somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প- তিনটি গুম এবং পকেটমার ।

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২৭ তারিখ সন্ধ্যা,

একজন পকেটমারকে গণধোলাই দিচ্ছে জনগণ । পুলিশ ভিড়ের ভেতর ঢুকতে হিমশিম খাচ্ছে । ততক্ষণে পকেটমার থ্যাঁতলে গেছে, মুখাবয়বের বাকি নেই কিছুই, তার আর কোথাও আত্মা থাকার কথা নয় । তারপরও পিচঢালা রাস্তায় লেপটে যাওয়া টাই স্যুট পরা দেহটির উপরে ক্রমাগত লাথি পড়ছে, ভিড়ের মানুষগুলোর যত ব্যাক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ক্রোধ, হতাশা আছে সব যেন এই পকেটমারের আত্মাহীন দেহে ঢুকিয়ে দিচ্ছে । ভিড়ের কেউ কেউ বলছে, দেশে এখন কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে, পকেটমারেরাও স্যুট টাই পরে, কাকে বিশ্বাস করবেন ! ভিড় থেকে জিন্স, টি শার্ট পরা এক ব্যাক্তি তো তাচ্ছিল্যভরা হাসি দিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে প্রস্থান করলেন, হয়তো মনে মনে বলছে, দেশটা একদম পঁচে গেছে !

২৮ তারিখ দুপুর,

বিশাল জটলার মধ্যে কেউ কেউ রুমাল বের করে মুখ, ঘাড়ের ঘাম মুচছেন । কিছুক্ষণ আগে তাদের অনেক ধকল গেছে, একজন পকেটমারকে আচ্ছা পিটিয়েছে । পুলিশ আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, কিন্তু ততক্ষণে পকেটমারের নাক মুখ চোখ পেট সব গেলে দিয়েছে ক্ষুব্ধ জনগণ । জনগণের এখন আর আস্থা নেই পুলিশের উপর, বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তাদের মস্তিস্ক, তাই যখন তখন আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে । জটলা থেকে চুলে স্পাইক করা, চোখে সানগ্লাস পরা, হাতে স্টাইলিশ ঘড়ি পরিহিত একটা ছেলে মুখে আফসোসের হাসি দিয়ে ডানে বায়ে মাথা ঝাঁকাতে ঝঁকাতে বেরিয়ে গেল, যেন মনে মনে বলছে Poor people, Poor country !

২৯ তারিখ বিকাল,

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কিছু ছাত্র ক্লান্ত শরীর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে, তাদের আশেপাশে আরো অনেক লোক দাঁড়িয়ে আছে, আর রাস্তার মাঝ বরাবর থেমে আছে ভাঙ্গাচুরা একটি বাস । পুলিশ এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে আর একজনের সাথে আরেকজন কথা বলছে, তার পাশ দিয়ে হাতে গ্লাভস পরা দু'জন লোক স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাচ্ছে আপাদমস্তক ছিন্নভিন্ন একটি দেহ । ছাত্ররা বাসের মধ্যে একজন পকেটমার ধরেছে, তাকে মারার পাশাপাশি বাসও ভাংচুর করেছে, তাদের দাবি এসব অসাধু হেল্পার, ড্রাইভাররাও এদের সাথে জড়িত । ছাত্রদের সাথে সাধারণ যাত্রীরাও সাপোর্ট দিয়েছে । শুধু একজন যাত্রী মুখে ছিঃ ছিঃ ভাবের হাসি ফুটিয়ে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে নেমে গেল, হয়তো মনে মনে বলছে, সমাজটা মানুষ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে !

৩০ তারিখ,

টিভি চ্যানেল, সংবাদপত্র এবং অন্যান্য সকল মিডিয়ায় সুশীল এবং রাজনীতিবিধদের সংবাদ সম্মেলন, প্রেস কনফারেন্স, টক শো তে উত্তপ্ত হয়ে আছে । বিরোধী দলীয় নেতারা বলছে, দেশে এখন গুম, হত্যা, সন্ত্রাসের রাজনীতি চলছে । গত তিন দিনে একজন শিক্ষক, একজন ছাত্র, একজন চাকরিজীবী গুম হয়েছে অথচ পেরিয়ে যাওয়া বাহাত্তর ঘন্টায়ও আইনশৃংখলা বাহিনী এর কোন হদিস বের করতে পারে নি । তাদের উপর জনগণের আর কোন আস্থা নেই, তাই জনগণ আজ নিজের হাতে আইন তুলে নিচ্ছে, তার বড় প্রমাণ গত কিছুদিনে গণধোলাইয়ের মাত্রা দেখলে বোঝা যায় । জনগণ আজ ফুঁসে উঠেছে এই অবৈধ সরকারের উপর ।

