লোকটা আড়মোড় ভেঙ্গে বেঞ্চি থেকে উঠে বসলো । রাতে একটু ঠান্ডা বেশি পড়লেও এই বেঞ্চিটাতে ঘুমাতে একটু আরাম পাওয়া গেছে, বেঞ্চির পাড়টা উত্তরমুখী তাই উত্তরের বাতাস পাওয়া যায় না । শীতকালের প্রধান দুইটা পরিবর্তন হলো, বাতাস উত্তর থেকে বয়, আর সূর্য দক্ষিণে হেলে যায় । লোকটা এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে না দেখে বেঞ্চির পেঁছনে গিয়ে প্রাতঃকালীন প্রাকৃতিক কর্ম সারতে বসে গেলো । লোকটা জানে সে আজ আর এই বেঞ্চিতে ঘুমাবে না, হয়তো ঘুমাবে অন্য কোন পার্কে, অন্য কোন বেঞ্চিতে । তাই সে এখানে ঘুমানোর পাশাপাশি প্রাকৃতিক কর্মটাও সারলো ।
লোকটা কাজ সেরে উঠে হাত থেকে বস্তাটা ছেড়ে দিলো, আর বস্তাটা তার বুক থেকে পা পর্যন্ত ঢেকে দিলো । পাছার উপরে গোলাপী কালিতে লেখা 'গরীবের বন্ধু বস্তালয়' । সে পার্ক পেরিয়ে রাস্তা এসে পড়লো । স্যুট, টাই, ইন করা ভদ্রলোকগুলো ঝুলছে বাসের হাঁতল ধরে, কেউ কেউ দৌঁড়াচ্ছে সেই বাসে একটু পা ফেলার জন্য। লোকটার দৃষ্টি সে দিকে নয়, রাস্তার কিনার ঘেঁসে সে হাঁটছে অন্য কোন পার্কের খোঁজে, অন্য কোন বেঞ্চির জন্য । সবার উদ্দেশ্য থাকে, তেমনি তারও আছে ।
সকালে জগিং সেরে মাঝ বয়সী দুইটা ভদ্রলোক পার্কের বেঞ্চিতে বসলো । পেপার খুলতে খুলতে একজন বললো, জীবন মানেই যন্ত্রণা, গত তিনমাসে কম্পানির প্রফিট কমেছে দুই শতাংশ, এ নিয়ে খুব টেনশনে আছি, কোম্পানির ভবিষ্যত যে কী হবে কে জানে । অন্যজন এদিক ওদিক কী খুঁজতে খুঁজতে অন্যমনস্ক হয়ে বলতে লাগলো, টেনশানের কী আছে এর আগের মাসেই তো ডাবল লাভ করেছিস । সে বললো, ওতো লাভ হয় নি, স্যোশাল ওয়েলফেয়ার করতে গিয়ে শীত বস্ত্র বিতরণ করেই তো বেশকিছু টাকা খসে গেলো । অপরজন বললো, তোর কাছে কী কোন গন্ধ লাগছে ? সে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক নাক টেনে বললো, হ্যা লাগছে, কোথা থেকে আসছে এমন বিশ্রি গন্ধ ? অপরজন বললো, চল এখান থেকে, অন্য কোন বেঞ্চিতে বসি । এ বলে তারা উঠে গেলো আর বলতে লাগলো, নাহ এ দেশ থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ।
এই বেঞ্চিতে দুর্গন্ধের কারণে কয়েকদিন কেউ বসতে পারলো না । এরপর এদিকে বসতে আর তেমন কেউ আসলো না, আস্তে আস্তে বেঞ্চি ঘিরে ঘাসগুলো বড় হতে লাগলো । একটা সময় বেঞ্চিটা লতাপাতায় পরিবেষ্টিত হয়ে পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে রইলো ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪০