'সামু' কে চিনি, সে কতকাল আগের কথা। 'সামু' চত্বরে নিরন্তর ফুটতে থাকা কাব্য-কবিতার ফুলগুলো-র গন্ধ শুঁকে মজে থাকি বিহ্বল আনন্দে, সেও বহুদিনের অভ্যস্ত গল্প। শুধু 'নাম-ধাম' জমা দিয়ে নিজে সামু-র একজন হয়ে যাওয়াটাই কেন যেন পিছিয়ে যাচ্ছিল বারবার। অবশেষে, 'নাম-ধাম' দিলাম লিখে। এখন কবে নাগাদ 'সামু' আমাকে মেনে নেবে,তার অপেক্ষা !!!
পড়তে ভালো লাগে, তার সূত্র ধরেই সামু-তে আসা। লেখার জন্য না। লিখতে পারব কি পারব না, সেটা বুঝে উঠার আগেই হুলস্থূল প্রেমে পড়ে গেলাম ক'জনের, যাদের লেখা নিয়ে আমার মুগ্ধতা আজও সেই প্রথম দিনটির মতই আছে। সামু-তে না এলে এদের আমি কখনোই চিনতাম না। মূলত এদের সবগুলো লেখাকে নিজের ভালোলাগায় জড়িয়ে একটি ভার্চুয়াল শেলফে সাজিয়ে রাখার আন্তরিক আগ্রহ থেকেই শেষ পর্যন্ত আমার সামু-র সাথে গাঁটছড়া বাঁধা। দেখা যাক, কদ্দুর পারি।
প্রথমেই বলি ''নির্ঝর নৈঃশব্দ্য" আর 'সহেলী'-র কথা। যে দু'জনের এই ব্লগে থাকা সবগুলো কবিতা / গদ্য / মুক্তগদ্য আমি বারবার পড়েছি। নির্ঝর-দার কবিতা পড়ে ভাবতাম,এই লোকের চিন্তার সুতোগুলো ভাবনার কোন গলিতে ঘোরে যে, তিনি লেখেন অথচ আমার বুঝতেই কেটে যায় সারাবেলা। আর সহেলী-পু'র লেখা পড়ে ভাবি, কতখানি আবেগ একজন কারো বুকে লুকিয়ে থাকলে তাঁর লেখার প্রতিটা শব্দই এভাবে ভালবাসা,শ্রদ্ধা,আক্ষেপ,মমতা আর শূন্যতার শিশিরে ঢাকা পড়ে যেতে পারে?! নির্ঝরের 'প্রিয়তম দুঃখ, তোমার চোখে জলের কাজল', কিংবা সহেলীর 'প্রত্যাবর্তনের জন্য অনেক বেশী সময় নিয়েছি, আর তাই কোন অপূর্ণতা নেই' টাইপের লেখাগুলো পড়ে চেপে রাখা শ্বাস ছোট্ট করে ফেলে কতবার ভেবেছি,"আমি যদি কখনো পারতাম এভাবে লিখতে।"
তারপর 'জীবনানন্দ'। যার কবিতার সাথে আমার আবাল্য প্রেম। তিনি আজকাল আর ব্লগিং করেন না, কিন্তু তাঁকে কিংবা তাঁর সৃষ্টিকে ঘিরে আবর্তিত হতে থাকা ব্লগার-রা বারবার পেয়েছে আমার সশ্রদ্ধ আন্তরিক ভালোবাসা। আহমেদ মোস্তফা কামাল, একরামুল হক শামীম, সুপান্থ সুরাহী, এমনই আরও যারা আছেন। অবস্থা তো এমন দাঁড়িয়েছে, জীবুদা-র কবিতা নিয়ে আহমেদ মোস্তফা কামালের রিভিউ-র জন্য আমি চাতকের মত হা করে থাকি। দেখি, ব্লগে এসে তাদের কাছ থেকে পারি কিনা কিছু শিখতে!
'সবাক'। সবাক যে কি পারেন না, সেটা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। যেখানেই হাত দেন, সবাকীয় প্রতিভা ঝরে পড়ে। নির্ঝর নৈঃশব্দ্য-কে নিয়ে তাঁর লেখাগুলো আমাকে ছুঁয়ে দিয়েছে। কবি আর কবিতা কে আসলে এভাবেই ভালোবাসতে হয়। সবাক ভাই ও তাদের একজন, যাদের কোন লেখা আমি ছেড়ে দেই নি।
'নাফিস ইফতিখার'। এমনই কপাল, অসম্ভব শার্প হিউমারের এই মানুষটা কে সামু হারিয়ে ফেলেছে। উনার পোস্টগুলো যে আর কোথায় পাব, তাই ভাবি। পড়েছি সব, কিন্তু আমার ভার্চুয়াল শেলফে যে রইল না!
ব্লগের কবিকুল (আক্ষরিক অর্থেই যারা কবি আর যাদের কবিতা আমার ভালো লেগেছে/লাগে), অমিত চক্রবর্তী, শিরী্ষ, সুলতানা শিরীন সাজি... মূলধারার কত চেনা নামের চেয়ে ভালো লিখেন আপনারা। আন্তরিক বিশ্বাস থেকেই বলছি কথাটা।
ভবঘুরের মত সামু-তে ঘুরি-ফিরি সেই ২০০৯ থেকে। অনেক অনেক অসাধারন লেখাই পড়েছি। ভালো লেখা হয়তো এখন আর আগের মত সহজলভ্য নয়,কিন্তু তাই বলে একেবারে হারিয়েও যায় নি। বেশুমার অখাদ্যের ভিড়ে একটু ধৈর্য ধরে খুঁজলে আজও মেলে।
গতরাতে 'রিয়েল ডেমন' লিখেছে, এই ব্লগই আগামীতে বাংলা সাহিত্য চর্চার মূল কেন্দ্র হয়ে উঠবে। সেই একই বিশ্বাসে বুক বেঁধেছি আমরাও। কেবল প্রয়োজন সুস্থ আর সুষ্ঠু পরিচর্যা। সেই সুন্দর আগামী আর তার ঝলমলে আঙ্গিনার প্রত্যাশা বুকে নিয়েই সাথে থাকার ঐকান্তিক আগ্রহে সামনে পা রাখা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৩৬