somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রথম ভারত সফর। পর্ব-৫

২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফতেহ পুর থেকে আজমিরের উদ্দেশ্যে বের হচ্ছি-







কখন গিয়ে যে আজমীর শরীফ পৌছাব, আল্লাহ ই জানেন। রামজি বলেছে রাত বারোটা নাগাদ সে হয়তো পৌছাতে পারবে। এখন বাজে মাত্র ২.৪৫!! আমি বিষয়টা ফান মনে করলেও আসলে হয়েছেও তাই। গাড়ি চলছে তো চলছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। আমরা গাড়িতে করে সমানে ছুটে চলেছি। টানা প্রায় ৬০০ কিমি জার্নি! মনের মধ্যে একটু ভয় ভয়ও করছিলো। কি জানি কি হয়? রাস্তার মাঝে যদি গাড়ি খারাপ হয়ে যায়? যদি কোন দূর্ঘটনা ঘটে? যদি কোন খারাপ লোককজনের খপ্পরে পড়ি? নানা রকম শঙ্কা মনে মধ্যে দানা বাঁধতে লাগলো।
(মর্মান্তিক দূর্ঘটনা)



একটি লোকালয়ের কাছে এসে আমরা জ্যামে আটকে গেলাম। দেখি রাজস্থানি মহিলারা মাথায় কলসি করে ঘরে ফিরছে, তাদের মুখ আবার আঁচল দিয়ে ঢাকা। রাস্তার পাশেই বাড়ি গুলো কোনটি পাকা করা, কোনটি কাচা মাটির। বেশির ভাগ বাড়ির সামনে গরু বাঁধা দেখলাম। যেমনটি দেখেছিলাম আগ্রাতে ঢুকতে। জ্যামের মধ্যেই একটু একটু করে কিছু দুর এসেই দেখি একটি মোটরসাইকেল ও ট্রাকের এক্সিডেন্ট। সাইকেলটি পড়ে আছে ট্রাকটির পেটের ভিতর। দেখেই মনটা আরো ঘাবড়ে গেলো। মানুষ মরেছে কিনা কে জানে?









আমরা এগিয়ে চল্লাম। বিকালের দিকে একটি ধাবার সামনে গাড়ি দাড়া করালো রামজি। এগিয়ে চলেছি আমরা জয়পুরের হয়ে আজমীরের পথে। বিকাল হয়ে গেলো। সে ফ্রেশ হলো। আমিও ঐ ধাবা থেকে চা এনে গাড়িতে বসেই খেলাম। ধাবাটি অনেক এনটিক জিনিষ পত্র দিয়ে সাজানো একটি দোকান। অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিষ রদখলাম সেই দোকানে। ওখান থেকে আবার যখন রওনা দিলাম তখন পড়ন্ত বিকেল। রোদ যেনো ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে আসছে।
(সুন্দর ধাবার দৃশ্য)







দূরে পাহাড়ের গায়ে অনেক উঁচুতে মন্দির দেদখা যায়। মন্দিরে নিশান উঢ়ছে পত পত বাতাসে পাহাড় কেটে রাস্তাটা বানানো। বেশ কিছু জায়গায় আমরা পাহাড় দেখলাম। অনেক বড় বড় ফাকা ফাকা মাঠ।

(পড়ন্ত বিকেলে ছুটে চলা আর উঁচু পাহাড়ের চুড়ায় মন্দিরের নিশান চোখে পড়ে......)









ধাবা থেকে রওনা দেয়ার সময় রামজি বল্লো ঐ এক্সিডেন্টে স্বামী স্ত্রী স্পট ডেড, একটি বাচ্চা ছিলো সাথে, তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেলো। বুড়ি তার মায়ের কোলে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে ক্লান্তি অনুভব করলাম। কিন্তু দুচোখের পাতা এক করতে পারলাম না। আজমির কখন পৌছাব, রাত কটা বাজতে পারে ..... এই সবই শুধু চিন্তা করছিলাম। সন্ধ্য নেমে এসেছে। চারিদিকে গাড় অন্ধকার। বেশ কিছুদূর পর পরই টোল দিতে হচ্ছে। সন্ধ্যার পরপরই একটি জায়গায় টোল দিয়ে রামজি গাড়ি আবারো গাড়ি দাড়া করালো। ভালো করে পেপার দিয়ে গাড়ির সামনের উইন্ড গ্লাস মুছে পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিলো। বুঝলাম রাতে গাড়ি চালানোর পূর্ব প্রস্তুতি! ভালোভাবে উইন্ড গ্লাস পরিষ্কার করে আবারো রওনা হলাম আমরা।

মাইল ষ্টোনে তখনো দেখলাম জয়পুর ৩০০ কিমি! আমার বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। জয়পুরই যদি ৩০০ কিমি হয় তাহলে আজমির আর কত দূর ... ... ... ?? গাড়ি চলছে অন্ধকার রাত কেটে। বাইরে বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। যদিও আমরা জানালা বন্ধ রেখেছি। বড় বড় লরি, ট্রাক বাস পাশ কাটিয়ে আমরা এগিয়ে চল্লাম। দিনের বেলায় যে মাঠ গুলো দেখছিলাম, রাতে তা অন্ধকার কুয়োর মতো মনে হচ্ছে। আমরা রাত আটটার দিকে জয়পূরের কাছাকাছি পৌছলাম। আমি চিন্তা করছিলাম, রাতে কি জয়পুরের হোটেলে থেকে পরের দিন সকালে আজমির যাব কিনা? মেয়ের মা আমার মনের কথা বোধ হয় পড়তে পারলো। তাই সে মুখ দিয়ে বলেই ফেল্লো যদি আজকে জয়পুরে রাতটা থেকে কালকে সকালে আজমির গিয়ে জিয়রত করে আসি তাহলে কেমন হয়? আমিও প্রথমে সায় দিলাম। রামজিকে বল্লাম কি করলে ভালো হয়? সে-ও বল্লো রাতে জয়পুর থেকে যাওয়াটাই ভালো। আমি আবার রামজিকে জিজ্ঞেস করলাম জয়পুর থেকে আজমিরের রাস্তা কেমন? কোন সমস্য হয় নাকি? সে বল্লো না ...রাস্তা ভালো ...... সম্পূর্ণ হাই ওয়ে ...। কি করবো তাই ভাবতে লাগলাম। একরকম সিদ্ধান্ত প্রায় নিয়েই ফেল্লাম যে রাতে জয়পুরেই থাকবো। কিন্তু এদিকে আবার ফতেহপুর থেকে যখন রওনা হই তখন আজমিরের হোটেলে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছি, যত রাতই হোক আমরা আসব। সুতরাং না গেলে তারাও কি ভাববে? এমন দোনো মনো করতে করতে বউকে বল্লাম, চলো এগিয়েই যাই।

আল্লাহর উপর ভরসা করে এগিয়ে যেতে বল্লাম রামজিকে। সেও বল্লো তোমাদের যা ইচ্ছা, আমার গাড়ি চালাতে কোন সমস্যা নেই। আমরা যখন জয়পুর অতিক্রম করি তখন বাজে রাত ৯টা। রাতের জয়পুরের কিছু দৃশ্যও নজরে পড়লো। রামজি একটি পেট্রোল পাম্প থেকে টাঙ্কি লোড করে নিলো। রামজি তার পরিচিত অলি গলি ধরে শর্ট কাট রাস্তা ব্যবহার করলো। আমি অবশ্য বার কয়েক তাকে জিজ্ঞেসও করলাম যে উনি ঠিক রাস্তায় যাচ্ছেন তো? উনি ওনার মতো করে এগিয়ে চল্লো। বিভিন্ন অলি গলি পেরিয়ে এক সময় আমরা হাই ওয়ে ধরলাম।
(রাতের জয়পুর পার করছি...)





কালো অন্ধকার রাত। অনেক বড় বড় লরি, বাস, গাড়ি কাটিয়ে রামজি একই গতিতে গাড়ি এগিয়ে নিয়ে চল্লো। রাত তখন প্রায় ১০টা বাজে। এখনো প্রায় ১৫০ কিমি দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। ভাবছি কি হয় কি হয়। এতো সময় ধরে চলছে গাড়িটি। রাস্তায় আবার কোন ট্রাবল ক্রিয়েট হয় কিনা। রাস্তার দুধারে শুধু অন্ধকার, জন বসতি বিহীন এলাকা। মাঝে মধ্যে একটি দুটি হোটেল বা বিল্ডিং নজরে পড়ছে। তবে রাস্তা সেই রকম! বিশাল চওড়া এক্সপ্রেস ওয়ে। চলতে চলতে রামজি বল্লো একটু চা খেতে পারলে ভালো হতো! আমিও তাকে বল্লাম ভালো পরিচ্ছন্ন নিরাপদ কোন জায়গায় দাড়িয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে নিতে। রাস্তার পাশে সব হোটেল গুলোই রাস্তা থেকে একটু দূরে দূরে। একদম রাস্তা ঘেষে কোন হোটেল বা চায়ের দোকান নজরে পড়লো না। এমনই একটি দোকানের কাছে গিয়েও রামজি দ্রুত গাড়ি ঘুরিয়ে রাস্তায় নিয়ে এলো। আমি বল্লাম কি ব্যাপার? চা খাবেন না? সে বল্লো ওখানে সব ট্রাক ড্রাইভার দেখলাম, বেত্তমিজি হতে পারে, তাই চলে এলাম।

সে আবার এগিয়ে চল্লো। বেশ কিছু দুর আসার পর দেখি একটি ছোট হোটেল, একজন মহিলা সহ কিছু মানুষ তাদের প্রাইভেট গাড়ি থামিয়ে চা নাস্তা করছে। আমরাও সেখানে থামলাম। চা পানি খেলাম। মাসালা চা ...... বেশ মজা লাগলো। বেশ ঠান্ডা অনুভুত হলো। কিন্তু জয়পুরে পেট্রল পাম্পে যখন থেমেছিলাম, তখন মনে হচ্ছিলো এখন গরম কাল! বেশ গরম লাগছিলো। এখান থেকে আরো ৬৫ কিমি দূর আজমীর শরীফ। আমরা চা খেয়ে আবারো রওনা দিলাম। শহরে ঢুকতে টিকেট কেটে ফ্লাই ওভার বা এক্সপ্রেস রোড ব্যবহার করতে হলো।

যখন শহরে ঢুকলাম, তখন রাত ১১.৩০টা। শুন শান নিরব চারিদিকে। কোন বাসা বাড়িতেও লাইট জলছে না। শুধু আমাদের গাড়িটাই রাস্তা জুড়ে এগিয়ে চলছে। রেল ষ্টেশনের কাছে আসলাম। রাত বাজে তখন ঠিক ১২টা। হোটেল থেকে তখনই ফোন দিলো। জানতে চাইলো আমরা কত দূরে আছি, আর কত সময় লাগবে। আমিও জানালাম আমরা রেল ষ্টেশনের সামনে। হোটেল খুজে পাচ্ছি না।

পরে রামজির সাথে কথা বলায়ে লোকেশন বুঝিয়ে দিতে বল্লাম। ডিরেকশন অনুযায়ী রামজি রেল ষ্টেশন বামে রেখে এড়িয়ে চল্লো। ঠিক তখনই দুজন লোক মটর সাইকেলে এসে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করলো হোটেল লাগবে কিনা। আমি আমাদের বুক দেয়া হোটেলের নাম বলতেই রাস্তা বাতলে দিলো। রামজি সোজাই যাচ্ছিলো। কিন্তু আমার চোখে পড়লো ডানে দূরে আমার বুক করা হোটেলের নাম নিয়ন আলোয় জলছে। আমি দ্রুত রামজিকে গাড়ি ডানে মোড় নিতে বল্লাম। রামজি গাড়ি টার্ন করে কিছুদূর এগোতেই আমাদের কাঙ্খিত হো্টেলের সামনে এসে পৌছালাম। এখানে গাড়ি ও রামজির থাকারও ব্যবস্থা আছে। রামজি ভেবেছিলো এখানে সে থাকতে পারবে না। বিষয়টি রিসেপশনিস্টকে জানাতেই সে রসিকতা করে বল্লো, কেনো? তুমি কি পাকিস্তানে এসেছো নাকি?

আমি ভবেছিলাম এটি হয়তো মুসলিম হোটেল। ধারণা ভুল। যাই হোক লাগেজ পত্র সব রুমে তুলে পাসপোর্ট এন্ট্রি করতে বেশ সময় লাগলো। ইন্টারনেটে নাকি কি সব ফরম পূরণ করতে হয় এদের। রুমে ঢুকে বেশ ভালো লাগলো। সুন্দর ছিম ছাম গোছানো রুম। ভেবেছিলাম রাতেই একবার দরগাহ শরীফে যাব। কিন্তু সাহস করতে পারলাম না। একেই অপরিচিত জায়গা, তার উপর রাত প্রায় ১.৩০ বেজে গেছে ফ্রেশ হতে হতে। শুয়ে পড়লাম।

