somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উপেক্ষা, একগুঁয়েমি কিংবা বিষাদের কথকতা/ বালিকা, তোমার স্মরণ আমাকে এভাবেই ভেঙ্গেচুরে দেয়...

০১ লা অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৬:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেঘবালিকা,
উত্তুরে হাওয়ার আনমনা বিষণ্ণতা আচমকাই তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিল। চলতি পথের অভ্যস্ত নির্জনতায় থমকে দাঁড়িয়ে অবসন্ন কণ্ঠে সেই হাওয়াকেই তাই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলামঃ “তুমি কেমন আছ?” উত্তরে কানে এল দূরাগত নুপুরের কান্না, বিরহে নিমজ্জমান শঙ্খের আর্তনাদ, আর হারিয়ে খোঁজা অতীতের তীরভাঙ্গা ঢেউ। আমি কুঁকড়ে গেলাম বেদনায় আর আক্ষেপে। বালিকা, তুমি জানো না! তোমার স্মরণ প্রতিটি সন্ধ্যায় আমাকে এক কিংবা একাধিকবার এভাবেই, হাসিমুখে খুন করে।

এই সময়টায় তুমি কি করছ? ভাবতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে যাচ্ছি বারবার। গভীর বেদনার উপলব্ধি কানে কানে অনুযোগ জানায়, “আমি তার কতটুকু জানি?” তোমাকে ভালবাসতে চেয়েও কেন পারি নি, ভুলে গেছি। আমার চোখের খাপছাড়া বিষণ্ণতা নাকি দৃষ্টির নিরর্থক উদাসীনতা... কোনটা তোমায় ভুলিয়ে দিয়েছে চেনা পথ, আজ আর মনে নেই। মনে থাকলেই বা কি হতো?! যদিও প্রেম- ভালোবাসার ক্ষেত্রে হৃদয় কখনো পরাজয় মেনে নিতে চায় না, তবুও বেদনার্ত হাহাকারে সে ঠিকই গুমরে কাঁদে, “আমি আর কতটুকু পারি?”

মেয়ে, ত্রিকালজয়ী আত্মার বিষণ্ণতায় যে ম্যান্ডোলিন হাহাকার তোলে, বস্তুত তুমি তার করুণতম ভুল। কিন্তু, সেই ভুলের জন্য অতৃপ্ত ভালোবাসাই তাকে আজো বাজিয়ে বেড়ায় অহর্নিশি। আশংকার অস্থিরতা কিংবা অপ্রাপ্তির শূন্যতা ছুঁয়ে দেখার সুযোগ সে কোত্থেকে পাবে, বল? সুখের অসুখে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থেকেও তাই, আকাশ-পৃথিবী আর জোসনার তাবৎ প্রেম সে তোমার জন্য জমাতে চায়। তোমার জন্য জমিয়ে যায়।

বালিকা, তোমার পছন্দ ছিল ঘাসমিঠে রোদ্দুর। তাই, আমার কুয়াশাময় জীবনের সাথে নিজেকে জড়ানোর কথা তুমি ভাবতে পার নি। ভালোই হয়েছে। তুমি তো ভুল কর না। ওটা আমার চ্যাপ্টার। তোমার ভুলগুলো সহই আমি তাই ক্ষয়ে ক্ষয়ে যাই প্রতিনিয়ত। বিষণ্ণ দিগন্তরেখার হাতছানি আমাকে মনে করিয়ে দেয় তোমার দৃষ্টির সর্বৈব শীতলতা। ভাঁটফুলের ঝাঁঝালো গন্ধ বুক ভরে টেনে নিতে গিয়ে বিষাদগ্রস্থ চেতনা টের পেয়ে যায়, “আমার সকল সৃষ্টিছাড়া কল্পনার সাথে কি নিবিড়ভাবেই না তুমি মিশে আছ! অথচ, তুমি বুঝলেই না।” অবশ্য, তোমার আর কি দোষ? আমি নিজেই কি এভাবে পেরেছিলাম বুঝতে?!

