আচমকা মুখোমুখি হয়ে আমরা দু’জনেই স্থবির হয়ে গেলাম।
আমরা মানে ‘আমি’ আর ‘সে’,
‘আমি’ হচ্ছি ‘আমি’ আর ‘সে’ হচ্ছে ‘সে’,
আমাদের আশেপাশে অনেক জায়গা থাকার পরও ,
মুখোমুখি পড়ে গিয়ে আমরা কেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম
আমি জানি না। সে জানে কিনা, তাও আমার জানা নেই।
অনেকক্ষণ চুপ থাকার পর অস্পষ্ট গলায় সে বললঃ
'আমি কেমন আছি, তা কি একবারও জানতে ইচ্ছে করে না?'
আমি তার প্রশ্ন শুনলাম।
এই একটা প্রশ্নের আড়ালে লুকিয়ে থাকা
আরও অনেক অব্যক্ত আকুতি আমাকে নাড়িয়ে দিতে চাইল।
আমি নড়লাম না। আমি জানি, 'নড়লে আমার চলবে না'।
আমি তাই মাটির দিকে তাকিয়ে শুন্য গলায় বললামঃ
'তোমার খবর নেবার একটা কারণও কি আমায় তুমি দেখাতে পারবে?'
সে কোন কারণ দেখাতে গেল না।
'সে কেমন আছে' তা নিয়েও আর কিচ্ছুটি বলল না।
সে সম্ভবত কোন দীর্ঘশ্বাস লুকোতে চেষ্টা করছিল।
এবং সে কিছু ভাবছিল কিনা, আমি তা বলতে পারব না।
আমি শুধু দেখেছি, সে আচানক একেবারেই চুপ হয়ে গেল।
আর আমি...!
আমার অনেক কাজের কথা মনে পড়ল।
উত্তর চন্দনের বিলের শেষ মাথার কদম গাছটায়,
বর্ষা শেষের কদম ফুটেছে ঝাঁকিয়ে। সেগুলো দেখতে যেতে হবে।
মনীশ-দের সেই যে অত্ত বড় বকুল গাছটা,
আজই নাকি সেটা কেটে ফেলবে।
কাঠুরে কসাইরা এসে গেছে এতক্ষনে,
ওর বাবা সেখানে মুরগীর খামার করবেন,
শেষমেশ গাছটার ছায়ায় একটু বসতে হবে।
'সুখছড়ির' জঙ্গলার 'আকাশমণি' গাছটা এতদিনে কদ্দুর হল,
দেখে আসা বড্ড দরকার।
‘হাড়িধোয়া’র কুলে এবার কাশফুল ফুটেছিল জব্বর,
কিন্তু বৃষ্টির অনেক ভালবাসায় সেগুলো সব আধাআধি ডুবে গেছে।
পুরো ডুবে যাওয়ার আগে আর একবার ‘ছুঁয়ে দিয়ে’
কিংবা ‘ছোঁয়া নিয়ে’ আসতে হবে।
বড়দীঘির উত্তর কোনের ছোট ঝোপটায়
যে একজোড়া ‘খঞ্জনা’ সংসার সাজিয়েছিল, তারা আছে কি নেই,
সংসারে নতুন বাবু-টাবু কিছু এলো কিনা? জেনে আসতে হবে।
আর ‘বেতফল’ ‘নাটাফল’ কোথায় পাওয়া যায়, খুঁজতে হবে।
বহুদিন বেতফল, নাটাফল খাওয়া হয় না।
আমার আরও কত কত কাজ!
সেইসব কাজ, যেগুলোর জন্য একদা সে আমাকে ছেড়ে গিয়েছে,
কাজের চাপে আমি বিপন্ন বোধ করলাম।
ওদিকে, আকাশ ছেয়ে আছে দুরন্ত মেঘে। বৃষ্টি এই এল বলে,
আর দেরী করলে সব কাজ থাকবে পড়ে।
আমি তাই নড়ে উঠলাম এবং
কোনদিকে না তাকিয়ে পথে নেমে গেলাম।
এবং, বরাবরের মতই,
পথ আমাকে পরম মমতায় টেনে নিল বুকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ রাত ৮:২২