সকালে ফজরের ওয়াক্তে প্রায় ৬টার দিকে ঘুম থেকে উঠে পড়লাম। নামাজ সেরে বেরিয়ে পড়লাম দরগাহ শরীফের উদ্দেশ্যে। দরবার-এ-খাজা হযরত মঈন উদ্দিন চিশতী আজমেরী (রহঃ) এঁর মাজার শরীফ। হোটেলের রিসেপশনিষ্ট এর থেকে গত কালই জেনে নিয়েছিলাম কোন পথে এগোলে মাজার শরীফ মিলবে। সেই পথ ধরেই চলা শুরু করলাম। ফজর পরবর্তি সময়, কিন্তু মনে হচ্ছে গভীর রাত। চারিদিকে ঘুট ঘুটে অন্ধকার। ভয়ও করছে একা একা যেতে। কিন্তু যেতেও মন চাইছে। কিছুদুর এগোতেই কিছু চায়ের দোকান আর কিছু লোক জনের জটলা চোখে পড়লো। সেখান থেকে সরু সরু অনেক গলি বিভিন্ন দিকে চলে গেছে। গলি গুলো আবার উচু হতে শুরু করেছে। অর্থাৎ পাহাড়ে ওঠার মতো উচু নিচু। মনে হয় আগে পাহাড় ছিলো, এখন জনবসতি আর রাস্তা তৈরী হয়েছে। আমি একটি গলি ধরে এগিয়ে গেলাম। সেই সাথে চারিদিকে ভালো ভাবে নজর রাখলাম যেনো আবার রাস্তা চিনে ফিরতে পারি। কারণ এখানে এতো বেশী অলি গলি যে একটু অসতর্ক হলে আমি আর হোটেলে সহজে ফিরতে পারব না।

একটি গলির ভেতরে ঢোকার পর দেখি কিছু মহিলা রাস্তার পাশে পানির কল থেকে পানি ভরছে। আমি এক ব্যাক্তিকে জিজ্ঞেস করলাম দরগাতে কোনদিক দিয়ে যাব? সে সোজা রাস্তা দেখিয়ে দিলো। আমি সেই রাস্তা দিয়ে এগোতেই দেখি রাস্তাটা কারোর বাড়ির প্রাচীর ঘেষে আবার তিন চার হাত নিচের দিকে নেমে গেছে। নিচের নামার জন্য আবার সিড়িও করা আছে। এতো অন্ধকার যে চোখে কিছু দেখা যাচ্ছে না। দূরে একটি বাসার বাইরে ১০০ পাওয়ারের একটি বাল্ব জ্বলছে। সেই আলোতে অন্ধকার তেমন একটা দূর হচ্ছে না। প্রায় ৭টা বাজে, তার পরেও এতো অন্ধকার কেন বুঝলাম না। ঐ সিঁড়ি ধরে নেমে যেতেই রাস্তাটা আবার বাক নিয়েছে ডানে বায়ে। আমি এখন কোন দিকে যাব? দেখি রাস্তার উপরে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। গরু ছাগল মহিষ এর মল মূত্রের গন্ধে পুরো এলাকাটাকে গোয়াল ঘর মনে হচ্ছে ......। আমি আর এগোতে সাহস করলাম না। ফিরতি পথ ধরলাম। ঐ সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই ঐ লোকের সাথে আবার দেখা। সে বল্লো কি যাবা না দরগায়? আমি বল্লাম অন্ধকার তো। সে বল্লো আসো আমার সাথে .....। আমি যাব কিনা ইতস্ততঃ করছি, ঠিক এমন সময় একপাল মহিষ নিয়ে এলো কিছু লোক। মহিষ গুলোও অন্ধকারে ঐ সিড়ি দিয়ে নামতে সাহস করছে না। ঐ লোকগুলো মহিষগুলোকে জোর করে পিটিয়ে পাটিয়ে ঐ গলিতে ঢুকতে বাধ্য করছে। এমনই একটি বাচ্চা মহিষ ঐ অন্ধকার গলিতে ঢোকার ভয়ে পালাতে গিয়ে আমাকে মারলো ঢুস! মহিষের ঢুস খেয়ে আমি আর ওখানে দাড়ালাম না। ফিরতি পথ ধরলাম।