শুন্যতার অজস্র বর্ষাধারায় ভিজতে ভিজতে তোমার জন্য অন্তহীন জেগে থাকি মেয়ে। হৃদয়াবেগ ছুঁয়ে ছুঁয়ে অবিশ্রাম বাজে বিরহের নূপুর। অলক্তরাঙ্গা তোমার করযুগলের আবডালের অবিন্যস্ত খোঁপায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে হারিয়ে যায় কামনার উত্তাপ। ভেঙ্গে যেতে যেতে, ঘুণপোকাদের অবিরাম হট্টগোলের নির্জনতায় তবু আমি তোমার প্রতীক্ষা করি। আশ্চর্য সব দুপুর আর হতচকিত সন্ধ্যাসকল যখন আকাঙ্খার প্রাচুর্যে মুখ থুবড়ে পড়তে থাকে, নির্লিপ্ত আমি তখন ভাবি, “জীবন আর মৃত্যুর মাঝে কোনটা বেশী আনন্দের?!”

So, now i’m alone and life keeps moving on,
But my destination’s still unknown.
Will there will be a time When I’ll fall in love again?!
If there was just one wish
I could be granted here tonight,
It would be to have you right back By my side!**

মেঘবালিকা, আমি ভালো আছি। আমি আগেও ভালোই ছিলাম। সেই “ভালো থাকা” আর এই “ভালো থাকার” মাঝে ব্যবধানটা কিন্তু খুব বেশী নয়। একটা জীবন কেবল! তোমার যা কিছু স্মৃতি, তা সব আমার কাছে কোন গতজনমের বেখেয়ালী স্বপ্ন মনে হয়। স্বপ্নই তো, তাই না?! প্রকৃত অর্থে এবং সর্ব অর্থেই আমি পরিত্যক্ত, পরাজিত এবং বিতাড়িত, কিন্তু অবাকরকম সুখী। আঁজলা ভরে বয়ে আনা অচল নৈঃশব্দ্য আমাকে পোড়াতে না পারুক, প্রজাপতি-দলের ভীষণ উচ্ছ্বাস কবিতার মতই ভালোবেসে ছুঁয়ে দিয়ে যায়। সান্ত্বনা কিংবা হতাশা, দুটোকেই হাস্যকর ভাঁড়ের ভাণ্ডে ঝুলিয়ে রেখে আমি তাই অবিরল বৃষ্টিতে পুড়ি আর রোদ্দুরে ভিজতে থাকি। তোমার চিবুকের ভীষণ কোমলতায় কতিপয় শীত-বসন্ত পথ হারালেও, শ্রাবণ আজও আমারই আছে। তুমি পার নি কেড়ে নিতে। বস্তুত, তুমি অনেক কিছুই পার নি। তুমি তা জানই না।

কিছুই ফেলনা নয় মেয়ে। আমার এবং আমাদের, সকলেরই প্রতি ফোঁটা অশ্রুর পেছনে একটি করে বুক ভাঙ্গা গল্প থাকে। আমাদের অনেক হাসিও সমান গদ্যময়। কেউ পেয়ে আর কেউ হারিয়ে, অবশেষে সেসব পড়তে শেখে। কথা দিচ্ছি, কখনোই আমার এই এক চিলতে হাসি ফুরিয়ে যাবে না। আমার কলজেপোড়া গন্ধ আমি আড়াল করব নির্লিপ্ততার সুরভীতে। আমাদের বিপরীতমুখী, বিচ্ছেদবর্তী যুগলজীবনের অন্তরালে প্রতিদিনই হয়ত চাপা গলায় আর্তনাদ করে যাবে মৃতপ্রায় কতশত স্বপ্নসমষ্টি, তাতে কি? অক্ষয় হোক তোমার ছায়াময় উপেক্ষা। আর, বেঁচে থাকুক আমার বিষাদের একগুঁয়েমি।

Now its time for me to find my happiness again
But the emptiness from missing u will never,ever end!

সকল আয়োজনই একদিন ফুরাবে বালিকা। দৃষ্টির উঠোনে তখন না হয় একসাথেই কুড়াব বিশুষ্ক অতীত। তার আগ পর্যন্ত ভালো থেকো। সুখী হও।

চন্দ্রপথিক


** Lyrics to "When The Last Teardrop Falls" song by BLAQU.

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১২ বিকাল ৩:১১
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×