আসিফ উপরের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে, আকাশের রং নীল না হয়ে অন্য কোন রং হতে পারলো না কেন। দুঃখের রং নীল দেয়ার কারণে এই মুহুর্তে আকাশটাকে বিষাক্ত লাগছে তার। চারপাশে চকচকে রোদ, সে সানগ্লাসটা চোখে লাগিয়ে হাঁটতে থাকে, তাড়াতাড়ি বাড়িতে পৌঁছানো দরকার না হয় সে অনেক কিছুই ভুলে যেতে পারে । সে তার রুমের দরজা খুলে সিক্রেট ড্রয়ারটা থেকে মোটা ডায়েরীটা হাতে নেয় । সাধারণত এমন মোটা ডায়েরী বানানো হয় না, কিন্তু সে নিজের জন্য বানিয়ে নিয়েছে । টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালিয়ে দিল, যদিও এখন দুপুর কিন্তু তার পছন্দ রাতের আঁধার, আর এখন তার ভেতর যে ফিলিংস খেলা করছে সেটার জন্য চারপাশটা আঁধারই দরকার । কেইস থেকে কলমটা নিয়ে সে ডায়েরীতে লেখা শুরু করে তার পঞ্চম ব্যার্থ প্রেমের ইতিহাস । এক বছর আগে থেকে তিলে তিলে গড়া প্রেম আজ ঠিক পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভেঙ্গে পড়ে গেল । এই ভেঙ্গে পড়ায় আসিফ ব্যাথার থেকে বেশি অনুভব করছে কিউরিউসিটি ! সে হিসেব করতে লাগলো এই প্রেম থেকে সে কী পেয়েছে, কী হারিয়েছে, কতগুলো সুখের মুহুর্ত ছিল, কতগুলো কষ্টের মুহুর্ত ছিলো ইত্যাদি এবং এই প্রেমের সাথে সে বিগত প্রেমগুলোর তাত্বিক হিসেব নিকেশও কষছে ।
বিগত পাঁচটা প্রেমের মধ্যে কোনটার সাথেই কোনটার তেমন কোন পার্থক্য নেই। সেভাবে শুরু, সেভাবে চলা এবং সেই ভাবেই শেষ । প্রেমিক বিবেচনায় আসিফ যথার্থই সফল কারণ সবগুলো প্রেমই সে নিজে থেকে ভেঙ্গে দিয়েছে । এই সম্পর্কগুলোর মধ্যে আসিফের গভীর কোন এটাচমেন্ট ছিলো না । তবে হ্যাঁ আবেগের দীর্ঘ আদান প্রদানে কিছুটা মায়া প্রতিটা প্রেমেই জন্মেছিলো, তাই ফাইনালি ভেঙ্গে দেয়ার পর কিছুদিন তাকে একটু বিষণ্ণ থাকতে হয়েছে । তবে তার সত্যিকার প্রেম যেখানে আছে সে তুলনায় এসব কিছু মূল্যহীন। তবুও এসব ধকল থেকে সে আজ মুক্তি পেয়েছে কারণ তার আর এরকম মিথ্যে প্রেম করা লাগবে না ।
আসিফের সত্য প্রেমের নাম হচ্ছে সীমা, সে তাকে সীমাহীন ভালবাসে । তবে সীমার কাছে আসিফ সবসময়ই মূল্যহীন ছিল। সীমা তাকে বলেছিল অন্তত পাঁচটা প্রেম করে তুমি দেখাও যে তুমি একজন সত্যিকার প্রেমিক, তবেই আমি তোমার সাথে প্রেম করবো । সীমা তার সাথে কখনো প্রেম করবে না, তাই এমন শর্ত দিয়েছিলো । কারণ সে ভাবতো আসিফের মত হ্যাবলা ধরণের ছেলের দ্বারা তা পাঁচ জন্মেও সম্ভব হবে না । কিন্তু আসিফ শর্তটা খুব সিরিয়াসলি নিয়েছিল এবং একে একে পাঁচটা প্রেম করে নিজেকে প্রমাণ করেছে । প্রতিটি সফল প্রেমের পরই সে সীমাকে আপডেট দিয়েছে, কিন্তু সীমা তেমন একটা পাত্তা দেয় নি । তবে আজ সীমাকে পাত্তা দিতেই হবে, এমন মনস্থির করে আছে আসিফ ।
আজ আসিফ সীমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সে বলছে, তুমি যে শর্ত দিয়েছো আমি তা পূরণ করেছি । সীমা বলে, তুমি যদি সফল প্রেমিক হয়ে থাকো তবে তো পাঁচটা প্রেম করতে পারতে না, কারণ প্রথম জনই তোমার হয়ে এখনো থাকতো । সে বলে, তারা সবাই থাকতে চেয়েছে কিন্তু আমি সব শেষ করে দিয়েছে । সীমা বলে, তুমি এভাবে এতগুলো মেয়ের মন ভাঙলে কেনো? তারাও তো হয়তো তোমাকে মনে প্রাণে খুব ভালবাসতো ? সে বলে, বাসলে বাসতো, সেটা তোমার জেনে কী লাভ ? তুমি শর্ত দিয়েছো আমি তা পূরণ করেছি, এখন তোমার পালা । সীমা বলে, ওরা যদি ফিরে আসে ? সে বলে, ওরা আর আসবে না, ওদেরকে খুব করুণভাবেই ছ্যাঁকা দিয়েছি । সীমা বলে, ছি! তুমি এভাবে তাদের মন ভাঙলে ! আমি তোমার সাথে কখনো প্রেম করতে চাই নি, আর এখনো করবো না, তুমি চলে যাও ।
আসিফ তাকিয়ে থাকে সীমার দিকে । একটু পর শার্টের কলারের ফোল্ড থেকে সে একটা ব্লেট বের করে । আসিফ ব্লেটের কাগজ খুলতে থাকে । সীমা তা দেখে খুব ঘাবড়ে যায়, সে ভাবছে আসিফ আবার নিজের হাত মুখ কাটাকাটি শুরু করে দিবে না তো! আসিফ চকচক করা ব্লেডটা এক সেকেন্ডের মধ্যে সীমার মুখের সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে নিলো । সীমা আসিফের দিকে তাকিয়ে থাকে আর সীমার গলা থেকে চিৎ করে রক্তের স্রোত এসে ঝাপটা দেয় আসিফের মুখে । সীমা গলা ধরে লুটিয়ে পড়ে যায় । আসিফ পকেট থেকে টিস্যু বের করে মুখ মুছতে মুছতে বলতে থাকে, আমি এসবে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছি প্রিয়তম সীমা ! এ বলে উল্টো পথে সে হাঁটতে শুরু করে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:১৪