হোটেলের কাছে এসে মন বল্লো এতো ভয় পাইলে কি চলে? আবার যা। কি মনে করে আবারো দরগার দিকে হাটা ধরলাম। এবার অন্য রাস্তা ধরে লোক জনকে জিজ্ঞেস করতে করতে এগোলাম। এই গলি সেই গলি উচু নিচু সরু রাস্তা ধরে এগোলাম। নর্দমা, ড্রেন, আর ময়লার ভিতর দিয়ে হাটতে থাকলাম। দেখি পুরো রাস্তাটার দুধার দিয়ে হোটেল আর খাবারের দোকান। ধীরে ধীরে তারা দোকান খুলছে। এখন একটু পরিস্কার হয়েছে চারিপাশ। বেশ কিছু দূর যাবার পরে আমি যেটা উপলব্ধি করলাম সেটা হলো এর বেশী আগালে আমি আর রাস্তা চিনে ফিরতে পারবো না। ইতিমধ্যে দশ ঘুল্লি দিয়েছি। সুতরাং এবারো দরগায় না গিয়ে হোটেলে ফেরার পথ ধরলাম।

ফোন দিলাম হোটেলে শুয়ে থাকা পরিবারকে। বল্লাম তোমরা তৈরী হও। আমি এসে তোমাদেরকে নিয়ে একসাথে দরগায় যাবো। তাহলে আর পথ হারালেও ভয় থাকবে না। আমার কথা মতো ওরা তৈরী হয়ে নিলো। আমি হোটেলে পৌছে ওদেরকে নিয়ে আবার দরগার দিকে রওনা হলাম। এবার হোটেল থেকে বের হতেই একটি অটো পেয়ে গেলাম। তাই ওদেরকে নিয়ে আর হাটা লাগলো না। অটো ওয়ালা এই গলি সেই গলি দিয়ে উচুতে উঠতে উঠতে দরগার একদম কাছে এনে নামিয়ে দিলো।

(হোটেলের জানালা দিয়ে আজমিরের পাহড়ি দৃশ্য....)



ভেতরে ঢোকার সময় স্যান্ডেল খুলে জমা রাখলাম পশের এক জুতা সংগ্রহকারীর দোকানে। কিছু রুপির বিনিময়ে ওরা স্যান্ডেল রাখে। সিকিউরিটি আমার ব্যাগে ক্যামেরা দেখে বল্লো ক্যামেরা নিয়ে ভেতরে যাওয়া যাবে না। আমি বল্লাম মোবাইল নিয়ে যাওয়া যাবে? সে বল্লো যাবে। আমি বল্লাম মোবাইলেও তো ক্যামেরা আছে। তাতে সমস্যা নাই? সিকিউরিটি আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বল্লো মোবাইল নিয়ে ফোকা যাবে, ক্যামেরা নেয়া যাবে না। আমি আবারো তাকে বল্লাম মোবইলেও তো ক্যামেরা আছে, তো মোবাইল নিতে পারলে ক্যামেরার কি দোষ? সে কিছুতেই তা শুনতে মানতে নারাজ। অগত্যা পাশের এক দোকান থেকে এক প্যাকেট মুড়কি কিনলাম এবং তার বিনিময়ে তার দোকানে ক্যামেরাটি রেখে তারপর মাজার প্রাঙ্গণে ঢুকলাম।
(আজমীর শরীফের দরগা গেট...)





বেশ নিরিবিলি শান্ত পরিবেশ। ঢুকতে হাতের ডানে সম্রাট শাহজাহানের করা মসজিদ। আমরা বেশ সকাল সকাল এসে পড়েছি বিধায় মাজার প্রাঙ্গণ বেশ ফাকা। সাদা শ্বেত পাথর এতো ঠান্ডা হয়ে আছে যে পা জমে যাবার যোগাড়। একটু আগালেই ডানে বামে বড় বড় দুটি ডেগ। মেয়েকে কোলে নিয়ে এগিয়ে গেলাম। মাজারের কাছাকাছি আসতেই একজন খাদেম স্বেচ্ছায় আমাদেরকে গাইড করতে চাইলো। কিন্তু আমরা আমাদের আচার আচরণে বুঝিয়ে দিলাম ওনাকে আমাদের প্রয়োজন নেই। লাইনে দাড়িয়ে ঢোকার সময় উনি আবার আমাদেরকে পাশে ছোট বাক্স নিয়ে বসে থাকা একজন খাদেমের কাছে বসতে বল্লেন। আাম বসে মুড়কির প্যাকেটটা তাকে দিয়ে দিলাম। আমি ভেবেছিলাম এটি বোধ হয় ওনাকে দিতে হয়। উনি কি বুঝলেন জানি না, মুড়কির প্যাকেটটি আবার আমাকে ফিরিয়ে দিলেন, বল্লেন আমিই যেনো এটা খাই। যাই হোক ওটা আবার হাতে নিয়ে ঢুকলাম মাজার শরীফের ভেতরে। ওখানে দেখি বেশ ভিড় আর লোকে গাদাগাদি করে দাড়িয়ে আছে।

