ঘর পালানো স্বপ্নসমূহ ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকে একাকী দোয়েলের শুকনো পালকের বিগতপ্রায় উষ্ণতায় । এখানে ওঁত পেতে লুকিয়ে আছে কতিপয় সুবিশাল তরঙ্গ। চাইলেও পারবে না থামাতে। একটা ঠোঁটের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-আয়তন কতখানি, তা জানার জন্য কত জনমের কামনার বলিদান লাগতে পারে? কতগুলো চুমুর শুন্য রোদন শেষে শান্ত হবে চন্দনের দায় !!!
বিষাদগ্রস্থ ঘাসফড়িঙের ডানায় রোদের আলপনা নিয়ে কবিতা হতে পারে। কথা হতে পারে কামিনীর ঊরুর অন্ধকারে পথ হারিয়ে ফেলা ডাহুক কিংবা ঘুঘুর বয়ঃসন্ধিকালীন মনোজটিলতার অর্থহীন বিশ্লেষণ নিয়ে। ‘কোকিলের সুর কি কেবলই তার কামভাবের ভাষাহীন বিস্ফোরন’? এ নিয়ে বিস্তর ধোঁয়া আর ছাই উড়তে থাকলেও জীবনের ঝুপকাষ্ঠে আমূল গেঁথে থাকা গণিকার চিৎকার এবং শীৎকার তাতে থামে না। থামা প্রয়োজন, এমনটা কেউ ভাবেন বলেও শুনি নি।
মূলত অন্ধকারের রঙই সভ্যতার প্রকৃত পারিভাষিক সংজ্ঞা। বাকী সব মাতালের বমি।
ডাস্টবিনের গন্ধে জীবন বয়ে বেড়ানো প্রাচীন ভবঘুরের থেমে যেতে চাওয়া নিঃশ্বাসে শুধু পরাজয়ের কুয়াশাই থাকে না, কিছু পাশবিক তৃপ্তিও হল্লা করে বেড়ায় তার ক্লেদাক্ত কশার ভেতরে-বাইরে। হাসতে হাসতে, হাঁচতে হাঁচতে এবং কাশতে কাশতে সে যখন ঘোষণা করছিল সভ্য শহুরে জীবনের মূলতত্ত্ব , তখন আর একটি প্রবীণ কুকুরের খসখসে জীহবার কর্কশ চুমু ছাড়া তার শীর্ণ কপোলে অন্য কারো স্পর্শ জোটে নি। বস্তুত, প্রতিনিয়ত ভদ্রতার কুটিল ধর্ষণের চেয়ে নিপুণা বেশ্যার উপচানো বুক নিঃসন্দেহে কমনীয়, আগ্রাসী আর পবিত্র। যে জীবন ছুটতে পারত পার্সিয়ান অশ্বের চঞ্চলতা আর সৌন্দর্য নিয়ে, সে জীবন গৃহী গাধার মত কাটিয়ে দিলে শেষ বেলায় জীহবা আপনাতেই তড়পায়ঃ “বেতমিজ বান্দীর পুত!”
সইতেই হবে।
আকাশমণি গাছের পাতাগুলো ঝরে যায়, কৃষ্ণচূড়া হারায় রং, বৃষ্টিতে ধোয়া ঝলমলে সবুজ ঘাস এক বিকেলেই পরিণত হয় গোবরে, দোয়েলের লাশ দেখি এখানে সেখানে...! সবই শেষ হয়, ফুরায় হাসিমুখে বেঁচে থাকার সব আনন্দ। কেবল, আজন্ম লালসা নিয়ে, ভণ্ডামির আলখেল্লা গায়ে দিয়ে, মূর্তিমান অসুরের মত ঝুলে থাকে “সভ্যতার গলিত শবদেহ”।
সিফিলিসে আক্রান্ত কুকুর, সারা গায়ে পচন ধরা কুষ্ঠরোগী কিংবা আজন্ম নগ্ন উম্মাদ ... সব সয়ে নেব ঈশ্বর। শুধু ‘ভদ্র’ বানিও না। ও আমার সবে না।