শেষ যে হত্যাটি আমি করি তা ছিলো ৪ঠা নভেম্বর রাত ২টা ১৬ মিনিট ২২ সেকেন্ডে, তখন আমি নিশ্চিত হই তার নিথর হাতটি যখন আমার কাঁদ থেকে নিচে পড়ে গেল । সে আমাকে ভালোবসে জড়িয়ে ধরেছিলো, আমার সন্দেহ হয়েছিল অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে সে তার কোমরে গুজে রাখা চুরিটা গেঁথে দিবে আমার শরীরে । কিন্তু আমি সেই সুযোগ দিতে চাই নি, তাই সে বুঝে উঠার আগেই আমার কোমরে গুঁজে রাখা চুরিটা দিয়ে তার হৃদপিণ্ড বরাবর পিঠ দিয়ে গেঁথে দেই । আমার খুব কষ্ট হয়েছিল, দুই দিনের মধ্যে আমাদের মধ্যে ভালবাসার লেনাদেনা খুব বেড়ে উঠেছিল, পারতাম না একজন আরেকজনকে খেয়ে ফেলতে, সেই ভালোবাসা আমাদেরকে নিয়ে গিয়েছিলো খুনের মিশনে । আর সেখানে আমি জয়ী, তার প্রতিটি টুকরা আমি খুব যত্ন সহকারে খেয়েছি, যেন একেকটা ভালবাসার অমৃত টুকরো, বিশ্বাস করুন তা ছিলো আমার পাওয়া সবচেয়ে গভীর ভালোবাসা । এ কথাগুলো বলে বিও ডপ এক বিদ্ঘুটে কান্না দিলো ।
অমরত্বের বোর্ডে সকলেই হাততালি দিলো, সবার এই বর্ণনাটা পছন্দ হয়েছে, প্রস্তাব রাখা হলো তাকে অমরত্বে পৌঁছার চৌদ্দ ধাপের তের ধাপে উন্নিত করার জন্য । বোর্ড প্রধান সাইন করার আগে কিছুক্ষণ বিও ডপের দিকে তাকিয়ে থাকলেন, তিনি পরীক্ষা করতে চাচ্ছেন বিও ডপ ভালবাসার ব্যাপারে কোন সত্য বলছেনা তো ! কারণ ভালোবাসার বিষয়ে সত্য বর্ণনা দিলে এই পরীক্ষায় উন্নিত করা হয় না বরং নীচে নামিয়ে দেয়া হয় , তাই হতে হবে নিখুঁত মিথ্যা বর্ণনা । বোর্ড প্রধান বিও ডপের মধ্যে তেমন কোন চাপ পায় নি, তাই তাকে তের নাম্বার ধাপে উন্নিত করা হলো । এখন সে আরেকটা পারফেক্ট খুন করলেই অমরত্বের সার্টিফিকেট পেয়ে যাবে । বিও ডপ তের নাম্বার সার্টিফিকেট নিয়ে বোর্ড থেকে বের হয়ে গেল ।
বিও ডপ তার বার নাম্বার কেবিন বন্ধ করে তের নাম্বারে শিফট হয়ে যাবে, আর এই কাজটি করতে হবে সূর্যোদয়ের পূর্বে, না হয় তাকে এক ক্রোশ বছর (একশ বছর ) অপেক্ষা করতে হবে তের নাম্বার কেবিনের দরজার বাইরে । সে দ্রুত তার কাপবোর্ড যানে চড়ে বসলো, সে যান তাকে নিয়ে যাচ্ছে বার নাম্বার কেবিনে । সে বার নাম্বার কেবিন বন্ধ করে আবার যানে উঠে বসলো তেরতে যাওয়ার জন্য । কিছুদূর কাপবোর্ড যান যাওয়ার পর সে অনুভব করলো তার শরীর বারবার কেঁপে উঠছে, তার কাঁপুনিতে কাপবোর্ড যানও কাঁপছে । বিও ডপ বুঝতে পারছে না হঠাত তার শরীরে কি শুরু হয়েছে, বুকের মধ্যে কিছু একটা চেপে ধরেছে তাকে, তার হৃদপিণ্ড যেন ছিঁড়ে যাচ্ছে । কিছুক্ষণ পর সে সজোরে বমি করে দিলো কাপবোর্ড যানের মধ্যে । বিও ডপের চোখ দেখছে বমি করে সে তার হৃদপিণ্ড ফেলে দিয়েছে, হৃদপিণ্ডের গায়ে তার কোড লিখা, হৃদপিণ্ডু ধুক ধুক করছে । কিন্তু তার দেহ এখনো দাঁড়িয়ে আছে । তার ভেতর থেকে অনুভব হচ্ছে আরেকটা হৃদপিণ্ড, আর তার মুখ দিয়ে জোরে জোরে হাসির আওয়াজ আসছে । সেই মুখ হাসি বন্ধ করে বললো, প্রিয় বিও ডপ, আমি সেই যাকে তুমি কয়েক ঘন্টা আগে খুন করে এসেছো । এ ছিলো আমার ধোঁকা, আবার বলতে পারো তোমার জন্য এ আমার গভীর ভালবাসার দৃষ্টান্ত, তোমার শরীরে বয়ে আমি অমরত্ব পাবো ।তুমি জানতে না আমি ছিলাম চৌদ্দ নাম্বার ধাপের ক্যান্ডিডেট, আর অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে আমি অমরত্ব পাবো, আর সেই সিঁড়ি হবে তোমার খুন দিয়ে । তুমি আমার পুরোটা খেয়ে ফেলেছো, সে খাওয়ার মধ্যে আমার হৃদপিণ্ডও ছিলো, সেই হৃদপিণ্ড তোমার স্টোমাকে সার্ভাইভ করে তোমার জায়গা দখল করে নিয়েছে । জানো, তোমাকেই ভালোবেসে আমি এমন রিস্ক নেয়ার সাহস পেয়েছি, আর আমি জয়ী । এই যে দেখো, তোমার মধ্যেই আমার বাস, দেখো আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি ! চেয়ে দেখো আমার মুখের দিকে, আমি কত সুন্দর মিথ্যা স্টেটমেন্ট দিয়েছি, কত নিখুঁত, হা হা হা... ! সে বিদ্ঘুটে হাসি দিয়ে বিও ডপের হৃদপিণ্ড টুকরো টুকরো করে ফেলে দিলো ডাস্টভীনে ।
সে কাপ বোর্ড যান নিয়ে চলে যাচ্ছে তার তের নাম্বার কেবিনে, সেটা শাট ডাউন করে চলে যাবে চৌদ্দ নাম্বার কেবিনে, সেখানে অপেক্ষা করছে অমরত্ব ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:২৬