এদিকে সুশীল ব্যক্তিত্বরা বলছেন, জনগণ আজ অনেক সচেতন । তারা এখন যে কোন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সোচ্চার । তারা আজ পুলিশের উপর ভরসা না করেই নিজেরা নিজেদের রক্ষা করতে শিখেছে । তার বড় উদাহরণ গত কিছুদিনে তিন পকেটমারকে গণধোলাই দেয়া, এই অপরাধীদের নির্মম মৃত্যু এখন যে কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের জন্য ত্রাস । জনগণের তারিফের ধোঁয়া উঠছে দফায় দফায় প্রচারিত টক শো গুলোর কফি মগে ।

টিভির অন্যান্য খবরে বলছে, মৃত পকেটমারগুলোর লাশ দাবি করতে তাদের স্বজনের কেউ এখন পর্যন্ত আসে নি । তাই মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত সম্পূর্ণ হওয়ার পর দেহগুলোকে মেডিকেল কলেজের হিমঘরে পাঠিয়ে দিয়েছে স্টুডেন্টদের প্র্যাকটিচের জন্য । এই খবর শুনে ঘরে ঘরে তালি চলছে, চলছে জয়ের মত উৎসব । যুবক বুড়ো, শিক্ষিত অশিক্ষিত সকলেই একমত পোষণ করছে , এসব অপরাধীদের শাস্তি এমনই হওয়া উচিত, কোন মুখে তাদের স্বজন তাদের লাশ নিতে আসবে ।

যদিও পকেটমারগুলোর চেহারা থ্যাঁতলে বিকৃত রূপ ধারণ করেছে । এদিকে থানায় গুমের মামলা তিনটা জমা পড়েছে, পুলিশ ও গোয়েন্দা আপ্রাণ চেষ্টা করছে তাদের খুঁজে বের করতে । এসব নিয়ে নানান দিক থেকে সরকার খুব চাপের মধ্যে আছে, প্রতিনিয়ত গুম হত্যা জনগণকে যেমনি কোণঠাসা করছে তেমনি জনগণের এমন বেপরোয়া আচরণও ভয়ের কারণ ।

১ তারিখ সন্ধ্যা,

আজও চৌরাস্তার মোড়ে জনসাধারণ একজন পকেটমারকে পাকড়াও করেছে । এক লোকের পেছনের পকেটে হাত দিতেই লোকটা হাত ধরে ফেলে পকেটমারের । এরপর কিল ঘুষি শুরু, তার সাথে পিটুনিতে যোগ দেয় উপস্থিত অন্যরাও, যেন এখন জনসাধারণ ওঁত পেতে থাকে পকেটমার ধরার জন্য । পরিশেষে এই পকেটমারের ভাগ্যও আগেরগুলোর মতই হলো, থ্যাঁতলে দিয়েছে সব । কিন্তু আজ ভিড় থেকে কেউ তাচ্ছিল্যমিশ্রিত বাঁকা হাসি মুখে ফুটিয়ে মাথা ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বের হয়ে যায় নি ।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দীপনের দীপ নেভে না

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯


ছবিঃ সংগৃহীত
আজকে সামুর অন্ধকার ব্লগার নামে খ্যাত ফয়সাল আরেফিন দীপনের মৃত্যু দিবস। ২০১৫ সালে আজকের এই দিনে জঙ্গি হামলায় দীপন মারা যান নিজ প্রকাশনীর কার্যালয়ে । যে ছেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বজলুল হুদাকে জবাই করে হাসিনা : কর্নেল (অব.) এম এ হক

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৫৯

মেজর বজলুল হুদাকে শেখ হাসিনা জবাই করেছিলেন।

(ছবি ডিলিট করা হলো)

শেখ মুজিবকে হত্যার অপরাধে ২৮শে জানুয়ারী ২০১০ এ মেজর (অব.) বজলুল হুদা সহ মোট ৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। রাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×