গণতন্ত্র ও বিশ্বায়ণ - দুটিই খুব সুন্দর ও আকর্ষনীয় শব্দ। আর এ দুটো ব্যবহার করেই আধুনিক বিশ্বে বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বিশ্বের চরম দারিদ্রের জন্য এতদিন 'গণতন্ত্র' শব্দটিকে ব্যবহার করা হচ্ছিল, ইদানীং তার সঙ্গে যোগ দেয়া হয়েছে 'বিশ্বায়ণ'। বিশ্বায়ণ তন্ত্রে বলা হচ্ছে পণ্য ও বিনিয়োগের চলাচল মুক্ত ও অবাধ হতে হবে, কারণ এর প্রবক্তাদের যে এ দুই ই আছে। যদি সত্যিকারে বিশ্বায়ণের কথা বলি, সে তন্ত্রে সবকিছুরই মুক্ত ও অবাধ চলাচলের সুযোগ থাকতে হবে, মানুষের চলাচল সহ। কিন্তু প্রবক্তারা কি এটি গ্রহণ করার জন্য তৈরী? আংশিক মুক্তির ধারণার পিছনে রয়েছে শক্তিশালী প্রবক্তাদের হিপোক্রেসী।
শিল্পোন্নত বিশ্বের তৈরী শিল্প পণ্য যেন বিনা শুল্কে তৃতীয় বিশ্বে ঢুকতে পারে সে জন্য চাপ দেয়া হয়, কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের পণ্য যেন সহজে শিল্পোন্নত দেশে ঢুকতে না পারে সে জন্য 'মান নিয়ন্ত্রণের' হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। যদি মুক্ত বাণিজ্যের দর্শনের কথা বলা হয়, তবে এ নিয়ন্ত্রণ কেন? ক্রেতার সমঝদারীই ঠিক করে দেবে কোনটি টিকবে আর কোনটি টিকবে না।
আবার একই সময়ে তৃতীয় বিশ্বের খাদ্যশস্যের উপর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ৩০০% থেকে ৫০০% শতাংশ আমদানী শুল্ক আরোপ করে। এর বাইরেও তাদের কৃষকদের আভ্যন্তরীন ও রপ্তানী ভর্তুকী দেয়া হয়। যুক্তি - নাহলে এরা প্রতিযোগিতায় হেরে যাবে। ওয়ার্লড ট্রেড এর নীতিমালার মধ্যে এজন্য কিছু সুযোগ রাখা আছে, কিন্তু তা কেবল শক্তিশালীরাই ব্যবহার করতে পারে। দুর্বলের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হয় সে সুযোগ ব্যবহার না করতে পারার জন্য। তার উপর বাংলাদেশের মত দেশের নীতিনির্ধারকদের হীনমন্যতা ও অযোগ্যতা বাড়তি সুযোগ করে দেয়। পাশ্চাত্যকে খুশী করার জন্য আমরা আগ বাড়িয়ে আমাদের সব খুলে-তুলে দিই। তাই নব্বই এর দশকে বিশ্বায়ণের প্রবর্তনের সাথে সাথেই আমরা রাজী হয়ে যাই, যেখানে ভারত ও চীন আসে অনেক পরে, অনেক সাবধানতার সঙ্গে। এ বিষয়ে চীনের এক প্রেসিডেন্টের কথা মনে পড়ে। তিনি বলেছিলেন যে আমরা বিশ্বায়ণ প্রক্রিয়ায় একজন সক্রিয় খেলোয়াড় হতে চাই, তাই এর প্রস্তুতির জন্য আমাদের কিছু সময় দরকার। প্রস্তুতি সে নিয়েছে, আর প্রস্তুতি নিয়ে যখন যোগ দিয়েছে, পাশ্চাত্যের প্রবক্তাদের সে এক হাত দেখিয়ে দিয়েই ছাড়ছে।
তাই আমার দেশের নেতৃত্বের হীনমন্যতা ও অযোগ্যতা থেকে বেরিয়ে না আসা পর্যন্ত আমরা মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারব না।