওয়াজকে ছাত্রদের কবল থেকে উদ্ধার করে প্রশাসনিক ভবনের একটি কক্ষে নিয়ে যান। খবর পেয়ে উচ্ছৃংখল ছাত্ররা প্রশাসনিক ভবনে হামলা চালায় এবং শাহনেওয়াজকে তাদের কাছে দিয়ে দিতে বলে। পরবর্তীতে প্রো-ভিসি ডঃ পূর্ণেন্দু গাইনসহ অন্যান্য শিক্ষকরা ছাত্রদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন। ছাত্ররা তাদের দাবিতে অনড় থাকায় রাত পৌনে একটায় দুই প্লাটুন দাঙ্গা পুলিশ ক্যাম্পাসের ভিতরে প্রবেশ করে। পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে ছাত্ররা উত্তেজিত হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে প্রথমে লাঠিচার্জ এবং পরে কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এমন পরিস্থিতিতে এক পর্যায়ে ফটো সাংবাদিক শাহনেওয়াজ নজর এড়িয়ে কোনমতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে সক্ষম হন। এঘটনায় সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। (সূত্র )
[০৬.০৪.১০ -এ দৈনিক পুর্বাঞ্চল-এ প্রকাশিত।]
লেখাটিতে আরো যে সূত্র টি ব্যাবহৃত হয়েছে।
এছাড়াও এখানে দেখতে পারেন।