আজকের সন্ধ্যাটা আমার জন্য স্বাভাবিক ছিলো না । সারাদিনের কিছু পরাজয়, কিছু গ্লানি আমাকে আঁকড়ে ধরেছিল পরগাছার মত । মাথা তীব্রভাবে ঝিমঝিম করেছিলো, সবকিছু ঝাপসা লাগছিলো, মনে হয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যে মাঠের কিনার ঘেঁসে যাওয়া রাস্তার মধ্যে পড়ে যাব । পড়ে যাওয়াটা বেশ লজ্জাজনক হবে ভেবে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করেছি । এভাবে মাতালের মত কতক্ষণ হেঁটেছি মনে পড়ছে না । ঘড়িতে এখন রাত দু'টোর ঘন্টা বাজছে । ঘরের মধ্যে ভেজা ভেজা একটা পরিবেশ বিচরণ করছে । হঠাৎ করে ঘরটাকে অনেক বেশি অচেনা মনে হচ্ছে । ঘরের দরজা জানালাগুলো যেন আমাকে চিনতে পারছে না । সন্ধ্যায় ক্লান্ত শরীর নিয়ে ফ্রেশ না হয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলাম । বৌয়ের কিছু বকাঝকা এখনো কানে বাজছে । রাত একটায় যখন ঘুম ভেঙ্গে যায় তখন বৌ বাচ্চা ঘুমিয়ে গেছে। অহেতুক কোন কারণ ছাড়াই আমার ঘুম ভেঙ্গে যায় হয়তো ক্লান্তিটা শরীর থেকে কেটে গেছে বলে । কিন্তু মনের ক্লান্তি আমি এখনো অনুভব করছি। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিজ হাতে নিয়ে রাতের খাবার খেলাম । এরপর বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম, বাইরে বেশ কুয়াশা পড়ছে । একটু কফি পানের লোভ হচ্ছে, ভাবছি বৌকে জাগাবো কিনা । কিন্তু এতো রাতে... । আবার ভাবলাম না জাগাই, দুইজন একসাথে কফি খাব । অনেক দিন হয় এমন মাঝরাতে উঠে দুইজন একসাথে কফি খাই নি । বিয়ের প্রথম দিনগুলোতে আমাদের এমনি পাগলামী চলতো । তারপর আমরা ধীরে ধীরে মানসিকভাবে নিজেদের বয়স বাড়িয়ে দেই । এখন আর এসব ভাবার কারণ নেই, বৌকে জাগাতে পারি কিনা চেষ্টা করে দেখি । রুমে গিয়ে দেখি ওরা ঘুমাচ্ছে, আমার মেয়েটা বেশ বড় হয়ে গেছে দেখছি আল্প ক'দিনে । তার মায়ের বুক থেকে সে বেরিয়ে পড়েছে । আমি বৌয়ের কাঁধে হাত দিয়ে জাগাতে যাচ্ছি এমন সময় সে পাশ ফিরে । তাকে দেখে আমি আর হাত বাড়াতে পারি নি । কারণ সে আমার বৌ নয় সে অন্য কেউ । মেয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে সেও আমার মেয়ে নয়। আমি তাদের থেকে দূরে সরতে থাকি । রুম থেকে বের হয়ে আসি, আমার কাছে সবকিছু অচেনা মনে হচ্ছে । এই ঘর, দরজা জানালা এগুলো আমার নয়, আমি এই ঘরে কখনো ছিলাম না ।আমি অন্য কারো ঘরে ঢুকে পড়েছি । আমি দূরে সরতে সরতে বারান্দার গ্রীলের বাইরে এসে যাই । নিজেকে ধোঁয়ার মত লাগছে, বাতাসে উড়ছি, উড়ে উড়ে মিলে যাচ্ছি, কোথায় যেন চলে যাচ্ছি...
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৩০