যে ঢুকেছে, সে আর সরছে না, বিধায় নতুন করে কেউ ঢুকতে পারছে না। আমি এক দরজা দিয়ে ঢুকে বহুত কষ্টে চাপাচাপি গাদা গাদি সয়ে পাশের দরজা দিয়ে মেয়েকে কোলে করে বেরিয়ে এলাম। বের হয়ে দরজার একপাশে দাড়িয়ে জিয়ারত সারলাম। চত্ত্বরে বেরিয়ে এসে দেখি চত্বরের এককোনে একজন হারমোনিয়াম নিয়ে সামা সংগিত করছেন। বাইরের চত্বরে ম্যাট্রেস বিছানো আছে। ওখানে না দাড়াতে পারলে পা জমে বরফ হয়ে যেতো। ওদেরকে ওখানে বসিয়ে শাহজাহানের করা মসজিদে গিয়ে দুরাকাত সালাত আদায় করে বের হয়ে আসলাম।

দরগাহর গেটের বাইরে সারি সারি অনেক হোটেল আছে। ওখানেই সকালের নাস্তা সেরে নিলাম। তারপর একটি রিক্সা নিয়ে আবার হোটেলে ফিরে এলাম। ব্যাগ বোচকা আগেই গুছিয়ে রেখেছিলাম। হোটেলে পৌছে দেখি রামজিও গাড়ি নিয়ে প্রস্তুত। হোটেলের ভাড়া মিটিয়ে রওনা দিলাম। এবার আমাদের গন্তব্য জয়পুর।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মি. চুপ্পুর পক্ষ নিয়েছে বিএনপি-জামাত; কারণ কী?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৬


বিএনপি গত ১৬ বছর আম্লিগের এগুচ্ছ কেশও ছিড়তে পারেনি অথচ যখন ছাত্ররা গণহত্যাকারীদের হটিয়েছে তখন কেন বিএনপি চু্প্পুর পক্ষ নিচ্ছে? অনেকেই বলছে সাংবিধানিক শুন্যতা সৃষ্টি হবে তার সংগে বিএনপিও... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এতো কাঁদাও কেনো=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬




আয়না হতে চেয়েছিলে আমার। মেনে নিয়ে কথা, তোমায় আয়না ভেবে বসি, দেখতে চাই তোমাতে আমি আর আমার সুখ দু:খ আনন্দ বেদনা। রোদ্দুরের আলোয় কিংবা রাতের আঁধারে আলোয় আলোকিত মনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগারেরা প্রেসিডেন্ট চুপ্পুমিয়াকে চান না, কিন্তু বিএনপি কেন চায়?

লিখেছেন সোনাগাজী, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৪



**** এখন থেকে ১৯ মিনিট পরে (বৃহ: রাত ১২'টায় ) আমার সেমিব্যান তুলে নেয়া হবে; সামুটিককে ধন্যবাদ। ****

***** আমাকে সেমিব্যান থেকে "জেনারেল" করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিকাহের পরিবর্তে আল্লাহর হাদিসও মানা যায় না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪




সূরা: ৪ নিসা, ৮৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৮৭। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নাই। তিনি তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্র করবেন, তাতে কোন সন্দেহ নাই। হাদিসে কে আল্লাহ থেকে বেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ্‌ সাহেবের ডায়রি ।। পৃথিবীকে ঠান্ডা করতে ছিটানো হবে ৫০ লাখ টন হীরার গুঁড়ো

লিখেছেন শাহ আজিজ, ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০২




জলবায়ূ পরিবর্তনের ফলে বেড়েছে তাপমাত্রা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। তাই উত্তপ্ত এই পৃথিবীকে শীতল করার জন্য বায়ুমণ্ডলে ছড়ানো হতে পারে ৫০ লাখ টন হীরার ধূলিকণা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×