somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই মামলায় মৃত্যুদণ্ড বা ফাসির সমর্থনযোগ্য নয় স্টিফেন র‌্যাপ

২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এ্যাম্বাসেডর এট লার্জ (যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক দূত) স্টিফেন জে র‌্যাপ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কমাতে এবং আন্তর্জাতিক আইনের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ না হওয়া পর্যন্ত অবিলম্বে দণ্ড কার্যকর স্থগিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বিচার প্রক্রিয়ায় ত্রুটির কথা তুলে ধরে গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সরকারের প্রতি তিনি এ আহ্বান জানান। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান করছি তাদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কমানো হোক।

স্টিফেন জে র‌্যাপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক দূত হিসেবে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে সংঘটিত অপরাধের বিচার প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে তিনি পাঁচবার বাংলাদেশ সফর করেন এবং বিচার প্রক্রিয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছিলেন। ২০১১ সালের জানুয়ারি, মে, নবেম্বর, ২০১৩ সালের মে এবং ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সফর করে মূল অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।

স্টিফেন র‌্যাপ বলেন, আমার সম্পৃক্ততার সময় আমার আগ্রহের বিষয় ছিল বিচারের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ও বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের জন্যে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যাতে করে বিতর্কাতীত সত্য নিরূপণ এবং অপরাধীদের বিচার করা যায়। আমি তখন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ আইনগত মান নিশ্চিতের আহ্বান করেছিলাম।

এটা হতাশাজনক যে, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলায় সেটা (সর্বোচ্চ আইনগত মান) হয়নি বলে আমি বিশ্বাস করি। এই মামলায় মৃত্যুদণ্ড আরোপ সমর্থনযোগ্য নয়, আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে যা অনুসরণ করতে বাংলাদেশ বাধ্য। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমি বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান করছি তাদের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি কমানো হোক।

সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখেছি, মুজাহিদের মামলায় একই রকম দেখা গেছে প্রসিকিউশনের মতো ডিফেন্সপক্ষকে একই সুযোগ দেয়া হয়নি। এটা সুস্পষ্টভাবে বিরক্তিকর যে, সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্ষেত্রে তার সাফাই সাক্ষীদের আবেদনে অধিকার নাকচ করা হয়েছে। এরমধ্যে ক্লিনটন প্রশাসনের সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, যিনি সাক্ষ্য দিতে চেয়েছেন অপরাধ সংঘটনের সময় তিনি (সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী) বাংলাদেশে ছিলেন না।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল কোভেন্যান্ট অন সিভিল এন্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর) পক্ষ। ওই আইন অনুযায়ী প্রত্যেক আসামীর অধিকার রয়েছে তার পক্ষে সাক্ষী উপস্থাপন করা বা নিরীক্ষা করার এবং বিরুদ্ধে হলেও।

সাক্ষী উপস্থাপন করার অধিকার বিশেষত সাফাই সাক্ষী আন্তর্জাতিক অন্যান্য আইনে স্বীকৃত। এ ধরনের একটি মামলায় আমি ব্যক্তিগতভাবে সম্পৃক্ত ছিলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, রুয়ান্ডায়। সুষ্ঠু বিচারের ধারণার মধ্যে সমসুযোগ বিদ্যমান এবং অপরাধ আইনে আসামীর মৌলিক অধিকার তার নিজস্ব গতিতে বলবৎ থাকবে।

মি. চৌধুরীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তার নেতৃত্বে ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল এবং ১৭ এপ্রিল অপরাধ সংঘটিত হয়। এজন্য তাকে ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দেয়। বাংলাদেশের বাইরের এমন ছয়জন সাফাই সাক্ষী হলফনামা আকারে সাক্ষ্য দিতে আবেদন করে বলতে চেয়েছিলেন ১৯৭১ সালের এপ্রিলে মি. চৌধুরী পাকিস্তানে ছিলেন। কিন্তু তাদের সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মুহাম্মদ ওসমান সিদ্দিক, সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত, যিনি মি. চৌধুরীর সহপাঠী সাক্ষী দিতে চেয়েছিলেন যে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মি. চৌধুরী তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। সিদ্দিক এবং অপর সাক্ষীরা বলতে চেয়েছিলেন মি. চৌধুরী ওই সময় এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত পাকিস্তানের করাচিতে ছিলেন। পরে তিনি পাকিস্তানের লাহোরে যান পাঞ্জাব বিশ্বব্যিালয়ে পড়তে। তারা সাক্ষ্য দিতে চেয়েছিলেন যে ১৯৭১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশে যাননি।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের ৪১ সাক্ষীর বিপরীতে মি. চৌধুরীর সাক্ষী মাত্র ৪ জন নির্ধারণ করেন। (প্রসিকিউশন বনাম চৌধুরী, আইসিটি-বিডি-২ ২০১১, অর্ডার ১৩ জুন ২০১৩)। প্রসিকিউশনকে যথাযথ নোটিশ না দিয়ে সাক্ষ্য দিতে চাওয়ায় ট্রাইব্যুনাল এই সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদানের হলফনামা বিবেচনার বিষয় নাকচ করেন। আপিল বিভাগও তাদের হলফনামা এবং সরাসরি সাক্ষ্য প্রদানের বিষয়টি নাকচ করেন। প্রথমত এটা বলা হয় যে, সাক্ষীর হলফনামা মি. চৌধুরীর আগের আইনজীবী প্রতারণামূলকভাবে তৈরি করেছেন। পরবর্তীতে বলা হয় হলফনামা সঠিক এবং হলফনামার সত্যতা যথাযথ নয়। মি. চৌধুরী এ ব্যাপারে সত্যতা প্রমাণ করতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তা গ্রহণ করেনি।

২ নবেম্বর আবারো খারিজ করে মি চৌধুরীর সাফাই সাক্ষীর আবেদন। ১৮ নবেম্বর সুপ্রিম কোর্ট সম্পূর্ণভাবে তার রিভিউ আবেদন খারিজ করেন এবং তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদও গ্রহণ করেননি। মি চৌধুরীর ডিফেন্স আইনজীবীর সাফাই সাক্ষ্য যদি গ্রহণ করা হতো তাহলে প্রসিকিউশনের তাদেরকে যাচাই এবং তাদের গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণের সুযোগ ছিল। কিন্তু সে প্রক্রিয়ার অনুমোদনও পাওয়া যায়নি।

মি. চৌধুরীর মামলাই একমাত্র মামলা নয় যাতে বিচার প্রক্রিয়ার ত্রুটি রয়েছে। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মামলায় একই ধরনের ঘাটতি রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমি বাংলাদেশ সরকারকে তাদের দুইজনের মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি লঘু করা এবং আন্তর্জাতিক আইনের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণ না হওয়া পর্যন্ত অবিলম্বে দকার্যকর স্থগিতের আহ্বান জানাচ্ছি।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৫৫
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×